০১ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিধানসভায় সুব্রত’র স্মৃতিচারণায় নওশাদ সিদ্দিকীর গলায় প্রশংসা, শুভেন্দুর গলায় আবেগ, অন্তরালেই থাকলেন মমতা

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ৮ নভেম্বর ২০২১, সোমবার
  • / 6

পুবের কলম প্রতিবেদকঃ বিধানসভায় শেষ শ্রদ্ধায় শাসক থেকে বিরোধী সকলের কাছেই যে সুব্রত মুখোপাধ্যায় সমানভাবে গ্রহণযোগ্য ছিলেন, সে কথা প্রমাণ হল আরও একবার। তাঁকে স্মরণ করতে গিয়ে কারো চোখ থেকে ঝরল জল,  কারো গলা ভারী হয়ে এল,  আবার কেউ আবেগের স্মৃতির অতলে ডুব দিলেন। সুব্রত মুখোপাধ্যায় বাংলার রাজনীতির এমন একটা নাম, যিনি মৃত্যুর পরেও দুই প্রান্তে থাকা শাসক বিরোধীদের স্মৃতির আসরে মিলিয়ে দিয়ে গেলেন।

তবে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের শেষযাত্রার মতন এদিন স্মরণসভাতেও নিজেকে অন্তরালেই রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী। দাদা সুব্রতর চলে যাওয়াটা এখনও মন মেনে নিতে পারেননি তৃণমূল নেত্রী। আর সেই কারণেই নবান্নের ফাইলের ভিড়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এদিন প্রয়াত এই বন্ধুর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, সেই ১৯৬৭ সাল থেকে ওঁর সঙ্গে আমার পরিচয়। তারপর ছাত্র আন্দোলন থেকে পথ চলতে চলতে এতগুলো বছর কেটেছে। কত ঝগড়া করেছি, তার হিসাব নেই। আবার কত নিবিড় বন্ধুত্বও ছিল। আজ যে সুব্রত নেই, ভাবতেই পারছি না। এরপর আর স্থির হয়ে কথা বলতে পারেনি তিনি। বিধানসভা অধিবেশন কক্ষেই কেঁদে ফেলেন। শোভনদেব বলেন, দীর্ঘদিন একসঙ্গে রাজনীতি করেছি। ঝগড়াও হয়েছে। ওর পৈতে আমাকে তৈরি করে দিতে হত। এমন একজন বন্ধুকে হারানো যে কতটা দুঃখের, তা বলে বোঝানো যাবে না।

এদিন সুব্রত মুখোপাধ্যায় সম্পর্কে বলতে গিয়ে গলা গলা ধরে এসেছিল পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়েরও। তিনি বলেন, আমার ডানদিকের আসনটা ফাঁকা! ওঁনার মৃত্যু আমাদের অনাথ করে দিয়ে গেল। আমার জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে ওঁনার অবদান আছে। তিনি শুধু আমার রাজনৈতিক গুরু নন, আমার বড় দাদা ছিলেন।

বিরোধীদলের পক্ষ থেকে বলতে উঠে নওশাদ সিদ্দিকী পঞ্চায়েত মন্ত্রীর ভূয়ষী প্রশংসা করে বলেন,  সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে বাংলা রাজনীতির অনেক বড় ক্ষতি হল। উনি আমাকে সৌজন্যের রাজনীতির পাঠ পড়িয়েছিলেন।

পরিবহণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন,  সুব্রত দা’ নেই, সেটা ভাবতে পারছি না। তাঁর স্মৃতি আমরা ভুলতে পারব না। আমরা সবাই সুব্রতদাকে স্মরণ করে বাকি জীবন কাটাব।

তৃণমূলের প্রাক্তনী ও বর্তমান বিজেপি বিধায়ক মিহির গোস্বামী বলেন,  সুব্রতবাবুর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি। বিধানসভায় এসে সুব্রত মুখ্যপাধ্যায়কে দেখতে পাচ্ছি না। এটা আমার কাছে যন্ত্রণা।

এদিন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে স্মরণ করতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। অতীতের স্মৃতি আওড়ে তিনি বলেন, সন্তানতুল্য মনে করতেন আমাকে। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার ও আমার পরিবারের আত্মিক সম্পর্ক ছিল। মনে হচ্ছে পরিবারেরই এক সদস্যকে হারালাম। রাজনীতির বাইরেও আমাদের সম্পর্ক ছিল। আমার এবং আমার পরিবারের সম্পর্ক ছিল। অনেক ছোট বয়সে আমি তাঁকে দেখেছি। মেদিনীপুরের বাড়িতে তিনি শতাধিকবার এসেছেন, থেকেছেন। তাঁর সঙ্গে রাজনীতির মত পার্থক্য থাকলেও কোনও দিন সেই সম্পর্কে প্রভাব পড়েনি। বাংলার রাজনীতিতে সুব্রত মুখ্যপাধ্যায় প্রাসঙ্গিক থাকবেন।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

