১৭ মে ২০২৫, শনিবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রমযান: হৃদয় পরিবর্তনের বরকতময় এক মাস

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ৬ মার্চ ২০২৫, বৃহস্পতিবার
  • / 228

হাসান আল মামুন : রমযান, ইসলামিক ক্যালেন্ডারের নবম মাস যা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং মহিমান্বিত একটি মাস রূপে বিবেচিত। সিয়ামব্রত পালন (রোযা), ইবাদত, আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং আত্ম- অনুশীলনের মাধ্যমে নিজেদের উত্তম ধাঁচে গঠন করার মহৎ লক্ষ্যে বিশ্বের কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ মুসলিম রমযানকে স্বাগত জানান। এই মাস আল্লাহ এবং তাঁর বান্দাদের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর করে তোলে।

রমযানের মূল অনুশীলন হল সিয়ামব্রত পালন। ‘সিয়াম’ শধের অর্থ হলো ‘বিরত থাকা’, যা শুধুমাত্র খাদ্য-পানীয় এবং শারীরিক সম্বন্ধ থেকে নয়, বরং অসৎ চিন্তা, খারাপ কথাবার্তা, ঝগড়াঝাঁটি, অলসতা, সময় নষ্ট সহ যাবতীয় বদভ্যাস থেকেও বিরত থাকা বোঝায়। রমযান মাসে মুসলিমরা এই সমস্ত বাজে অভ্যাস থেকে নিজেদের বিরত রাখার মাধ্যমে আত্মসংযমের শিক্ষা গ্রহণ করতে সচেষ্ট হন। এই মাস ধৈর্য (সবর) চর্চারও উত্তম সময়। ক্ষুধা, তৃষ্ণা এবং ক্লান্তি সত্ত্বেও মুসলমানরা ধৈর্যের সাথে সিয়াম পালন করেন যা কঠিন পরিস্থিতিতে অটল থাকার মত মহৎ গুণ অর্জন করতে শেখায়।

আরও পড়ুন: শুধু রমযান নয়, কখনোই অনুমতি দেওয়া হবে না: ফ্যাশন শো নিয়ে আবদুল্লাহ

রমযান মাসে ধনী ও গরিব-দুঃখী সকলেই একসঙ্গে সিয়াম পালন করেন। ধনী ব্যক্তিরা সাধারণত স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপন করেন এবং ক্ষুধা ও কষ্টের প্রকৃত অনুভূতি খুব কমই বোঝেন। তবে রোযা পালন করার মাধ্যমে তারা ক্ষুধার কষ্ট অনুভব করেন এবং দুঃখী-অসহায়দের দুর্দশা উপলব্ধি করতে পারেন।

আরও পড়ুন: সিরিয়ায় নতুন সরকার গঠন আগামী মাসে

রমযান আত্ম-পর্যালোচনা ও শৃঙ্খলা অর্জনের এক অনন্য সুযোগ এনে দেয়। এই মাসে মুসলমানরা তাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম, অভ্যাস, চালচলন ইত্যাদি মূল্যায়ন করতে: উত্তম চরিত্র গঠনে সচেষ্ট হন। অনেকে এই মাসে অপ্রয়োজনীয় মোবাইল ফোন ব্যবহার, পরনিন্দা, পরচর্চা বা অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের মতো খারাপ অভ্যাস পরিত্যাগ করে কুরআন অধ্যয়ন, দান-সদকা এবং পরোপকারের মতো ইতিবাচক অভ্যাস গড়ে তোলেন। এছাড়া সাহারী (সূর্যোদয়ের আগের খাবার), ইবাদত-বন্দেগী, ইফতার (সূর্যাস্তের পরের খাবার) সহ যাবতীয় কার্যাবলী একটি নির্দিষ্ট সময় মোতাবেক করার ফলে শৃঙ্খলা এবং সময় ব্যবস্থাপনার মতো গুরুত্বপূর্ণ গুণাবলী অর্জন করা সম্ভব।

আরও পড়ুন: পবিত্র উমরাহ শুরুর ঘোষণা  

রমযান পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ককে দৃঢ় করে। পরিবারের সদস্যরা একত্রে সাহারী ও ইফতার করেন, যা পারস্পরিক ভালোবাসা ও ঐক্য বৃদ্ধি করে। মসজিদগুলো নামাযির ভিড়ে পূর্ণ থাকে, যা মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্য সৃষ্টি করে। একসঙ্গে ইফতার করা, নামায পড়া এবং দান-সদকার মাধ্যমে অন্যের পাশে দাঁড়ানোর এই অভ্যাস মুসলিম সমাজের একতা ও সংহতি দৃঢ় করে।

পরিশেষে বলা যায়, রমযান শুধুমাত্র সিয়াম পালনের মাস নয়; এটি আত্মশুদ্ধি, আত্মনিয়ন্ত্রণ, ধৈর্য, মানবিকতা ও সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের একটি মাস । এটি মুসলমানদের হৃদয় ও চিন্তাকে বদলে দেয়, আল্লাহর ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধি করে। এই পবিত্র মাসে অর্জিত শিক্ষা ও গুণাবলি শুধু রমযান মাসেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি সারা বছরের জন্য একজন মুমিনের জীবনের পথপ্রদর্শক হয়ে ওঠে। রমজানের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা মুসলমানদের জীবনে গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে, যা তাদের ঈমানকে মজবুত করে এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের পথে পরিচালিত করে।

