কেন্দ্রের বঞ্চনা ছাপিয়ে উত্তরের উন্নয়নে ঢালাও বরাদ্দ মমতার

- আপডেট : ২০ মে ২০২৫, মঙ্গলবার
- / 159
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দ বন্ধ রেখে বাংলাকে বঞ্চিত রেখেছে কেন্দ্র। কিন্তু কেন্দ্রের সেই বঞ্চনাকে ছাপিয়েও উত্তরবঙ্গে উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব¨্যােপাধ্যায়। উত্তরবঙ্গ সফরের দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার ফুলবাড়ি-ডাবগ্রামে বিভিন্ন সরকারি পরিষেবা প্রদানের অনুষ্ঠানে উত্তরবঙ্গের জন্য একগুচ্ছ ঘোষিত প্রকল্পে ঢালাও বরাদ্দ করলেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত ৩৬৫ টি প্রকল্পে মোট ২৫০ কোটি ৫৪ লক্ষ ৩২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে।
এই প্রসঙ্গে মমতা জানালেন, কেন্দ্রের কাছ থেকে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাই। কিন্তু জিএসটি-এর নাম করে সব নিয়ে যায়, সেই টাকার বরাদ্দ অংশও ফেরত পাই না। টাকা না পেলে কোথা থেকে সব হবে? আমি তো কোনও ম্যাজিশিয়ান নই। তবে এ দিন যেভাবে একাধিক প্রকল্পের কথা ঘোষণা করলেন মমতা, তাতে এ কথা স্পষ্ট, মমতা নিজেকে ‘ম্যাজিশিয়ান’ না বললেও মমতা ‘ম্যাজিক’ অবশ্য রয়েছে। যার ফলে এই ঋণজর্জর রাজ্যে উন্নয়নের গতি থেমে যায়নি। আগামী দিনে বেশ কয়েকটি প্রকল্পের শিলান্যাসও এ দিন করলেন মমতা। এর মধ্যে রয়েছে ফালাকাটার এথেলবারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের অ্যাপ্রোচ রোড, কুমারগ্রাম ব্লকের রায়ডাক নদীর বাম তীরের সংরক্ষণ আলিপুরদুয়ারের বোড়াগাড়ি অঞ্চলে গদাধরী নদীর ডান তীরের সংরক্ষণ, আলিপুরদুয়ারে মনোজিৎ নাথা বাসস্ট্যান্ড নির্মাণ ইত্যাদি।
মঙ্গলবার বিরোধীদের কুৎসার জবাবে উত্তরবঙ্গে উন্নয়নের খতিয়ান এবং বিভিন্ন প্রকল্পের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইভাবে জোরের সঙ্গে তিনি দাবি করেন, এর আগে উত্তরবঙ্গে কোনও উন্নয়ন হয়নি। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে একাধিক উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়েছে। তাই আজ সবদিক থেকে এগিয়ে চলেছে উত্তরবঙ্গ। এখন পর্যটনের সেরা জায়গা উত্তরবঙ্গ। নতুন করে জঙ্গল সাফারি তৈরি করা হয়েছে উত্তরবঙ্গে। এখানে কত ভাষার সংমিশ্রণ। সব সম্প্রদায়কে আমরা সম্মান জানাই।
মঙ্গলবারের অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে একাধিক প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেন মমতা। এর মধ্যে বীরপাড়ায় ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে হাসপাতাল, বানারহাটে ১ কোটি টাকা ব্যয়ে শীতলা মন্দিরের সংস্কার, ৫কোটি টাকা ব্যয়ে জল্পেশ মন্দিরের স্কাইওয়াক, উত্তরায়নের পাশে ৭৭ একর জমিতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, মাটিগাড়ায় পেভার্স ব্লকের রাস্তার জন্য ৪৪ লক্ষ টাকা, কমলা ও বিজয়নগর চা-বাগানে ক্রেশ তৈরির জন্য ১.৮৬ কোটি বরাদ্দ করলেন মমতা। এ ছাড়া ফাঁসিদেওয়ায় রাস্তা নির্মাণ, মাটিগাড়ায় কমিউনিটি হল, নকশালবাড়িতে সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র, চমকডাঙি ও লালটং বস্তি এলাকার সংস্কার করে তিস্তাপল্লি নির্মাণ, চা-সুন্দরী প্রকল্পে মাদারিহাট ব্লকে মুছনাই চা-বাগান শ্রমিকদের জন্য বাড়ি নির্মাণ, ফালাকাটায় কাদম্বিনী চা-বাগান এলাকায় পানীয় জল প্রকল্প, মাদারিহাট-বীরপাড়া ব্লকে মনসুন নদীর সেতু নির্মাণ ইত্যাদি। মমতা বলেন, শিল্পের পাশাপাশি উত্তরে পর্যটনকে নতুন করে সাজিয়ে তোলা হবে। বাংলার টাকা কেন্দ্র আটকে রাখলেও পালটা প্রোগ্রাম তৈরি করে দেখিয়ে দিয়েছি। মানুষকে বঞ্চিত করা ঠিক নয়।
এ দিন ডাবল ইঞ্জিন সরকারের রাজ্যগুলির উদাহরণ টেনে মমতা বলেন, অনেকে নির্বাচনের আগে অনেক কিছু দেওয়ার কথা বলে। নির্বাচনের আগে মধ্যপ্রদেশ-মহারাষ্ট্র-রাজস্থান অনেক কিছু দেব বলেছিল, কিন্তু পরে আর দেয়নি। আমি খাদ্যসাথী, দুয়ারে রেশন, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, স্টুডেন্টসদের জন্য ১০ লক্ষ টাকার ক্রেডিট কার্ড — চারটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। চারটেই পূরণ করেছি। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রসঙ্গে এ দিন মমতা বলেন, সারা জীবন পর্যন্ত চলবে এটা। আমি কথা দিলে, কথা রাখি। অন্তত চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখি না। এটাই আমার বিশ্বাসযোগ্যতা ।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন অভিযোগ করেন, শিল্পপতিদের কাছ থেকে মিউটেশন ফি নেওয়া হচ্ছে, রাস্তায় গাড়ি চললেও ট্যাক্স নেওয়া হয়। এভাবে শিল্পপতিদের হয়রানি রাজ্য বরদাস্ত করবে না। একটাই কর নিতে হবে। মমতার স্পষ্ট চ্যালেঞ্জ জিএসটি-এর পরে নতুন করে কর নিতে দেওয়া হবে না কেন্দ্রকে।
একদিকে কেন্দ্রের প্রতি আক্রমণ অন্যদিকে উন্নয়ন — ছাব্বিশের নির্বাচনের আগে এই দুই নীতি নিয়েই উত্তরবঙ্গের ভোট বাক্স গোছালেন মমতা। আজ বুধবার প্রশাসনিক বৈঠক রয়েছে মমতার। তারপর কলকাতায় ফিরবেন তিনি।