৩০ জুলাই ২০২৫, বুধবার, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাশিয়ার কামচাটকায় ৮.৮ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প ও সুনামি

আফিয়া‌‌ নৌশিন
  • আপডেট : ৩০ জুলাই ২০২৫, বুধবার
  • / 47

 পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: রাশিয়ার সুদূর পূর্ব কামচাটকা উপদ্বীপে বুধবার (ভারতীয় সময়) ভয়াবহ ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৮.৮, যা গত কয়েক দশকে রাশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী ভূমিকম্প। এই ভূমিকম্পের জেরে প্রবল সুনামি আছড়ে পড়েছে রাশিয়া ও জাপানের উপকূলবর্তী অঞ্চলে। প্রায় চার মিটার উঁচু ঢেউয়ে বিধ্বস্ত হয়েছে কামচাটকার একাধিক এলাকা।

 

ভূমিকম্পের পরপরই হোক্কাইডো সহ জাপানের বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায়ও সুনামি আছড়ে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বহু ঘরবাড়ি। স্থানীয় প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, বিপজ্জনক অবস্থা এড়াতে উপকূলীয় অঞ্চল থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: বড় পদক্ষেপ, একযোগে ১১ হাজার ইউটিউব চ্যানেল বন্ধ গুগলের

 

আরও পড়ুন: ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল দিল্লি, রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ৪.১

মার্কিন আবহাওয়া সংস্থার মতে, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠের ১৯.৩ কিলোমিটার গভীরে। প্রাথমিকভাবে রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ৮ ধরা হলেও পরে তা সংশোধন করে ৮.৮ করা হয়। যদিও এখনও পর্যন্ত কোনও প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন: চিন স্পষ্ট করল অবস্থান: ইউক্রেনের যুদ্ধে রাশিয়ার পরাজয় মেনে নেবে না বেজিং

 

কামচাটকার গভর্নর ভ্লাদিমির সোলোদভ জানিয়েছেন, এই ভূমিকম্প কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। তিন থেকে চার মিটার উচ্চতার ঢেউ কামচাটকার বিভিন্ন উপকূলে আছড়ে পড়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমুদ্রতট ছেড়ে দূরে সরে যাওয়ার জন্য জনগণকে সতর্ক করা হয়েছে।

 

এছাড়াও, হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, কোসরে, পালাউ এবং ফিলিপিন্সের উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে সুনামির সতর্কতা জারি করেছে মার্কিন প্রশাসন। এগুলির মধ্যে কিছু অঞ্চলে ০.৩ থেকে এক মিটার উচ্চতার ঢেউ আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

জাপানের হোক্কাইডো উপকূলে ইতিমধ্যেই সুনামি শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রশাসন দ্রুত উপকূলীয় অঞ্চল খালি করে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা জানিয়েছেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন। পাশাপাশি জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় একটি বিশেষ কমিটি গঠন করেছে জাপান সরকার।

 

ভূমিকম্প সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি ভিডিয়ো ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যদিও সেই সব ভিডিওর সত্যতা স্বাধীনভাবে যাচাই করা হয়নি। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কীভাবে উপকূলবর্তী বাড়িগুলো কেঁপে উঠছে ভূমিকম্পের জেরে।

 

উল্লেখ্য, মাত্র কয়েক দিন আগেই কামচাটকা উপকূলবর্তী এলাকায় একাধিক ভূমিকম্প হয়েছিল। প্রথম ভূমিকম্পে রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ৬.৬, এরপর আরও শক্তিশালী একটি ভূমিকম্প হয় যার মাত্রা ছিল ৭.৪। এরপর টানা আরও তিনটি ভূমিকম্প হয়, যার জেরে আগেই সুনামির সতর্কতা জারি করেছিল প্রশাসন।

 

রাশিয়ার কামচাটকা অঞ্চলের পাশেই অবস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা। এই অঞ্চলটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় ও উত্তর আমেরিকান টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে হওয়ায় এখানে ভূমিকম্পের প্রবণতা অত্যন্ত বেশি।

 

১৯৫২ সালের নভেম্বর মাসে কামচাটকায় ৯.১ মাত্রার এক বিশাল ভূমিকম্প হয়েছিল, যার ফলে হাওয়াই উপকূলে প্রায় ৩০ ফুট উচ্চতার সুনামি ঢেউ দেখা গিয়েছিল। সে সময়ও বড়সড় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল, যদিও প্রাণহানির কোনও খবর পাওয়া যায়নি।

 

এত বড় ভূমিকম্প এবং সুনামির ঘটনা গোটা প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য বিপজ্জনক বার্তা। বিভিন্ন দেশের উপকূলবর্তী অঞ্চলে সতর্কতা জারি থাকলেও, এখন পর্যন্ত বড় ধরনের প্রাণহানির খবর না মেলায় স্বস্তি রয়েছে। তবে পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে আন্তর্জাতিক আবহাওয়া এবং বিপর্যয় মোকাবিলা সংস্থাগুলি।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

