রাতভর টানা ভারী বৃষ্টিতে জলমগ্ন জলপাইগুড়ির পৌর এলাকার একাংশ

- আপডেট : ২৭ জুন ২০২২, সোমবার
- / 15
শুভজিৎ দেবনাথঃ রাতভর টানা ভারী বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়ল জলপাইগুড়ির পৌর এলাকার একাংশ। আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে,প্রায় ১৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।শহরের তিন নং ঘুমটি মহামায়া পাড়া,কংগ্রেস পাড়া,পাণ্ডাপাড়া,স্টেশন রোড, নিউটাউন পাড়া, অরবিন্দ নগর, পরেশমিত্র কলোনী সহ একাধিক এলাকায়। কোনো কোনো রাস্তায় হাটু পর্যন্ত জল জমে যায়। জমা জলে দুর্ভোগে পড়তে হয় মানুষকে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি কমে আসায়, জলও নামতে শুরু করেছে।
জলপাইগুড়ি শহর ছাড়াও রবিবার রাতে ভুটান পাহাড় ও ডুয়ার্সে অবিরাম বৃষ্টির ফলে আংরাভাসা নদীর জলোচ্ছ্বাসের কারনে জলমগ্ন হয়ে পড়ে বানারহাট ব্লকের গয়েরকাটার বিভিন্ন এলাকা। ভুটান পাহাড়ের জল বানারহাটের হাতিনালা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এসে আংরাভাসা নদীতে পড়লে প্রবল ভাবে ফুলে ফেপে ওঠে আংরাভাসা। নদীর জল ঢুকে এদিন গয়েরকাটার জ্যোর্তিময়পল্লি, বিবেকানন্দপল্লি।
গয়েরকাটা স্কুল পাড়ায় ঝোরার জলে ক্ষতিগ্রস্ত ঢালাই রাস্তা জলের স্রোতে ভেঙ্গে যায় গয়েরকাটা হাই স্কুলে সীমানা প্রাচীর।বৃষ্টির জল জমে হিন্দুপাড়া, কোংগারনগর এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। জলমগ্ন হয়ে পড়ে প্রায় এক হাজার পরিবার। সঠিক নিকাশি ব্যবস্থার কারণে বেশ কিছু এলাকায় বৃষ্টির জল জমেও জলমগ্ন হয়ে পড়ে।
রবিবার রাতেই বহু মানুষের বাড়ির ভেতরে ঢুকে যায় জল। বাড়িতে জল ঢুকে থাকার কারনে এখন ও পর্যন্ত অনেক বাড়িতেই উনুন জ্বলে নি। এদিন সকাল থেকে জলমগ্ন এলাকা গুলি ঘুরে দেখেন বানারহাট পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সীমা চৌধুরী , সাঁকোয়াঝোরা-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বিনোদ ওরাও ।
সীমা চৌধুরী জানান, ” গয়েরকাটার জলমগ্ন পরিস্থিতি ক্ষতিয়ে দেখা হয়েছে৷ বহু মানুষের বাড়িতে এখন ও জল রয়েছে তাদের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে “।
তৃনমূলের সাকোয়াঝোরা ১ এস সি এস টি, ওবিসি সেলের অঞ্চল সভাপতি সমর সরকার জানান, আংরাভাসা নদীর জলোচ্ছ্বাস এর কারনে মানুষ কে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আমরা দলের পক্ষ থেকে মানুষের পাশে দাড়াবার চেষ্টা করছি। ৯ টা পর থেকে বৃষ্টি কিছুটা কমলে জল নামতে শুরু করে এলাকায়।
হিন্দুপাড়া জলমগ্ন পরিবারের বিন্নাগুড়ি আউটপোস্ট এর পুলিশের তরফ থেকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়। পাশাপাশি সাঁকোয়াঝোরা -১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বিনোদ ওরাও জানান, জ্যোতির্ময় কলোনি বিবেকানন্দ পল্লী ও কালুয়া কলোনিতে জলমগ্ন পরিবারের জন্যে শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অন্যদিকে ধূপগুড়ি ব্লকে ফের ডুডুয়া নদীর জলে প্লাবিত হল সাঁকোয়াঝোরা – ২ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব মল্লিক পাড়া। জল ঢুকে পড়ে মূলত জোতিষের কলোনী ও তিতলি তলা মল্লিক সভা এলাকায়। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে প্রায় ১০০ টির বেশি পরিবার। অভিযোগ ডুডুয়া নদীর বাঁধ কয়েক বছর আগে ভেঙে যায়। যার ফলে বাঁধ বয়ে গ্রামে জল ঢুকতে শুরু করে। প্রশাসন কে এই বিষয়ে জানিয়েও কোনো সুরাহা হচ্ছে না। আজ জলমগ্ন এলাকা পরিদর্শনে আসেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য। স্থানীয়দের আরো অভিযোগ প্রশাসন তাঁদের দেখে না।
সাঁকোয়াঝোরা ২ অঞ্চলের পঞ্চায়েত সদস্য রঞ্জু নাথ রায় অবশ্য বলেন, বর্তমানে নদীর জল কমছে। রাতে বৃষ্টি হলে জল বাড়লে এলাকার মানুষদের সরিয়ে নেওয়া হবে। থাকার ব্যবস্থা করা হবে পূর্ব মল্লিক পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে।
স্থানীয়দের কথায় জল বাড়ছে। রাতে বৃষ্টি হলে জল আরো বাড়লে ডুডুয়া নদীর জলে কার্যত ডুবে যাবে গোটা এলাকা।
অন্যদিকে,রাতভর বৃষ্টিতে শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া জাতীয়সড়কে জল জমে বিপত্তিম। চলাচলের অযোগ্য হয়ে উঠেছে সড়ক। পরিস্থিতি নজরে আনতে ধূপগুড়ি শহরে থেকে ফালাকাটাগামী ৩১ নং জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাল ব্যবসায়ীরা। পরে পুলিশ এসে অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান রাজেশ কুমার সিং।
দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং নিকাশি ব্যবস্থা সংস্কার করার আশ্বাস দিলে অবরোধ উঠে যায়। প্রায় ৪৫ মিনিট অবরোধ থাকার পর তা তুলে নেওয়া হয়। অভিযোগ, বৃষ্টিতে জল জমে রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে উঠেছে। মূলত নিকাশী ব্যবস্থা না থাকায় সড়কের ওপর জল জমে যাচ্ছে। বারবার প্রশাসন ও পুরসভাকে জানিয়েও কোনো সুরাহা হয় নি।রবিবার রাতভর বৃষ্টির জেরে সড়ক সহ বেশ কিছু বিস্তীর্ণ এলাকায় জলমগ্ন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বিক্ষোভের মধ্যেই দ্রুত নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক করে জল জমার সমস্যা মেটানোর দাবী জানানো হয়।
রাজেশ কুমার সিং স্বীকার করেন এই এলাকায় টেকনিক্যালি সমস্যা আছে। আজকেই কাজ শুরু হবে। এই রাস্তার পাশে থাকা ড্রেন গুলি বন্ধ রয়েছে, সেগুলি পরিস্কার করা হবে।