দেশজুড়ে মেডিক্যাল কলেজ দুর্নীতি: সিবিআইয়ের তদন্তে ফাঁস কোটি টাকার ঘুষ কেলেঙ্কারি

- আপডেট : ৬ জুলাই ২০২৫, রবিবার
- / 87
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা একাধিক মেডিক্যাল কলেজ ঘুষের বিনিময়ে সরকারি স্বীকৃতি এবং ছাড়পত্র পাওয়ার অভিযোগে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এই ঘটনায় তদন্তে নেমেছে সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (CBI)। ইতিমধ্যেই সিবিআই দায়ের করেছে একটি এফআইআর, যাতে নাম রয়েছে ৩৪ জনের। এঁদের মধ্যে রয়েছেন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের (NMC) আধিকারিক, চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কর্মীরাও। সিবিআই জানিয়েছে, এই ঘটনাকে ভারতের ‘সবচেয়ে বড় মেডিক্যাল কলেজ দুর্নীতি কাণ্ড’ বলা যায়।
সিবিআইয়ের তদন্তে উঠে এসেছে ভয়ঙ্কর চিত্র। অভিযোগ, বহু মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসক বা পর্যাপ্ত পরিকাঠামো না থাকা সত্ত্বেও মিলেছে ছাড়পত্র। কীভাবে? সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, ছাড়পত্র চাওয়া মেডিক্যাল কলেজগুলোকে পরিদর্শনের দিন ও সময় আগেই জানিয়ে দেওয়া হত। সেই অনুযায়ী কলেজ কর্তৃপক্ষ তৈরি থাকত। পরিদর্শনের সময় দেখানো হত কৃত্রিমভাবে সাজানো পরিকাঠামো, ভুয়ো চিকিৎসক ও রোগী।
ইনদওরের ইনডেক্স মেডিক্যাল কলেজের চেয়ারম্যান সুরেশ সিংহ ভাদোরিয়া-র বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি চিকিৎসকদের উপস্থিতি প্রমাণ করতে ক্লোন করা কৃত্রিম আঙুল ব্যবহার করে বায়োমেট্রিক যন্ত্রে ছাপ দিতেন। এই ভুয়ো উপস্থিতি দেখিয়েই কলেজটি ছাড়পত্র পায়। তাঁর নাম রয়েছে সিবিআইয়ের এফআইআরে।
পরিদর্শনের সময় যাতে সবকিছু ‘সাজানো’ থাকে, তার জন্য ভুয়ো রোগী এনে সাজানো হত হাসপাতালে। অন্ধ্রপ্রদেশের কাদিরির এজেন্ট বি হরিপ্রসাদ ও তাঁর সহযোগী অঙ্কম রামবাবু এই ভুয়ো রোগীদের জোগাড়ে সাহায্য করতেন। বিশাখাপত্তনমের কৃষ্ণ কিশোরও এই চক্রে জড়িত বলে জানা গিয়েছে। এনএমসি আধিকারিকেরা ঘুষ নিয়ে পরিদর্শকদের নামও আগে থেকে ফাঁস করে দিতেন, যাতে তাদেরও উপযুক্তভাবে ‘ম্যানেজ’ করা যায়।
CBI-এর অভিযোগ, জিতুলাল মিনা, যিনি এনএমসির মেডিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড রেটিং বোর্ড (MARB)-এর প্রাক্তন সদস্য, তিনিও ঘুষ নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষকে গোপন তথ্য ফাঁস করতেন। আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য হল, রাজস্থানে একটি মন্দির তৈরি করিয়ে নেওয়ার মতো বড়সড় সুবিধাও নিয়েছিলেন তিনি। হাওলার মাধ্যমেও টাকা লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।
সিবিআই জানিয়েছে, এই দুর্নীতিতে ৩৪ জনের নাম উঠে এসেছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন আট জন স্বাস্থ্য মন্ত্রকের আধিকারিক, পাঁচ জন চিকিৎসক এবং এনএমসির দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যরা। এখনও পর্যন্ত এই দুর্নীতিকাণ্ডে গ্রেফতার হয়েছেন ৮ জন।
এই কেলেঙ্কারির জাল বিস্তৃত ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশের গুরুগ্রাম হয়ে দক্ষিণ ভারতের একাধিক রাজ্যে। সারা দেশে প্রায় ৪০টি মেডিক্যাল কলেজ এই দুর্নীতির মাধ্যমে ছাড়পত্র পেয়েছে বলে সিবিআই দাবি করেছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল পড়ুয়া ভর্তি করে মোটা অঙ্কের টাকা আয় করা।
সিবিআই-এর তদন্তে উঠে এসেছে স্বঘোষিত ধর্মগুরু রবিশঙ্কর মহারাজা ওরফে রাওয়াতপুরা সরকারের নামও। তিনিও এই মেডিক্যাল কলেজ দুর্নীতিতে জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ।