নিভল বাংলা সংগীতাঙ্গনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র
বরেণ্য সংগীত শিল্পী মুস্তাফা জামান আব্বাসীর ইন্তেকাল

- আপডেট : ১০ মে ২০২৫, শনিবার
- / 148
পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: বাংলা সংগীতাঙ্গনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র নিভে গেল। প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী, সুরকার, সংগ্রাহক, গবেষক ও লেখক মুস্তাফা জামান আব্বাসী ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। শনিবার সকালে বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকার বনানীর একটি হাসপাতলে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
তাঁর মৃত্যুর খবর জানিয়ে বড় মেয়ে সংগীতশিল্পী সামিরা আব্বাসী বাবার সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করেছেন ফেসবুকে। আবেগমাখা ভাষায় লিখেছেন, ‘আমার সোনার চান পাখি… আর দেখা হবে না?’ শনিবার জোহরের নামাজের পর গুলশানের আজাদ মসজিদে তাঁর জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
মুস্তাফা জামান আব্বাসী ভাওয়াইয়া সম্রাট কিংবদন্তি শিল্পী আব্বাস উদ্দিন আহমদের তৃতীয় পুত্র। তাঁর চাচা আর এক বরেণ্য লোক শিল্পী শাহ আবদুল করিম। তাঁর বোন ফেরদৌসি রহমানও একজন সংগীতজ্ঞ। বড় ভাই মোস্তাফা কামাল ছিলেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি।
অবিভক্ত ভারতের কোচবিহার জেলার বলরামপুর গ্রামে ১৯৩৬ সালের ৮ ডিসেম্বর মুস্তাফা জামান আব্বাসীর জন্ম। তাঁর শৈশব ও কৈশর কেটেছে কলকাতা শহরে। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতজ্ঞ ওস্তাদ মুহাম্মদ হোসেন খসরু এবং ওস্তাদ গুল মুহাম্মদ খাঁর কাছে নিয়েছেন সংগীতের তালিম। দেশ বিভাগের পর তাঁরা সপরিবারে ঢাকায় চলে যান। জীবন ভর গানের সঙ্গে কাটানো মুস্তাফা জামান আব্বাসী ছিলেন একজন গবেষকও। ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির ‘কাজী গবেষণা নজরুল ইসলাম এবং আব্বাস উদ্দিন আহমদও শিক্ষা কেন্দ্রের গবেষক হিসাবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। ধারাবাহিক কাজ করেছেন বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভিতে।
কবি, লেখক, গবেষক, মুস্তাফা জামান আব্বাসীর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫০। তাঁর লেখা বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ‘আব্বাস উদ্দিনn মানুষ ও শিল্পী, জীবন নদীর উজানে,’ ‘ভাটির দেশের ভাটিয়ালি’ ‘লালন যাত্রীর পশরা’, ‘মুহাম্মদের নাম’ ‘সুফি কবিতা’, ‘রবীন্দ্রনাথের প্রেমের গান, প্রভৃতি।
সংগীতের অবদানের জন্য ১৯৯৫ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন মুস্তাফা জামান আব্বাসী। এছাড়াও আরও বহু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ, এমএ করার পর হার্ভার্ড গ্রুপ থেকে মার্কেটিং বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নেন। কর্মজীবনে তিনি বাংলাদেশ শিল্প, কলা একাডেমীর মহা পরিচালক সহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন।
তাঁর সংগ্রহে রয়েছে কয়েক হাজার লোকগান। তিনি ২৪টির বেশি দেশে ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, নজরুলগীতি পরিবেশন করে বাংলা গানকে পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্ব দরবারে।