২২ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

Pahalgam terror attack: গুজরাতে বাংলাদেশি সন্দেহে আটক মুসলিম, ভারতীয় হওয়া সত্ত্বেও উঠছে হেনস্তার অভিযোগ

চামেলি দাস
  • আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার
  • / 196

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বেড়েছে উত্তেজনা। এই উত্তেজনার আবহে গুজরাতে অবৈধ বাংলাদেশি শনাক্তকরণ অভিযান চালিয়ে রাজ্য পুলিশ এখনও পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ছয় হাজারের বেশি মানুষকে আটক করেছে। যাঁদের বেশিরভাগই ভারতীয় মুসলিম। রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল বিকাশ সহায় জানিয়েছেন, ৪৫০ জন বাংলাদেশি নাগরিকত্বের নথিপত্র দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে। সোমবার পিটিআইকে বিকাশ সহায় বলেন, নথিভিত্তিক যাচাইয়ে এখনও পর্যন্ত ৪৫০ জন বাংলাদেশিকে শনাক্ত করা হয়েছে। বাকিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। শনিবার ভোররাত থেকে এই অভিযান শুরু হয়। প্রথমে আহমেদাবাদ ও সুরাত শহরে এই অভিযান চলে। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা গুজরাটে। অবৈধ বাংলাদেশি সন্দেহে আটকদের মধ্যে অনেকেরই ভারতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে।

আরও পড়ুন: যোগীরাজ্যে ফের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কিশোরকে হেনস্তা! হিন্দুস্তান জিন্দাবাদ বলে পাকিস্তানের পতাকায় প্রস্রাবের নির্দেশ

আরও পড়ুন: কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব: Donald Trump

সুরাতের বাসিন্দা সুলতান মল্লিক। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার লাভপুরের বাসিন্দা।দীর্ঘ ছয় বছর ধরে সুরাতে এমব্রয়ডারির কাজ করেন। তাঁকেও বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করেছে গুজরাত পুলিশ। এক সংবাদ মাধ্যমকে সুলতান মল্লিকের স্ত্রী সাহিনা বিবি জানান, রাত ৩টে নাগাদ পুলিশ আসে। আধার কার্ড দেখতে চায়। তারপর আমার স্বামী ও দুই ভাগ্নেকে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে আসবে বলে জানানো হয়।  তিনদিন পেরিয়ে গেলেও তাঁদের কোনও খোঁজ নেই। সুলতান মল্লিকের ভারতীয় পাসপোর্ট রয়েছে। ১৯৯৩ সালে কেনা জমির দলিলের কপিও রয়েছে। যা তার ভারতীয় পরিচয় প্রমাণ করে। এখনও পর্যন্ত পুলিশ তাঁকে আদালতে হাজির করেনি। যা আইনের লঙ্ঘন বলেই মনে করা হচ্ছে। আহমেদাবাদে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে বরযাত্রী হিসাবে এসেছিলেন ফারজানা। তাঁর আত্মীয়দেরও পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। তাঁদের মধ্যে কেউই বাংলাদেশি নয়। এমনকী বাংলাভাষীও নন। ফারজানা জানান, আমার ভাই আর ভাইপো মহারাষ্ট্র থেকে এসেছিল। বাংলাদেশি সন্দেহে পুলিশ তাঁদের আটক করে। আমাদের কাছে সব নথি থাকা সত্ত্বেও সারাদিন ক্রাইম ব্রাঞ্চে বসিয়ে রাখা হয়। কিছু খেতেও দেওয়া হয়নি।আহমেদাবাদের বাসিন্দা আলমআরা পাঠান জানান, তার ছেলে ও পুত্রবধূকে পুলিশ আটক করেছে। তাঁদের কাছেও সব ভারতীয় নথি ছিল। ২৩ বছর ধরে আমি আহমেদাবাদে থাকি। আমার ছেলে এখানেই জন্মেছে। তবুও তাকে বাংলাদেশি সন্দেহে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন: অপারেশন সিঁদুরে নিকেশ মাসুদ আজহারের গোটা পরিবার !

