‘ধর্মনিরপেক্ষ’ রাজনৈতিক দলগুলি কি জবাব চাইবে, ৬ জন নামাযিকে কে হত্যা করল
মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলার খালাসের রায়ে আসাদউদ্দিন ওয়াইসির তীব্র সমালোচনা

- আপডেট : ১ অগাস্ট ২০২৫, শুক্রবার
- / 37
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলার রায় নিয়ে দেশে শোরগোল পড়ে গেছে। যে এনআইএ কয়েকমাস আগেই সাধ্বী প্রজ্ঞা, কর্নেল পুরোহিতসহ বিস্ফোরণের মাস্টারমাইন্ডদের ফাঁসি চেয়েছিল, তাদের হঠাৎ কী হল যে আদালতের কাছে কোনও প্রমাণই পেশ করতে পারল না অপরাধীদের বিরুদ্ধে! তারা বেকসুর খালাস পেয়ে গেল এনআইয়ের আদালতে।
এই ঘটনায় অভিযুক্তদের খালাস পাওয়ার পর অল ইন্ডিয়া মজলিস-এ-ইত্তেহাদুল মুসলিমীনের প্রধান তথা হায়দরাবাদের সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়াইসি তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বিচার ব্যবস্থার এই রায়ে গভীর হতাশা প্রকাশ করে প্রশ্ন তুলেছেন, ৬ জন নামাযিকে কে হত্যা করল তাহলে? তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, ২০০৮ সালে সংঘটিত এই বোমা বিস্ফোরণে যারা মারা গিয়েছিলেন, তারা সবাই নামায পড়তে গিয়েছিলেন। ওই ঘটনায় আরও শতাধিক মানুষ আহত হন।
দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে চলা এই মামলার পর আদালত যখন সব অভিযুক্তকে নির্দোষ ঘোষণা করল, তখন এই রায়ের ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিস্ফোরণের ১৭ বছর পর প্রমাণের অভাবে আদালত সব অভিযুক্তকে খালাস করে দিল! মুম্বই ট্রেন বিস্ফোরণের মামলায় আসামিদের খালাসের পরেই যেভাবে রায়ে স্থগিতাদেশ চেয়েছিল মোদি ও ফড়নবিস সরকার, এই রায়ের রায়ের বিরুদ্ধেও কি তেমন আপিল করা হবে? মহারাষ্ট্রের ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ রাজনৈতিক দলগুলি কি জবাব চাইবে, ৬ জন মানুষকে কে হত্যা করল? এভাবেই ক্ষোভ উগরে দেন আসাদউদ্দিন।
ওয়াইসি আরও বলেছেন, এই রায় কেবল বিচারের ব্যর্থতা নয়, বরং মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি অবিচার। এই ধরনের রায় দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের, বিশেষ করে মুসলিমদের বিশ্বাস ও আস্থা নষ্ট করে দেবে। তার অভিযোগ, এই মামলার তদন্তে পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে এবং প্রকৃত দোষীদের আড়াল করার চেষ্টা হয়েছে। তিনি শাসক দল বিজেপিকে সরাসরি নিশানা করে বলেন, যদি এই অভিযুক্তরা নির্দোষ হন, তাহলে আসল অপরাধীরা কারা? কেন তাদের খুঁজে বের করা হল না?
তার মতে, এই মামলাটির দীর্ঘসূত্রিতা এবং শেষ পর্যন্ত অভিযুক্তদের খালাস সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রবণতারই প্রমাণ।
ওয়াইসির এই মন্তব্য থেকে বোঝা যায় যে, মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলার রায়টি রাজনৈতিক এবং সামাজিক দিক থেকে অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এই রায়ের ফলে বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
ওয়াইসি এই রায়কে বিচার ব্যবস্থার জন্য একটি দুঃখজনক দিন হিসেবে বর্ণনা করেছেন। মালেগাঁও বিস্ফোরণের মতো একটি গুরুতর ঘটনার পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও অপরাধীরা এখনও ধরা পড়েনি, যা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং বিচার ব্যবস্থার ব্যর্থতাকেই চিহ্নিত করে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, হেমন্ত কারকারে ২০০৮ সালের মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলার তদন্তের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি সে সময় মহারাষ্ট্র পুলিশের সন্ত্রাস-দমন শাখার (এটিএস) প্রধান ছিলেন। কারকারের নেতৃত্বে এটিএস এই মামলার তদন্ত শুরু করে এবং সেই প্রথমবার কোনও হিন্দু উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ আনা হয়। তদন্তে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসে। বিস্ফোরণে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটির মালিকানা সাধ্বী প্রজ্ঞা ঠাকুরের বলে চিহ্নিত করা হয়।
এর ভিত্তিতেই তিনি এবং অন্যান্য অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়। তদন্তে ‘অভিনব ভারত’ নামে একটি উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের নাম উঠে আসে, যার সঙ্গে অভিযুক্তদের যোগ ছিল বলে এটিএস দাবি করে। এই তদন্তের ফলেই ভারতে ‘হিন্দু সন্ত্রাস’ বা ‘গেরুয়া সন্ত্রাস’ বিতর্কটি শুরু হয়। কারণ এটিএস দাবি করে যে এই বিস্ফোরণের পিছনে ডানপন্থী হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর হাত আছে।
হেমন্ত কারকারের নেতৃত্বে এটিএস একটি চার্জশিট জমা দেয় যেখানে সাধ্বী প্রজ্ঞা ঠাকুর এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল প্রসাদ পুরোহিতসহ বেশ কয়েকজনকে অভিযুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে, এই মামলার তদন্ত জাতীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ-এর হাতে তুলে দেওয়া হয়।