রাশিয়ার কামচাটকায় ৮.৮ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প ও সুনামি

আপডেট : ৩০ জুলাই ২০২৫, বুধবার

 পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: রাশিয়ার সুদূর পূর্ব কামচাটকা উপদ্বীপে বুধবার (ভারতীয় সময়) ভয়াবহ ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৮.৮, যা গত কয়েক দশকে রাশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী ভূমিকম্প। এই ভূমিকম্পের জেরে প্রবল সুনামি আছড়ে পড়েছে রাশিয়া ও জাপানের উপকূলবর্তী অঞ্চলে। প্রায় চার মিটার উঁচু ঢেউয়ে বিধ্বস্ত হয়েছে কামচাটকার একাধিক এলাকা।

 

ভূমিকম্পের পরপরই হোক্কাইডো সহ জাপানের বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায়ও সুনামি আছড়ে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বহু ঘরবাড়ি। স্থানীয় প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, বিপজ্জনক অবস্থা এড়াতে উপকূলীয় অঞ্চল থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: বড় পদক্ষেপ, একযোগে ১১ হাজার ইউটিউব চ্যানেল বন্ধ গুগলের

 

আরও পড়ুন: ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল দিল্লি, রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ৪.১

মার্কিন আবহাওয়া সংস্থার মতে, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠের ১৯.৩ কিলোমিটার গভীরে। প্রাথমিকভাবে রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ৮ ধরা হলেও পরে তা সংশোধন করে ৮.৮ করা হয়। যদিও এখনও পর্যন্ত কোনও প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন: চিন স্পষ্ট করল অবস্থান: ইউক্রেনের যুদ্ধে রাশিয়ার পরাজয় মেনে নেবে না বেজিং

 

কামচাটকার গভর্নর ভ্লাদিমির সোলোদভ জানিয়েছেন, এই ভূমিকম্প কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। তিন থেকে চার মিটার উচ্চতার ঢেউ কামচাটকার বিভিন্ন উপকূলে আছড়ে পড়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমুদ্রতট ছেড়ে দূরে সরে যাওয়ার জন্য জনগণকে সতর্ক করা হয়েছে।

 

এছাড়াও, হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, কোসরে, পালাউ এবং ফিলিপিন্সের উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে সুনামির সতর্কতা জারি করেছে মার্কিন প্রশাসন। এগুলির মধ্যে কিছু অঞ্চলে ০.৩ থেকে এক মিটার উচ্চতার ঢেউ আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

জাপানের হোক্কাইডো উপকূলে ইতিমধ্যেই সুনামি শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রশাসন দ্রুত উপকূলীয় অঞ্চল খালি করে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা জানিয়েছেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন। পাশাপাশি জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় একটি বিশেষ কমিটি গঠন করেছে জাপান সরকার।

 

ভূমিকম্প সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি ভিডিয়ো ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যদিও সেই সব ভিডিওর সত্যতা স্বাধীনভাবে যাচাই করা হয়নি। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কীভাবে উপকূলবর্তী বাড়িগুলো কেঁপে উঠছে ভূমিকম্পের জেরে।

 

উল্লেখ্য, মাত্র কয়েক দিন আগেই কামচাটকা উপকূলবর্তী এলাকায় একাধিক ভূমিকম্প হয়েছিল। প্রথম ভূমিকম্পে রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ৬.৬, এরপর আরও শক্তিশালী একটি ভূমিকম্প হয় যার মাত্রা ছিল ৭.৪। এরপর টানা আরও তিনটি ভূমিকম্প হয়, যার জেরে আগেই সুনামির সতর্কতা জারি করেছিল প্রশাসন।

 

রাশিয়ার কামচাটকা অঞ্চলের পাশেই অবস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা। এই অঞ্চলটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় ও উত্তর আমেরিকান টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে হওয়ায় এখানে ভূমিকম্পের প্রবণতা অত্যন্ত বেশি।

 

১৯৫২ সালের নভেম্বর মাসে কামচাটকায় ৯.১ মাত্রার এক বিশাল ভূমিকম্প হয়েছিল, যার ফলে হাওয়াই উপকূলে প্রায় ৩০ ফুট উচ্চতার সুনামি ঢেউ দেখা গিয়েছিল। সে সময়ও বড়সড় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল, যদিও প্রাণহানির কোনও খবর পাওয়া যায়নি।

 

এত বড় ভূমিকম্প এবং সুনামির ঘটনা গোটা প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য বিপজ্জনক বার্তা। বিভিন্ন দেশের উপকূলবর্তী অঞ্চলে সতর্কতা জারি থাকলেও, এখন পর্যন্ত বড় ধরনের প্রাণহানির খবর না মেলায় স্বস্তি রয়েছে। তবে পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে আন্তর্জাতিক আবহাওয়া এবং বিপর্যয় মোকাবিলা সংস্থাগুলি।