বিধানসভায় সুব্রত’র স্মৃতিচারণায় নওশাদ সিদ্দিকীর গলায় প্রশংসা, শুভেন্দুর গলায় আবেগ, অন্তরালেই থাকলেন মমতা

আপডেট : ৮ নভেম্বর ২০২১, সোমবার

পুবের কলম প্রতিবেদকঃ বিধানসভায় শেষ শ্রদ্ধায় শাসক থেকে বিরোধী সকলের কাছেই যে সুব্রত মুখোপাধ্যায় সমানভাবে গ্রহণযোগ্য ছিলেন, সে কথা প্রমাণ হল আরও একবার। তাঁকে স্মরণ করতে গিয়ে কারো চোখ থেকে ঝরল জল,  কারো গলা ভারী হয়ে এল,  আবার কেউ আবেগের স্মৃতির অতলে ডুব দিলেন। সুব্রত মুখোপাধ্যায় বাংলার রাজনীতির এমন একটা নাম, যিনি মৃত্যুর পরেও দুই প্রান্তে থাকা শাসক বিরোধীদের স্মৃতির আসরে মিলিয়ে দিয়ে গেলেন।

তবে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের শেষযাত্রার মতন এদিন স্মরণসভাতেও নিজেকে অন্তরালেই রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী। দাদা সুব্রতর চলে যাওয়াটা এখনও মন মেনে নিতে পারেননি তৃণমূল নেত্রী। আর সেই কারণেই নবান্নের ফাইলের ভিড়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এদিন প্রয়াত এই বন্ধুর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, সেই ১৯৬৭ সাল থেকে ওঁর সঙ্গে আমার পরিচয়। তারপর ছাত্র আন্দোলন থেকে পথ চলতে চলতে এতগুলো বছর কেটেছে। কত ঝগড়া করেছি, তার হিসাব নেই। আবার কত নিবিড় বন্ধুত্বও ছিল। আজ যে সুব্রত নেই, ভাবতেই পারছি না। এরপর আর স্থির হয়ে কথা বলতে পারেনি তিনি। বিধানসভা অধিবেশন কক্ষেই কেঁদে ফেলেন। শোভনদেব বলেন, দীর্ঘদিন একসঙ্গে রাজনীতি করেছি। ঝগড়াও হয়েছে। ওর পৈতে আমাকে তৈরি করে দিতে হত। এমন একজন বন্ধুকে হারানো যে কতটা দুঃখের, তা বলে বোঝানো যাবে না।

এদিন সুব্রত মুখোপাধ্যায় সম্পর্কে বলতে গিয়ে গলা গলা ধরে এসেছিল পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়েরও। তিনি বলেন, আমার ডানদিকের আসনটা ফাঁকা! ওঁনার মৃত্যু আমাদের অনাথ করে দিয়ে গেল। আমার জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে ওঁনার অবদান আছে। তিনি শুধু আমার রাজনৈতিক গুরু নন, আমার বড় দাদা ছিলেন।

বিরোধীদলের পক্ষ থেকে বলতে উঠে নওশাদ সিদ্দিকী পঞ্চায়েত মন্ত্রীর ভূয়ষী প্রশংসা করে বলেন,  সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে বাংলা রাজনীতির অনেক বড় ক্ষতি হল। উনি আমাকে সৌজন্যের রাজনীতির পাঠ পড়িয়েছিলেন।

পরিবহণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন,  সুব্রত দা’ নেই, সেটা ভাবতে পারছি না। তাঁর স্মৃতি আমরা ভুলতে পারব না। আমরা সবাই সুব্রতদাকে স্মরণ করে বাকি জীবন কাটাব।

তৃণমূলের প্রাক্তনী ও বর্তমান বিজেপি বিধায়ক মিহির গোস্বামী বলেন,  সুব্রতবাবুর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি। বিধানসভায় এসে সুব্রত মুখ্যপাধ্যায়কে দেখতে পাচ্ছি না। এটা আমার কাছে যন্ত্রণা।

এদিন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে স্মরণ করতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। অতীতের স্মৃতি আওড়ে তিনি বলেন, সন্তানতুল্য মনে করতেন আমাকে। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার ও আমার পরিবারের আত্মিক সম্পর্ক ছিল। মনে হচ্ছে পরিবারেরই এক সদস্যকে হারালাম। রাজনীতির বাইরেও আমাদের সম্পর্ক ছিল। আমার এবং আমার পরিবারের সম্পর্ক ছিল। অনেক ছোট বয়সে আমি তাঁকে দেখেছি। মেদিনীপুরের বাড়িতে তিনি শতাধিকবার এসেছেন, থেকেছেন। তাঁর সঙ্গে রাজনীতির মত পার্থক্য থাকলেও কোনও দিন সেই সম্পর্কে প্রভাব পড়েনি। বাংলার রাজনীতিতে সুব্রত মুখ্যপাধ্যায় প্রাসঙ্গিক থাকবেন।