‘পাক’ শব্দে আপত্তি! রাজস্থানী ব্যবসায়ীরা মিষ্টি থেকে সরাল ‘পাক’ শব্দটি

- আপডেট : ২৩ মে ২০২৫, শুক্রবার
- / 133
পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: একমাস হয়ে গেছে পহেলগাঁওতে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে। তার প্রত্যাঘাত হিসাবে ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালায় কেন্দ্রীয় সরকার। পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত জঙ্গিঘাঁটিগুলোকে গুঁড়িয়ে দেয় ভারতীয় সেনা। পাকিস্তান ভারতের গুজরাত, রাজস্থান এবং জম্মু-কাশ্মীরের সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় হামলা চালায়। ব্ল্যাক আউটের সম্মুখীন হতে হয় রাজস্থানের সাধারণ মানুষকে। যদিও পাকিস্তানের হামলার যোগ্য উত্তর দিয়েছিল ভারতীয় সেনা। আকাশপথেই গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল পাকিস্তানের ড্রোন। তবে পাকিস্তানের এই হামলা আজও দগদগে ঘা হয়ে রয়েছে ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয় তথা রাজস্থানে। সবার আগে দেশ, সেই বার্তা দিতে উদ্যোগী হয়েছেন রাজস্থানের মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা। রাজস্থানের গোলাপী শহর জয়পুরের মিষ্টির ব্যবসায়ীরা ‘পাক’ শব্দটি নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। রাজস্থানের ঐতিহ্যবাহী নানান মিষ্টির নাম থেকে ‘পাক’ শব্দ সরিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা। তার বদলে করা হচ্ছে ‘শ্রী’ বা ‘ভারত’। ‘মোতি পাক’, ‘আম পাক’ বা ‘মহীশূর পাক’ ভারতীয় মিষ্টান্ন জগতের একেকটি আইকন। সাধারণত, বেসন, চিনি, ঘি, ক্ষীর এই সমস্ত উপকরণ দিয়ে বিশেষ মণ্ড তৈরি করা হয়। দীর্ঘক্ষণ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে এটি রান্না করা হয় বলেই ‘পাক’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। আর সেই ‘পাক’ শব্দ নিয়েই শুরু হয়েছে সমস্যা।
জয়পুরের মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সম্প্রতি বেশ কিছু গ্রাহক ‘পাক’ শব্দটি তুলে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। তাঁরা এই নামটি নিয়ে অস্বস্তি বোধ করছেন। বর্তমান পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে দেশপ্রেমের অনুভূতির কথা মাথায় রেখে নাম পরিবর্তন করতে ‘পাক’ শব্দটি বাদ দিচ্ছেন অনেক মিষ্টি ব্যবসায়ীরাই। আরও এক মিষ্টি বিক্রেতা জানিয়েছেন, “সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি সমর্থন প্রদর্শনের এটি আমাদের ক্ষুদ্র প্রয়াস।” বোম্বে মিষ্টান ভাণ্ডার এবং তিয়োহার সুইটসের মতো নামকরা আউটলেটগুলি মিষ্টির নাম পরিবর্তন করেছে। শুধু তাই নয়, মানসরোবর, রাজা পার্ক এবং বিশালীর মতো ঐতিহ্যবাহী দোকানগুলিও দেশাত্মবোধে গা ভাসিয়ে মিষ্টির নাম পরিবর্তন করা শুরু করেছে।
‘মোতি পাক’-এর মতো মিষ্টি ‘মোতি শ্রী’, ‘আম পাক’ থেকে ‘আম শ্রী’, ‘গন্ড পাক’ থেকে ‘গন্ড শ্রী’, ‘মহীশূর পাক’-এর নাম পরিবর্তন করে ‘মহীশূর শ্রী’ করা হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, বিখ্যাত ‘বিকানেরি মোতি পাক’ মিষ্টিও বহু দোকানে ‘বিকানেরি মতি শ্রী’ নামে বিক্রি করা হচ্ছে। দোকান মালিকরা জানিয়েছেন, এটি কোনও বিপণন কৌশল নয় বরং বর্তমান সামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই আন্তরিকতা ও আবেগ থেকেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রাজস্থানে মিষ্টির নাম পরিবর্তন নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় ব্যাপক হইচই শুরু হয়েছে। ‘পাক’ শব্দটি নিয়ে দানা বেঁধেছে বিতর্ক। ভারতীয় ভাষাবিদ অভিষেক অবতান্স এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে লিখেছেন, “কে বোঝাবে ‘মাইসোর পাক’, ‘মোতি পাক’, ‘আম পাক’ ইত্যাদিতে থাকা ‘পাক’ শব্দটি ‘পাকা’ থেকে এসেছে। যা একটি কন্নড় শব্দ। যার অর্থ ‘মিষ্টি মশলা’। সংস্কৃত শব্দ ‘পাকভা’ থেকে এসেছে। যার অর্থ ‘রান্না করা’ বা ‘বেকড’।”
সোশাল মিডিয়ায় আরেকজন লিখেছেন, ‘পাক’ শব্দটি অনেক ভারতীয় ভাষায় প্রচলিত রয়েছে। যা রান্নার সঙ্গে সম্পর্কিত। অনেকে মজা করে লিখেছেন, মহীশূর পাক থেকে পাক শব্দ তো বাদ দিয়েছেন। কিন্তু চিনের সঙ্গে কী করবেন? আপনি চিনি নামটি কি বাদ দেবেন? ‘দেশে কী সব হচ্ছে’ বলে আরেকজন প্রশ্ন তুলেছেন।
রাজস্থানের এই ঘটনায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সাংস্কৃতিক বোধ ও ঐতিহাসিক সচেতনতার অভাব থেকেই মিষ্টির নাম পরিবর্তনের হিড়িক পড়েছে বলে মনে করছেন ভাষাবিদ থেকে সমালোচকরা। ভারতীয় মিষ্টিতে ‘পাক’ শব্দটির ব্যবহার অনেক পুরোনো। বর্তমানে পাক-ভারত দ্বন্দ্বের অনেক আগে থেকেই ভারতীয় রন্ধনশিল্পে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ভারতের বিভিন্ন ভাষায় ‘পাক’ শব্দের ব্যবহার রয়েছে বলেও সমালোচকরা মনে করছেন। জাতীয়তাবাদী উচ্ছ্বাস থেকে ভাষাগত এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকে একটি ভুল তথ্য সামনে উঠে আসছে বলে অনেকেই মনে করছেন। সাংস্কৃতিক সচেতনতার অভাব থেকেই এই ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।