নয়া ওয়াকফ সংশোধনী আইন: বাংলাজুড়ে তুমুল প্রতিবাদ-বিক্ষোভ

- আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার
- / 142

Protest held by Joint Forum for Waqf Protection, a coalition of various Muslim organisations, against Waqf Bill in Kolkata | Salil Bera
হাবিব মণ্ডল: কেন্দ্রের নয়া ওয়াকফ সংশোধনী বিল আইনে পরিণত হতেই দেশজুড়ে তীব্র প্রতিবাদে শামিল হচ্ছে সংখ্যালঘু মুসলমানরা। ভারতের মুসলিমদের মধ্যে সংশোধনী ওয়াকফ আইন নিয়ে তুমুল উদ্বেগ এবং আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক রাজনৈতিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় সংগঠন এই আইনকে সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় সম্পত্তির উপর হস্তক্ষেপ বলে মনে করছেন। ফলে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয়েছে প্রতিবাদ সভা, বিক্ষোভ মিছিল, সামাজিক মাধ্যমেও চলছে তীব্র আলোচনা।
সুতি¬: ১৬৩ ধারা জারি থাকা সত্ত্বেও ফের উত্তপ্ত মুর্শিদাবাদের সুতি। ওয়াকফ (সংশোধিত) আইনের বিরোধিতায় মঙ্গলবার থেকে চলা আন্দোলনের জেরে বুধবার সকালে থমথমে থাকলেও, দুপুর গড়াতেই ফের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়। আহিরণ এলাকায় জাতীয় সড়কে বিক্ষোভ চলাকালীন পুলিশের বাধা পেয়ে বিক্ষোভকারীরা ইট ছুড়তে শুরু করেন। পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগানোরও অভিযোগ উঠেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়। ১২ নম্বর জাতীয় সড়কের হল্ট মোড়-সংলগ্ন এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে পথ অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রশাসনের তরফে দ্রুত জারি করা হয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৬৩ ধারা। স্পষ্ট জানানো হয়েছে, সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলিতে পাঁচ জন বা তার অধিক মানুষের একত্রিত হওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। পাশাপাশি শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় কোনও রকম দাহ্য পদার্থ বহনে কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।
মুরারই: বুধবার ওয়াকফ সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে উত্তাল হল বীরভূমের মুরারই। এ দিন তৃণমূলের তরফে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে দলীয় সাংসদের বিরুদ্ধে স্লোগান— ‘স্যালাইন এমপি-কে মানি না, মানব না। যদিও সাংসদের নাম সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি, রাজনৈতিক মহলের ধারণা, এই স্লোগানের নিশানায় সাংসদ শতাধী রায়। জানা গিয়েছে, ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাসের দিন সংসদে অনুপস্থিত ছিলেন তিনি। পরে তিনি জানান, হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, স্যালাইন চলছিল। তবে তাঁর ব্যাখ্যায় খুশি নন তৃণমূলের একাংশ।
বনগাঁ: বনগাঁর মতিগঞ্জে এক মাহফিলে ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদে গর্জে ওঠেন ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা সওবান সিদ্দিকি। তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের ঈমান রক্ষার লড়াই। রাজনৈতিক বিভাজন ভুলে সবাইকে এক হয়ে আন্দোলনে নামতে হবে।’ তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে ঐক্যের ডাক— ‘মসলক যার যার, ইসলাম সবার।’ বলেন, ‘ওয়াকফ সম্পত্তি আমাদের পূর্বপুরুষদের দান। এটা সরকারের নয়, কোনও ব্যক্তি মালিকানার নয়। এই বিল সংবিধানের বিরুদ্ধাচরণ।’
দক্ষিণ ২৪ পরগনা: মন্দিরবাজার ব্লকের বিজয়গঞ্জ বাজারে ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে বিশাল প্রতিবাদ সভা আয়োজন করে জমিয়ত উলামায়ে হিন্দ। ওয়াকফ আইন মানছি না, মানব নাদ স্লোগানে মুখরিত হয় এলাকা। হাজার হাজার যুবক গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি থেকে মিছিল করে হাজির হন। অন্যদিকে, জয়নগরের খাকুড়দহ থেকে ওয়াকফ সংশোধনী আইন বাতিলের দাবিতে বিশাল প্রতিবাদ মিছিল হয়। খাকুড়দহ থেকে বেলিয়াচণ্ডী হয়ে মিছিল ফের খাকুড়দহে গিয়ে শেষ হয়। এই মিছিলে প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল— ওয়াকফ বিল বাতিল চাই, আমাদের সম্পত্তিতে হাত নয়। পাশপাশি হিলফুল ফুজুল সংগঠন যুগদিয়ার পক্ষ থেকে এই ইস্যুতে বুধবার প্রতিবাদ জানানো হয়। কর্মসূচিতে ছিলেন মাওলানা হাবিবুর রহমান, আইনজীবী সারফারাজ আহমেদ, মুফতি আবদুল কাদের, মাওলানা ফরিদুল ইসলাম প্রমুখ।
বহরমপুর: ওয়াকফ সংশোধনী আইন প্রত্যাহারের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে মুর্শিদাবাদ। বুধবার বহরমপুর শহরের টেক্সটাইল মোড়ে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের জেলা শাখার ডাকে আয়োজিত হয় প্রতিবাদ সভা। ছিলেন জেলা সভাপতি মাওলানা আবু বকর কাসেমী, সাধারণ সম্পাদক মুফতি নাজমুল হক প্রমুখ। হরিহরপাড়া, ডোমকল, কান্দি-সহ জেলার নানা প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ সভাস্থলে হাজির হন। মুফতি নাজমুল বলেন, ‘ওয়াকফ হল আল্লাহ্্র সম্পত্তি। কেন্দ্রীয় সরকার মুসলমানদের ধর্মীয় সম্পত্তিতে হস্তক্ষেপ করছে। এই কালা আইন বাতিল করতে হবে।’
ইসলামপুর: একই ইস্যুতে ইসলামপুর শহরের রাস্তায় নামে অল ইন্ডিয়া রেজা কমিটি। শহরের রেগুলেটেড মার্কেট থেকে শুরু হয়ে মিছিল ঘুরে চৌরঙ্গী মোড়, পিডব্লিউডি মোড় হয়ে পুর বাসস্ট্যান্ডে শেষ হয়, যেখানে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। রেজা কমিটির সভাপতি মসরুর আলম বলেন, ‘এই সংশোধনী সংবিধানের ১৪, ১৫, ২৫ ও ২৬ ধারা লঙ্ঘন করছে। আমাদের ধর্মীয় এবং সম্পত্তির অধিকার কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত চলছে।’