১৮ মে ২০২৫, রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রশংসা আনসারুল্লাহর!

চামেলি দাস
  • আপডেট : ১০ মে ২০২৫, শনিবার
  • / 209

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক:  বাহবা কুড়াচ্ছে ইয়েমেনের সশস্ত্র গোষ্ঠী আনসারুল্লাহ। হুথি নামে পরিচিত ও আমেরিকার কাছে সন্ত্রাসী তকমা পাওয়া এই ক্ষুদ্ধ আরব টিম এই মুহূর্তে সমগ্র আরব সমাজে মুখ্য আলোচনার বিষয়। আনসারুল্লাহর সঙ্গে প্রবল পরাক্রমশালী আমেরিকার সমঝোতা চুক্তি হল ওমানে। ওমানের মধ্যস্থতায় এই চুক্তির ফলে লোহিত সাগর ও বাব আল মন্দাবে আমেরিকার কোনও জাহাজের উপর আর আক্রমণ করবে না আনসারুল্লাহ গোষ্ঠী। আর আমেরিকার কোনও যুদ্ধবিমান বোমা ফেলতে উড়ে আসবে না ইয়েমেনে।

প্রায় ২০ মাস ধরে লোহিত সাগরের এই এলাকায় দাপট দেখিয়ে চলেছে আনসারুল্লাহ। তাদের ঘোষণা ছিল ফিলিস্তিনে গণহত্যা যতদিন বন্ধ না হয় ততদিন ইসরাইলের কোনও জাহাজ এখান দিয়ে যেতে পারবে না। ফিলিস্তিনিদের প্রতি অন্যান্য আরব দেশ সহানুভূতি

আরও পড়ুন: ইসরাইলের বিমানঘাঁটিতে Houthi-র হামলা

দেখিয়েছে তারা গণহত্যার নিন্দা জানিয়েছে, ফিলিস্তিনে ত্রাণসামগ্রী পাঠাতে চেয়েছে, কিন্তু কেউ ইসরাইলের বিরোধিতায় এমন কোনও পদক্ষেপ নিতে পারেনি, যার ফলে দুশ্চিন্তা বাড়ে ইসরাইলের। সবদিক দিয়ে দুর্বল এক আরব রাষ্ট্র ইয়েমেন কিন্তু ফিলিস্তিনিদের সহানুভূতি জানিয়েই চুপ থাকেনি, তারা সরাসরি যুদ্ধে নেমে পড়েছে প্রতিবেশী না হয়েও। ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য আনসারুল্লাহ গোষ্ঠী কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় থাকলেও কিন্তু ইসরাইল আমেরিকা ও ব্রিটেনের বিরুদ্ধে নামতে চেয়েছে নিজেদের দুর্বল পরিকাঠামো ও সমরশক্তি নিয়ে।

আরও পড়ুন: ইয়েমেনে মার্কিন হামলায় ৩০ নিহত, ‘দমানো যাবে না’ হুঁশিয়ারি হুতি নেতার

এ পর্যন্ত প্রায় ১৭০টি পানির জাহাজে হামলা চালিয়েছে তারা। ইসরাইলের সমুদ্র বাণিজ্য পথে বিরাট আঘাত হেনেছে। বেশ কয়েকটি ইসরাইলি কোম্পানির জাহাজ ধরে নিয়ে গিয়ে নিজেদের এলাকায় এখনও আটক করে রেখেছে এই ক্ষুব্ধ গোষ্ঠী হিসেবে গণ্য করা আনসারুল্লাহ টিম। এমনকি নিজেদের ঈমানী শক্তি দিয়ে আমেরিকার পাঠানো রণতরীর উপর আঘাত হেনেছে তারা।

আরও পড়ুন: সউদির সীমান্ত বাহিনীর গুলিতে নিহত শত শত অভিবাসী: রিপোর্ট

বিশ্বের তাবড় তাবড় শক্তিধর দেশ যখন আমেরিকার নৌবহরকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে, সেখানে আনসারুল্লাহ নিজেদের সামান্য শক্তি দিয়ে বেশ কয়েকটি আমেরিকার যুদ্ধবিমানকে ডুবিয়ে দিয়েছে লোহিত সাগরে। আনসারুল্লাহর এই শক্তি ও দম্ভ দেখে হতবাক হোয়াইট হাউস। ইয়েমেনে বোমা ফেলে আনসারুল্লাহর ঘাঁটি নষ্ট করে দেবে আমেরিকা এখন সে অবস্থা নেই। কেননা সমগ্র ইয়েমেনবাসী এখন আনসারুল্লাহর সৈনিক। তাই বিশাল আমেরিকার সঙ্গে ক্ষুব্ধ আনসারুল্লাহর সমঝোতা চুক্তিতে বিস্মিত আন্তর্জাতিক মহল। আর অবশ্যই ট্রাম্পের উপর ক্রোধে অগ্নিশর্মা ইসরাইলের প্রধান নেতানিয়াহু। আমেরিকা বিপদের সময় শুধু নিজেদের পণ্যবাহী জাহাজ বাঁচাতে এই চুক্তি করল। ইসরাইলকে বেমালুম ভুলে গেল চুক্তিতে সই করার সময়। এই প্রশ্নে উদ্বেলিত ইসরাইলও।

