০৪ অক্টোবর ২০২৫, শনিবার, ১৭ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বন্যা-ধসে বিপর্যস্ত পাকিস্তান, ৪৮ ঘন্টায় মৃত প্রায় ৩৫০

মারুফা খাতুন
  • আপডেট : ১৬ অগাস্ট ২০২৫, শনিবার
  • / 212

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : অবিরাম বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল আর হঠাৎ হড়পা বানের জোয়ারে তছনছ হয়ে যাচ্ছে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল। পাহাড়ের বুক থেকে নেমে আসা জলরাশি মুহূর্তে গ্রাস করছে গ্রাম, ভাসিয়ে নিচ্ছে ঘরবাড়ি, ফসল আর মানুষের স্বপ্ন। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত দুই সপ্তাহেই ৩৫০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ আরও অনেকে। স্থানীয়রা বলছেন, মৃত্যুর সংখ্যা হয়তো হাজার ছুঁতে পারে।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত খাইবার পাখতুনখোয়ার বুনের জেলা। একসময় সবুজ পাহাড়ঘেরা জনপদ আজ পরিণত হয়েছে কাদামাটির সমাধিক্ষেত্রে। পীরবাবা ও মালিকপুরার মতো গ্রাম প্রায় নিশ্চিহ্ন। এক বাসিন্দা হালিমা বিবি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন; তআমাদের ঘর, জমি, পশু, সন্তান সব ভেসে গেল। বুঝতেই পারিনি কীভাবে এলো এই জলোচ্ছ্বাস।

আরও পড়ুন: Epicentre of global terror: একটা দেশ সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে: জয়শঙ্কর

স্থানীয় হাসপাতালগুলো ভরে গেছে আহত মানুষে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, মৃতদের মধ্যে শিশু ও পুরুষ বেশি। কারণ, বানের সময় অনেক নারী পাহাড়ে ছিলেন জ্বালানি কাঠ বা পশু চরানোর কাজে। এক চিকিৎসক ভাঙা গলায় বললেন; আমি বহু দুর্ঘটনার রোগী দেখেছি, কিন্তু এ দৃশ্য হৃদয় ভেঙে দিচ্ছে। ছোট্ট শিশুদের নিথর দেহ যখন কাদামাটি থেকে তুলতে হয়, তখন হাত কাঁপে, বুকটা ভারী হয়ে আসে। চিকিৎসক হয়েও আমি চোখের জল আটকাতে পারিনি।

আরও পড়ুন: Imran Khan: ইমরানের মুক্তির দাবিতে উত্তাল পাকিস্তান

অবিরাম বৃষ্টিতে যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ভেসে গেছে সেতু, ভেঙে পড়েছে সড়ক। দুর্গত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছানো তাই এক দুঃস্বপ্নের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেনাবাহিনী ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা রাতদিন উদ্ধারকাজ চালালেও অনেক জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। শুক্রবার একটি উদ্ধারকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে পাঁচ সেনা কর্মকর্তার মৃত্যু নতুন করে আতঙ্ক বাড়িয়েছে।

আরও পড়ুন: Donald Trump-Shehbaz Sharif: শাহবাজ-মুনিরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ট্রাম্প

পাকিস্তানের জাতীয় বিপর্যয় নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চলতি বর্ষা মৌসুমে এখন পর্যন্ত ৬০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন কয়েক হাজার। বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা কয়েক লক্ষ। তিন হাজারেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরানো গেলেও এখনও পাহাড়ি গ্রামে আটকে আছেন শত শত পর্যটক ও গ্রামবাসী।

রাষ্ট্রসংঘ ইতিমধ্যেই সতর্ক করেছে, পাকিস্তানে মানবিক সঙ্কট ভয়াবহ আকার নিতে পারে। আন্তর্জাতিক সাহায্য না এলে দুর্যোগ-পরবর্তী পুনর্গঠন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। মনে করিয়ে দেয় ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার কথা, যখন ১,৭০০ জনেরও বেশি প্রাণ গিয়েছিল, ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল কয়েকশো কোটি ডলারের।

পাকিস্তানের এই সবুজ পাহাড়ি জনপদ এখন এক শোকস্তব্ধ ভূখণ্ড। গ্রাম হারানো মানুষের আর্তনাদ, শিশুহারা মায়ের ক্রন্দন, নিখোঁজ স্বজনের জন্য অপেক্ষারত বৃদ্ধের নিঃশ্বাস; সব মিলিয়ে গোটা দেশ যেন শোকের সাগরে ভাসছে। তবুও আশার আলো জ্বালিয়ে রাখছেন উদ্ধারকর্মীরা। মাটির নিচে চাপা পড়া প্রতিটি মানুষকে জীবিত পাওয়ার আশা নিয়ে তারা লড়ছেন, দিনের পর দিন।

আজকের পাকিস্তান দাঁড়িয়ে আছে এক ভয়াবহ সঙ্কটের সামনে;যেখানে মানুষ কেবল ঘর হারায়নি, হারিয়েছে ভবিষ্যতের নিশ্চয়তাও। তবুও পাহাড়ি বাতাসে ভেসে আসছে ভেঙে যাওয়া মানুষের একটাই প্রার্থনা; তআল্লাহ, আমাদের বাঁচিয়ে রাখো।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