আরও পড়ুন: পহেলগাঁও: প্রধান সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ, ভিডিয়ো রেকর্ডে অন্য গন্ধ পাচ্ছে এনআইএ

আরও পড়ুন: পহেলগাঁও জঙ্গি হামলায় নিহত সমীর ও বিতানের বাড়িতে ফিরহাদ ও অরূপ, দেওয়া হল আর্থিক সাহায্য

গুজরাতের ভারুচ জেলায় থাকেন পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার পরিযায়ী শ্রমিক নূর শেখ।  তাঁর এক বন্ধুকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে। তাঁর কাছেও রয়েছে ভারতীয় নথিপত্র। পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করে ‘পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চ’ নামে একটি সংগঠন।সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শুধু গুজরাট নয়, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও ওড়িশা থেকেও পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমদের হেনস্থা করার অভিযোগ উঠছে। সংগঠনটির রাজ্য সম্পাদক আসিফ ফারুক জানান, এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর আগে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে উত্তরপ্রদেশের কুশিনগরে মালদা জেলার ২৩ জন ফেরিওয়ালাকে মারধর করে ‘বাংলাদেশি’ তকমা দেওয়া হয়। আবার মুর্শিদাবাদ থেকে ওড়িশায় যাওয়া ৬০ জন শ্রমিককে স্থানীয়রা মারধর করে।

আধার বা ভোটার আইডি কার্ড থাকলেই কেউ ভারতীয় নয় বলে দাবি করেছে গুজরাত পুলিশ। এসব নথি নকল হতে পারে বলে জানিয়েছে গুজরাত পুলিশ। সীমান্তবর্তী রাজ্য থেকে তদন্তকারী দল আনা হচ্ছে বলেও সূত্রের খবর। এই ঘটনার আড়ালে সম্প্রদায়ভিত্তিক নজরদারি চলছে বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের। ‘পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চের’ প্রধান আসিফ ফারুক প্রশ্ন তুলেছেন, বাংলাভাষী ও মুসলমান হলেই কি নাগরিক অধিকার খর্ব হবে? এরা কি ভারতের অন্য কোথাও কাজ করতে পারবে না?

 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

Pahalgam terror attack: গুজরাতে বাংলাদেশি সন্দেহে আটক মুসলিম, ভারতীয় হওয়া সত্ত্বেও উঠছে হেনস্তার অভিযোগ

আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বেড়েছে উত্তেজনা। এই উত্তেজনার আবহে গুজরাতে অবৈধ বাংলাদেশি শনাক্তকরণ অভিযান চালিয়ে রাজ্য পুলিশ এখনও পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ছয় হাজারের বেশি মানুষকে আটক করেছে। যাঁদের বেশিরভাগই ভারতীয় মুসলিম। রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল বিকাশ সহায় জানিয়েছেন, ৪৫০ জন বাংলাদেশি নাগরিকত্বের নথিপত্র দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে। সোমবার পিটিআইকে বিকাশ সহায় বলেন, নথিভিত্তিক যাচাইয়ে এখনও পর্যন্ত ৪৫০ জন বাংলাদেশিকে শনাক্ত করা হয়েছে। বাকিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। শনিবার ভোররাত থেকে এই অভিযান শুরু হয়। প্রথমে আহমেদাবাদ ও সুরাত শহরে এই অভিযান চলে। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা গুজরাটে। অবৈধ বাংলাদেশি সন্দেহে আটকদের মধ্যে অনেকেরই ভারতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে।

আরও পড়ুন: যোগীরাজ্যে ফের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কিশোরকে হেনস্তা! হিন্দুস্তান জিন্দাবাদ বলে পাকিস্তানের পতাকায় প্রস্রাবের নির্দেশ