ইয়েমেনের ধ্বংস চাইছিল ইসরাইল সেনারা। কিন্তু ট্রাম্প তাদের সঙ্গে চুক্তি করে তাদের মান্যতা দিয়ে দিল। এই আনসারউল্লাহ কিন্তু নিজেদের স্বার্থের জন্য নিজেরা বাঁচবার জন্য কিংবা নিজেদের দাপট বৃদ্ধির জন্য বা সীমানা বাড়নোর জন্য পথে নামেনি। তাদের একটাই মাত্র দাবি— ফিলিস্তিনের নিরাপত্তা ও শাস্তি। ফিলিস্তিনি ভাইবোনদের উপর আঘাত যারা দেবে তারা ইয়েমেনের শত্রু। তাদের বিনাশ চাই। ফিলিস্তিনিদের শত্রুদের মোকাবেলায় সর্বশক্তিমান পরোয়ার দেগারের দরবারে হাত তুলে বসে থাকা শুধু নয়, ফিলিস্তিনিদের দুশমনের সঙ্গে টক্কর দেওয়ার ব্রত ইসরাইলের আক্রমণের প্রথম দিন থেকেই গ্রহণ করেছে তারা।

আরববাসীরা এখন দেখছে, কতটা কামিয়াব হয়েছে আনসারুল্লাহ। ট্রাম্পকেও চুক্তির টেবিলে আনা সম্ভব, এটা প্রমাণ করে দিল নিজেদের শক্তি দেখিয়ে। তাই আরব সমাজে প্রশ্ন উঠছে অসহায় ফিলিস্তিনিদের জন্য দুর্বল ইয়েমেনবাসীরা যেটা করে দেখালো শক্তিধর আরব রাষ্ট্রের শাসকরা সেটা করতে চাইলে ২০ মাস ধরে গণহত্যার এই মর্মান্তিক দৃশ্য দেখতে হতো না বিশ্ববাসীকে।

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

প্রশংসা আনসারুল্লাহর!

আপডেট : ১০ মে ২০২৫, শনিবার

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক:  বাহবা কুড়াচ্ছে ইয়েমেনের সশস্ত্র গোষ্ঠী আনসারুল্লাহ। হুথি নামে পরিচিত ও আমেরিকার কাছে সন্ত্রাসী তকমা পাওয়া এই ক্ষুদ্ধ আরব টিম এই মুহূর্তে সমগ্র আরব সমাজে মুখ্য আলোচনার বিষয়। আনসারুল্লাহর সঙ্গে প্রবল পরাক্রমশালী আমেরিকার সমঝোতা চুক্তি হল ওমানে। ওমানের মধ্যস্থতায় এই চুক্তির ফলে লোহিত সাগর ও বাব আল মন্দাবে আমেরিকার কোনও জাহাজের উপর আর আক্রমণ করবে না আনসারুল্লাহ গোষ্ঠী। আর আমেরিকার কোনও যুদ্ধবিমান বোমা ফেলতে উড়ে আসবে না ইয়েমেনে।

প্রায় ২০ মাস ধরে লোহিত সাগরের এই এলাকায় দাপট দেখিয়ে চলেছে আনসারুল্লাহ। তাদের ঘোষণা ছিল ফিলিস্তিনে গণহত্যা যতদিন বন্ধ না হয় ততদিন ইসরাইলের কোনও জাহাজ এখান দিয়ে যেতে পারবে না। ফিলিস্তিনিদের প্রতি অন্যান্য আরব দেশ সহানুভূতি

আরও পড়ুন: ইসরাইলের বিমানঘাঁটিতে Houthi-র হামলা

দেখিয়েছে তারা গণহত্যার নিন্দা জানিয়েছে, ফিলিস্তিনে ত্রাণসামগ্রী পাঠাতে চেয়েছে, কিন্তু কেউ ইসরাইলের বিরোধিতায় এমন কোনও পদক্ষেপ নিতে পারেনি, যার ফলে দুশ্চিন্তা বাড়ে ইসরাইলের। সবদিক দিয়ে দুর্বল এক আরব রাষ্ট্র ইয়েমেন কিন্তু ফিলিস্তিনিদের সহানুভূতি জানিয়েই চুপ থাকেনি, তারা সরাসরি যুদ্ধে নেমে পড়েছে প্রতিবেশী না হয়েও। ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য আনসারুল্লাহ গোষ্ঠী কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় থাকলেও কিন্তু ইসরাইল আমেরিকা ও ব্রিটেনের বিরুদ্ধে নামতে চেয়েছে নিজেদের দুর্বল পরিকাঠামো ও সমরশক্তি নিয়ে।