 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

রমযান: হৃদয় পরিবর্তনের বরকতময় এক মাস

আপডেট : ৬ মার্চ ২০২৫, বৃহস্পতিবার

হাসান আল মামুন : রমযান, ইসলামিক ক্যালেন্ডারের নবম মাস যা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং মহিমান্বিত একটি মাস রূপে বিবেচিত। সিয়ামব্রত পালন (রোযা), ইবাদত, আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং আত্ম- অনুশীলনের মাধ্যমে নিজেদের উত্তম ধাঁচে গঠন করার মহৎ লক্ষ্যে বিশ্বের কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ মুসলিম রমযানকে স্বাগত জানান। এই মাস আল্লাহ এবং তাঁর বান্দাদের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর করে তোলে।

রমযানের মূল অনুশীলন হল সিয়ামব্রত পালন। ‘সিয়াম’ শধের অর্থ হলো ‘বিরত থাকা’, যা শুধুমাত্র খাদ্য-পানীয় এবং শারীরিক সম্বন্ধ থেকে নয়, বরং অসৎ চিন্তা, খারাপ কথাবার্তা, ঝগড়াঝাঁটি, অলসতা, সময় নষ্ট সহ যাবতীয় বদভ্যাস থেকেও বিরত থাকা বোঝায়। রমযান মাসে মুসলিমরা এই সমস্ত বাজে অভ্যাস থেকে নিজেদের বিরত রাখার মাধ্যমে আত্মসংযমের শিক্ষা গ্রহণ করতে সচেষ্ট হন। এই মাস ধৈর্য (সবর) চর্চারও উত্তম সময়। ক্ষুধা, তৃষ্ণা এবং ক্লান্তি সত্ত্বেও মুসলমানরা ধৈর্যের সাথে সিয়াম পালন করেন যা কঠিন পরিস্থিতিতে অটল থাকার মত মহৎ গুণ অর্জন করতে শেখায়।

আরও পড়ুন: শুধু রমযান নয়, কখনোই অনুমতি দেওয়া হবে না: ফ্যাশন শো নিয়ে আবদুল্লাহ

রমযান মাসে ধনী ও গরিব-দুঃখী সকলেই একসঙ্গে সিয়াম পালন করেন। ধনী ব্যক্তিরা সাধারণত স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপন করেন এবং ক্ষুধা ও কষ্টের প্রকৃত অনুভূতি খুব কমই বোঝেন। তবে রোযা পালন করার মাধ্যমে তারা ক্ষুধার কষ্ট অনুভব করেন এবং দুঃখী-অসহায়দের দুর্দশা উপলব্ধি করতে পারেন।

আরও পড়ুন: সিরিয়ায় নতুন সরকার গঠন আগামী মাসে

রমযান আত্ম-পর্যালোচনা ও শৃঙ্খলা অর্জনের এক অনন্য সুযোগ এনে দেয়। এই মাসে মুসলমানরা তাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম, অভ্যাস, চালচলন ইত্যাদি মূল্যায়ন করতে: উত্তম চরিত্র গঠনে সচেষ্ট হন। অনেকে এই মাসে অপ্রয়োজনীয় মোবাইল ফোন ব্যবহার, পরনিন্দা, পরচর্চা বা অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের মতো খারাপ অভ্যাস পরিত্যাগ করে কুরআন অধ্যয়ন, দান-সদকা এবং পরোপকারের মতো ইতিবাচক অভ্যাস গড়ে তোলেন। এছাড়া সাহারী (সূর্যোদয়ের আগের খাবার), ইবাদত-বন্দেগী, ইফতার (সূর্যাস্তের পরের খাবার) সহ যাবতীয় কার্যাবলী একটি নির্দিষ্ট সময় মোতাবেক করার ফলে শৃঙ্খলা এবং সময় ব্যবস্থাপনার মতো গুরুত্বপূর্ণ গুণাবলী অর্জন করা সম্ভব।

আরও পড়ুন: পবিত্র উমরাহ শুরুর ঘোষণা  

রমযান পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ককে দৃঢ় করে। পরিবারের সদস্যরা একত্রে সাহারী ও ইফতার করেন, যা পারস্পরিক ভালোবাসা ও ঐক্য বৃদ্ধি করে। মসজিদগুলো নামাযির ভিড়ে পূর্ণ থাকে, যা মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্য সৃষ্টি করে। একসঙ্গে ইফতার করা, নামায পড়া এবং দান-সদকার মাধ্যমে অন্যের পাশে দাঁড়ানোর এই অভ্যাস মুসলিম সমাজের একতা ও সংহতি দৃঢ় করে।

পরিশেষে বলা যায়, রমযান শুধুমাত্র সিয়াম পালনের মাস নয়; এটি আত্মশুদ্ধি, আত্মনিয়ন্ত্রণ, ধৈর্য, মানবিকতা ও সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের একটি মাস । এটি মুসলমানদের হৃদয় ও চিন্তাকে বদলে দেয়, আল্লাহর ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধি করে। এই পবিত্র মাসে অর্জিত শিক্ষা ও গুণাবলি শুধু রমযান মাসেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি সারা বছরের জন্য একজন মুমিনের জীবনের পথপ্রদর্শক হয়ে ওঠে। রমজানের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা মুসলমানদের জীবনে গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে, যা তাদের ঈমানকে মজবুত করে এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের পথে পরিচালিত করে।