বন্যা-ধসে বিপর্যস্ত পাকিস্তান, ৪৮ ঘন্টায় মৃত প্রায় ৩৫০

আপডেট : ১৬ অগাস্ট ২০২৫, শনিবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : অবিরাম বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল আর হঠাৎ হড়পা বানের জোয়ারে তছনছ হয়ে যাচ্ছে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল। পাহাড়ের বুক থেকে নেমে আসা জলরাশি মুহূর্তে গ্রাস করছে গ্রাম, ভাসিয়ে নিচ্ছে ঘরবাড়ি, ফসল আর মানুষের স্বপ্ন। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত দুই সপ্তাহেই ৩৫০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ আরও অনেকে। স্থানীয়রা বলছেন, মৃত্যুর সংখ্যা হয়তো হাজার ছুঁতে পারে।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত খাইবার পাখতুনখোয়ার বুনের জেলা। একসময় সবুজ পাহাড়ঘেরা জনপদ আজ পরিণত হয়েছে কাদামাটির সমাধিক্ষেত্রে। পীরবাবা ও মালিকপুরার মতো গ্রাম প্রায় নিশ্চিহ্ন। এক বাসিন্দা হালিমা বিবি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন; তআমাদের ঘর, জমি, পশু, সন্তান সব ভেসে গেল। বুঝতেই পারিনি কীভাবে এলো এই জলোচ্ছ্বাস।

আরও পড়ুন: Epicentre of global terror: একটা দেশ সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে: জয়শঙ্কর

স্থানীয় হাসপাতালগুলো ভরে গেছে আহত মানুষে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, মৃতদের মধ্যে শিশু ও পুরুষ বেশি। কারণ, বানের সময় অনেক নারী পাহাড়ে ছিলেন জ্বালানি কাঠ বা পশু চরানোর কাজে। এক চিকিৎসক ভাঙা গলায় বললেন; আমি বহু দুর্ঘটনার রোগী দেখেছি, কিন্তু এ দৃশ্য হৃদয় ভেঙে দিচ্ছে। ছোট্ট শিশুদের নিথর দেহ যখন কাদামাটি থেকে তুলতে হয়, তখন হাত কাঁপে, বুকটা ভারী হয়ে আসে। চিকিৎসক হয়েও আমি চোখের জল আটকাতে পারিনি।

আরও পড়ুন: Imran Khan: ইমরানের মুক্তির দাবিতে উত্তাল পাকিস্তান

অবিরাম বৃষ্টিতে যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ভেসে গেছে সেতু, ভেঙে পড়েছে সড়ক। দুর্গত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছানো তাই এক দুঃস্বপ্নের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেনাবাহিনী ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা রাতদিন উদ্ধারকাজ চালালেও অনেক জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। শুক্রবার একটি উদ্ধারকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে পাঁচ সেনা কর্মকর্তার মৃত্যু নতুন করে আতঙ্ক বাড়িয়েছে।

আরও পড়ুন: Donald Trump-Shehbaz Sharif: শাহবাজ-মুনিরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ট্রাম্প

পাকিস্তানের জাতীয় বিপর্যয় নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চলতি বর্ষা মৌসুমে এখন পর্যন্ত ৬০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন কয়েক হাজার। বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা কয়েক লক্ষ। তিন হাজারেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরানো গেলেও এখনও পাহাড়ি গ্রামে আটকে আছেন শত শত পর্যটক ও গ্রামবাসী।

রাষ্ট্রসংঘ ইতিমধ্যেই সতর্ক করেছে, পাকিস্তানে মানবিক সঙ্কট ভয়াবহ আকার নিতে পারে। আন্তর্জাতিক সাহায্য না এলে দুর্যোগ-পরবর্তী পুনর্গঠন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। মনে করিয়ে দেয় ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার কথা, যখন ১,৭০০ জনেরও বেশি প্রাণ গিয়েছিল, ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল কয়েকশো কোটি ডলারের।

পাকিস্তানের এই সবুজ পাহাড়ি জনপদ এখন এক শোকস্তব্ধ ভূখণ্ড। গ্রাম হারানো মানুষের আর্তনাদ, শিশুহারা মায়ের ক্রন্দন, নিখোঁজ স্বজনের জন্য অপেক্ষারত বৃদ্ধের নিঃশ্বাস; সব মিলিয়ে গোটা দেশ যেন শোকের সাগরে ভাসছে। তবুও আশার আলো জ্বালিয়ে রাখছেন উদ্ধারকর্মীরা। মাটির নিচে চাপা পড়া প্রতিটি মানুষকে জীবিত পাওয়ার আশা নিয়ে তারা লড়ছেন, দিনের পর দিন।

আজকের পাকিস্তান দাঁড়িয়ে আছে এক ভয়াবহ সঙ্কটের সামনে;যেখানে মানুষ কেবল ঘর হারায়নি, হারিয়েছে ভবিষ্যতের নিশ্চয়তাও। তবুও পাহাড়ি বাতাসে ভেসে আসছে ভেঙে যাওয়া মানুষের একটাই প্রার্থনা; তআল্লাহ, আমাদের বাঁচিয়ে রাখো।