আরও পড়ুন: ইয়েমেনে মার্কিন হামলায় ৩০ নিহত, ‘দমানো যাবে না’ হুঁশিয়ারি হুতি নেতার

এ পর্যন্ত প্রায় ১৭০টি পানির জাহাজে হামলা চালিয়েছে তারা। ইসরাইলের সমুদ্র বাণিজ্য পথে বিরাট আঘাত হেনেছে। বেশ কয়েকটি ইসরাইলি কোম্পানির জাহাজ ধরে নিয়ে গিয়ে নিজেদের এলাকায় এখনও আটক করে রেখেছে এই ক্ষুব্ধ গোষ্ঠী হিসেবে গণ্য করা আনসারুল্লাহ টিম। এমনকি নিজেদের ঈমানী শক্তি দিয়ে আমেরিকার পাঠানো রণতরীর উপর আঘাত হেনেছে তারা।

আরও পড়ুন: সউদির সীমান্ত বাহিনীর গুলিতে নিহত শত শত অভিবাসী: রিপোর্ট

বিশ্বের তাবড় তাবড় শক্তিধর দেশ যখন আমেরিকার নৌবহরকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে, সেখানে আনসারুল্লাহ নিজেদের সামান্য শক্তি দিয়ে বেশ কয়েকটি আমেরিকার যুদ্ধবিমানকে ডুবিয়ে দিয়েছে লোহিত সাগরে। আনসারুল্লাহর এই শক্তি ও দম্ভ দেখে হতবাক হোয়াইট হাউস। ইয়েমেনে বোমা ফেলে আনসারুল্লাহর ঘাঁটি নষ্ট করে দেবে আমেরিকা এখন সে অবস্থা নেই। কেননা সমগ্র ইয়েমেনবাসী এখন আনসারুল্লাহর সৈনিক। তাই বিশাল আমেরিকার সঙ্গে ক্ষুব্ধ আনসারুল্লাহর সমঝোতা চুক্তিতে বিস্মিত আন্তর্জাতিক মহল। আর অবশ্যই ট্রাম্পের উপর ক্রোধে অগ্নিশর্মা ইসরাইলের প্রধান নেতানিয়াহু। আমেরিকা বিপদের সময় শুধু নিজেদের পণ্যবাহী জাহাজ বাঁচাতে এই চুক্তি করল। ইসরাইলকে বেমালুম ভুলে গেল চুক্তিতে সই করার সময়। এই প্রশ্নে উদ্বেলিত ইসরাইলও।

ইয়েমেনের ধ্বংস চাইছিল ইসরাইল সেনারা। কিন্তু ট্রাম্প তাদের সঙ্গে চুক্তি করে তাদের মান্যতা দিয়ে দিল। এই আনসারউল্লাহ কিন্তু নিজেদের স্বার্থের জন্য নিজেরা বাঁচবার জন্য কিংবা নিজেদের দাপট বৃদ্ধির জন্য বা সীমানা বাড়নোর জন্য পথে নামেনি। তাদের একটাই মাত্র দাবি— ফিলিস্তিনের নিরাপত্তা ও শাস্তি। ফিলিস্তিনি ভাইবোনদের উপর আঘাত যারা দেবে তারা ইয়েমেনের শত্রু। তাদের বিনাশ চাই। ফিলিস্তিনিদের শত্রুদের মোকাবেলায় সর্বশক্তিমান পরোয়ার দেগারের দরবারে হাত তুলে বসে থাকা শুধু নয়, ফিলিস্তিনিদের দুশমনের সঙ্গে টক্কর দেওয়ার ব্রত ইসরাইলের আক্রমণের প্রথম দিন থেকেই গ্রহণ করেছে তারা।

আরববাসীরা এখন দেখছে, কতটা কামিয়াব হয়েছে আনসারুল্লাহ। ট্রাম্পকেও চুক্তির টেবিলে আনা সম্ভব, এটা প্রমাণ করে দিল নিজেদের শক্তি দেখিয়ে। তাই আরব সমাজে প্রশ্ন উঠছে অসহায় ফিলিস্তিনিদের জন্য দুর্বল ইয়েমেনবাসীরা যেটা করে দেখালো শক্তিধর আরব রাষ্ট্রের শাসকরা সেটা করতে চাইলে ২০ মাস ধরে গণহত্যার এই মর্মান্তিক দৃশ্য দেখতে হতো না বিশ্ববাসীকে।