১৫ জুন ২০২৫, রবিবার, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অপারেশন সিঁদুর নিয়ে প্রশ্ন, হিন্দুত্ববাদীদের অভিযোগে গ্রেফতার অধ্যাপক আলি

সুস্মিতা
  • আপডেট : ১৮ মে ২০২৫, রবিবার
  • / 92

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: অপারেশন সিঁদুর নিয়ে প্রশ্ন তোলায় এবার গ্রেফতার হলেন এক অধ্যাপক। অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আলি খান মাহমুদাবাদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জানা গিয়েছে, গত ৮ মে অপারেশন সিঁদুর নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্ট করেছিলেন অধ্যাপক আলি। তাঁর পোস্টের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন হরিয়ানায় এক বিজেপির যুব মোর্চার নেতা। পদ্ম নেতার অভিযোগের ভিত্তিতেই রবিবার দিল্লি থেকে অধ্যাপককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আলির গ্রেফতারিতে তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

উল্লেখ্য, অপারেশন সিঁদুর নিয়ে মহিলা সেনা অফিসারদের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপত্তিকর পোস্ট করার অভিযোগ তুলেছিল হিন্দুত্ববাদীরা। আলি খানের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন হরিয়ানার বিজেপির যুব মোর্চার সাধারণ সম্পাদক যোগেশ জাথেরি। পাশাপাশি, হরিয়ানা রাজ্য মহিলা কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিষয়টির ওপর নজর দিয়েছিল।

আরও পড়ুন: অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলি খান মাহমুদাবাদের জামিন মঞ্জুর

অধ্যাপক আলি সামাজিক মাধ্যমে লিখেছিলেন, ‘আমি খুব খুশি যে অনেক ডানপন্থী কর্নেল কুরেশির প্রশংসা করছেন। তবে তারা একইভাবে গণপিটুনি, একতরফা বুলডোজার কার্যক্রমের বিরুদ্ধেও জোর গলায় সরব হতে পারেন। যারা বিজেপির বিদ্বেষের রাজনীতির মুখে পড়ছেন, তাদের সুরক্ষার দাবি জানাতে পারেন।’ তিনি নিজের পোস্টে সেই সাংবাদিক সম্মেলনকে ‘অপ্টিক’ এবং ‘ভন্ডামি’ বলে অভিহিত করেছিলেন। আর সেই ঘটনার কয়েকদিন পরেই এই প্রফেসরকে গ্রেফতার করা হল।

আরও পড়ুন: বিদ্বেষের লড়াই

প্রসঙ্গত, এর আগে একটি নোটিশে কমিশন বলেছিল যে আলি খানের মন্তব্য ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর মহিলা অফিসারদের অবমাননা করা হয়েছে এবং সাম্প্রদায়িক বিভেদ উসকে দিয়েছে। যদিও কমিশনের নোটিশের জবাবে অধ্যাপক বলেছিলেন, অপারেশন সিঁদুর এবং এর সঙ্গে যুক্ত মহিলা অফিসারদের নিয়ে তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টগুলি নারীবিদ্বেষী ছিল না এবং তাঁকে নাকি সেনসর করা হচ্ছে। আলির বক্তব্য ছিল, তাঁর কথা ভুলভাবে নেওয়া হয়েছে এবং এই ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপের এক্তিয়ার নেই মহিলা কমিশনের।

সূত্রের খবর, হরিয়ানা পুলিশ সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা প্রচার, বিদ্বেষে প্ররোচনা এবং ধর্মীয় বিশ্বাসকে অবমাননা করার একাধিক ধারায় অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপককে গ্রেফতার করে হরিয়ানা পুলিশ। ট্রানজিট রিমান্ড ছাড়াই তাকে দিল্লির বাসভবন থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। এই গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়ে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অপূর্বানন্দ বলেছেন, এই গ্রেফতার অবৈধ। দিল্লি হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপের আহ্বান করছি। সুপ্রিম কোর্টের একটি রায় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, গ্রেফতারের সময় প্রয়োজনীয় সুরক্ষা দেওয়া হয়নি।

এছাড়াও অধ্যাপক আলিকে গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়েছেন শিক্ষাবিদ, সরকারী কর্মচারী এবং রাজনীতিবিদরা। ইতিমধ্যে ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে এক হাজারের বেশি ব্যক্তি একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে নারী কমিশনের কর্মকান্ডকে ‘বিদ্বেষপূর্ণ’ ও ‘অযৌক্তিক’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। বিশিষ্টদের বক্তব্য, যুদ্ধ ও রাজনীতির সূক্ষ্ম সমালোচনা করার ক্ষেত্রেও এখন কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। দেশে বাক্ স্বাধীনতা এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক ভীতি প্রদর্শন নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছেন তারা।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