আরও পড়ুন: কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব: Donald Trump

সুরাতের বাসিন্দা সুলতান মল্লিক। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার লাভপুরের বাসিন্দা।দীর্ঘ ছয় বছর ধরে সুরাতে এমব্রয়ডারির কাজ করেন। তাঁকেও বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করেছে গুজরাত পুলিশ। এক সংবাদ মাধ্যমকে সুলতান মল্লিকের স্ত্রী সাহিনা বিবি জানান, রাত ৩টে নাগাদ পুলিশ আসে। আধার কার্ড দেখতে চায়। তারপর আমার স্বামী ও দুই ভাগ্নেকে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে আসবে বলে জানানো হয়।  তিনদিন পেরিয়ে গেলেও তাঁদের কোনও খোঁজ নেই। সুলতান মল্লিকের ভারতীয় পাসপোর্ট রয়েছে। ১৯৯৩ সালে কেনা জমির দলিলের কপিও রয়েছে। যা তার ভারতীয় পরিচয় প্রমাণ করে। এখনও পর্যন্ত পুলিশ তাঁকে আদালতে হাজির করেনি। যা আইনের লঙ্ঘন বলেই মনে করা হচ্ছে। আহমেদাবাদে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে বরযাত্রী হিসাবে এসেছিলেন ফারজানা। তাঁর আত্মীয়দেরও পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। তাঁদের মধ্যে কেউই বাংলাদেশি নয়। এমনকী বাংলাভাষীও নন। ফারজানা জানান, আমার ভাই আর ভাইপো মহারাষ্ট্র থেকে এসেছিল। বাংলাদেশি সন্দেহে পুলিশ তাঁদের আটক করে। আমাদের কাছে সব নথি থাকা সত্ত্বেও সারাদিন ক্রাইম ব্রাঞ্চে বসিয়ে রাখা হয়। কিছু খেতেও দেওয়া হয়নি।আহমেদাবাদের বাসিন্দা আলমআরা পাঠান জানান, তার ছেলে ও পুত্রবধূকে পুলিশ আটক করেছে। তাঁদের কাছেও সব ভারতীয় নথি ছিল। ২৩ বছর ধরে আমি আহমেদাবাদে থাকি। আমার ছেলে এখানেই জন্মেছে। তবুও তাকে বাংলাদেশি সন্দেহে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন: অপারেশন সিঁদুরে নিকেশ মাসুদ আজহারের গোটা পরিবার !

আরও পড়ুন: পহেলগাঁও: প্রধান সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ, ভিডিয়ো রেকর্ডে অন্য গন্ধ পাচ্ছে এনআইএ

আরও পড়ুন: পহেলগাঁও জঙ্গি হামলায় নিহত সমীর ও বিতানের বাড়িতে ফিরহাদ ও অরূপ, দেওয়া হল আর্থিক সাহায্য

গুজরাতের ভারুচ জেলায় থাকেন পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার পরিযায়ী শ্রমিক নূর শেখ।  তাঁর এক বন্ধুকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে। তাঁর কাছেও রয়েছে ভারতীয় নথিপত্র। পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করে ‘পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চ’ নামে একটি সংগঠন।সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শুধু গুজরাট নয়, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও ওড়িশা থেকেও পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমদের হেনস্থা করার অভিযোগ উঠছে। সংগঠনটির রাজ্য সম্পাদক আসিফ ফারুক জানান, এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর আগে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে উত্তরপ্রদেশের কুশিনগরে মালদা জেলার ২৩ জন ফেরিওয়ালাকে মারধর করে ‘বাংলাদেশি’ তকমা দেওয়া হয়। আবার মুর্শিদাবাদ থেকে ওড়িশায় যাওয়া ৬০ জন শ্রমিককে স্থানীয়রা মারধর করে।

আধার বা ভোটার আইডি কার্ড থাকলেই কেউ ভারতীয় নয় বলে দাবি করেছে গুজরাত পুলিশ। এসব নথি নকল হতে পারে বলে জানিয়েছে গুজরাত পুলিশ। সীমান্তবর্তী রাজ্য থেকে তদন্তকারী দল আনা হচ্ছে বলেও সূত্রের খবর। এই ঘটনার আড়ালে সম্প্রদায়ভিত্তিক নজরদারি চলছে বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের। ‘পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চের’ প্রধান আসিফ ফারুক প্রশ্ন তুলেছেন, বাংলাভাষী ও মুসলমান হলেই কি নাগরিক অধিকার খর্ব হবে? এরা কি ভারতের অন্য কোথাও কাজ করতে পারবে না?