অপারেশন সিঁদুর নিয়ে প্রশ্ন, হিন্দুত্ববাদীদের অভিযোগে গ্রেফতার অধ্যাপক আলি

আপডেট : ১৮ মে ২০২৫, রবিবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: অপারেশন সিঁদুর নিয়ে প্রশ্ন তোলায় এবার গ্রেফতার হলেন এক অধ্যাপক। অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আলি খান মাহমুদাবাদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জানা গিয়েছে, গত ৮ মে অপারেশন সিঁদুর নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্ট করেছিলেন অধ্যাপক আলি। তাঁর পোস্টের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন হরিয়ানায় এক বিজেপির যুব মোর্চার নেতা। পদ্ম নেতার অভিযোগের ভিত্তিতেই রবিবার দিল্লি থেকে অধ্যাপককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আলির গ্রেফতারিতে তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

উল্লেখ্য, অপারেশন সিঁদুর নিয়ে মহিলা সেনা অফিসারদের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপত্তিকর পোস্ট করার অভিযোগ তুলেছিল হিন্দুত্ববাদীরা। আলি খানের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন হরিয়ানার বিজেপির যুব মোর্চার সাধারণ সম্পাদক যোগেশ জাথেরি। পাশাপাশি, হরিয়ানা রাজ্য মহিলা কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিষয়টির ওপর নজর দিয়েছিল।

আরও পড়ুন: অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলি খান মাহমুদাবাদের জামিন মঞ্জুর

অধ্যাপক আলি সামাজিক মাধ্যমে লিখেছিলেন, ‘আমি খুব খুশি যে অনেক ডানপন্থী কর্নেল কুরেশির প্রশংসা করছেন। তবে তারা একইভাবে গণপিটুনি, একতরফা বুলডোজার কার্যক্রমের বিরুদ্ধেও জোর গলায় সরব হতে পারেন। যারা বিজেপির বিদ্বেষের রাজনীতির মুখে পড়ছেন, তাদের সুরক্ষার দাবি জানাতে পারেন।’ তিনি নিজের পোস্টে সেই সাংবাদিক সম্মেলনকে ‘অপ্টিক’ এবং ‘ভন্ডামি’ বলে অভিহিত করেছিলেন। আর সেই ঘটনার কয়েকদিন পরেই এই প্রফেসরকে গ্রেফতার করা হল।

আরও পড়ুন: বিদ্বেষের লড়াই

প্রসঙ্গত, এর আগে একটি নোটিশে কমিশন বলেছিল যে আলি খানের মন্তব্য ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর মহিলা অফিসারদের অবমাননা করা হয়েছে এবং সাম্প্রদায়িক বিভেদ উসকে দিয়েছে। যদিও কমিশনের নোটিশের জবাবে অধ্যাপক বলেছিলেন, অপারেশন সিঁদুর এবং এর সঙ্গে যুক্ত মহিলা অফিসারদের নিয়ে তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টগুলি নারীবিদ্বেষী ছিল না এবং তাঁকে নাকি সেনসর করা হচ্ছে। আলির বক্তব্য ছিল, তাঁর কথা ভুলভাবে নেওয়া হয়েছে এবং এই ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপের এক্তিয়ার নেই মহিলা কমিশনের।

সূত্রের খবর, হরিয়ানা পুলিশ সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা প্রচার, বিদ্বেষে প্ররোচনা এবং ধর্মীয় বিশ্বাসকে অবমাননা করার একাধিক ধারায় অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপককে গ্রেফতার করে হরিয়ানা পুলিশ। ট্রানজিট রিমান্ড ছাড়াই তাকে দিল্লির বাসভবন থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। এই গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়ে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অপূর্বানন্দ বলেছেন, এই গ্রেফতার অবৈধ। দিল্লি হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপের আহ্বান করছি। সুপ্রিম কোর্টের একটি রায় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, গ্রেফতারের সময় প্রয়োজনীয় সুরক্ষা দেওয়া হয়নি।

এছাড়াও অধ্যাপক আলিকে গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়েছেন শিক্ষাবিদ, সরকারী কর্মচারী এবং রাজনীতিবিদরা। ইতিমধ্যে ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে এক হাজারের বেশি ব্যক্তি একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে নারী কমিশনের কর্মকান্ডকে ‘বিদ্বেষপূর্ণ’ ও ‘অযৌক্তিক’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। বিশিষ্টদের বক্তব্য, যুদ্ধ ও রাজনীতির সূক্ষ্ম সমালোচনা করার ক্ষেত্রেও এখন কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। দেশে বাক্ স্বাধীনতা এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক ভীতি প্রদর্শন নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছেন তারা।