অবশেষে স্যালাইন কাণ্ডে চিকিৎসাধীন প্রসূতি মারা গেলেন কলকাতার এসএসকেএম-এ

- আপডেট : ১২ মে ২০২৫, সোমবার
- / 124
পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: অবশেষে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্যালাইন কাণ্ডে চিকিৎসাধীন অসুস্থ থাকা শেষ প্রসূতি নাসরিন খাতুনের মৃত্যু হল কলকাতার এস এস কে এম হাসপাতালে। গ্রিন করিডর করে নিয়ে গিয়ে কয়েক মাস রেখে টানা চিকিৎসা করা হলেও শেষ পর্যন্ত রবিবার রাতে তার মৃত্যু হয়েছে বলে স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানানো হয়েছে। কেশপুরের বাসিন্দা নাসরিনের কন্যা সন্তান অবশ্য সুস্থ রয়েছে তাদের দেশের বাড়িতে। এসএসকেএম এ নাসরিনের দেহ ময়নাতদন্তের পর পাঠানো হবে কেশপুরে।
উল্লেখ করা যায়, গত ৮ জানুয়ারি রাতে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একসঙ্গে পাঁচজন প্রসূতির সিজার অপারেশন হয়েছিল। সেই অপারেশনে পাঁচজন প্রসূতিই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। ১০ ই জানুয়ারি মৃত্যু হয়েছিল প্রসূতি মামনি রুইদাস এর। তারপরে বিষয়টি সামনে আসতেই চরম উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্ত তৈরি হয়েছিল মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। অভিযোগ ছিল, জুনিয়র চিকিৎসকরা নাকি ভুল অপারেশন করেছিলেন তাই এই সমস্যা হয়েছিল। অভিযোগে আরও বলা হয়েছিল, বিতর্কিত একটি স্যালাইন ব্যবহারের কারণেও নাকি এই অসুস্থ হয়ে থাকতে পারে।-তবে যাই হোক চিকিৎসা বিভ্রাটেই ওই পাঁচজন অসুস্থ হয়েছিলেন এই রকমই অভিযোগ ওঠে। ঘটনার তদন্তে নেমেছিল সিআইডি। রাজ্যস্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তারাও এসে পুরো বিষয়টি দেখে অবস্থার গুরুত্ব বিবেচনা করে দ্রুত বাকি চারজনের। এদের মধ্যে একজন রেখা সাউ মোটামুটি সুস্থ থাকায়, তাকে রেখে বাকি তিনজন তথা, মাম্পি সিং, মিনারা বিবি, নাসরিন খাতুনকে গ্রীন করিডোর করে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে কলকাতার এসএসকেএম এ নিয়ে যাওয়া হয় ১২ জানুয়ারি। সেখানে চিকিৎসা শুরু হয়। তবে ততক্ষণে মৃত্যু হয়েছিল আরও এক প্রসুতির সদ্যোজাত সন্তানের। তিন প্রসূতির চিকিৎসা চলছিল কলকাতার এস এস কে এম এ। কয়েক মাস চিকিৎসা চলার পর পর পর দুজন তথা মাম্পি সিং ও মিনারা বিবি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। কিন্তু পরিস্থিতি জটিল থাকায় কেশপুরের বাসিন্দা নাসরিন চিকিৎসাধীন ছিলেন সেখানেই। সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। ১০ই মে ছুটি নিয়ে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ৯ই মে তার খিচুনি ও বমি দেখা দেয়। ফের চিকিৎসায় তৎপরতা বাড়াতে হয়। অবশেষে রবিবার রাতে তার মৃত্যু হয়েছে বলে স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাক্তার সৌম্য শংকর সারেঙ্গী জানিয়েছেন – কিডনিজনিত সমস্যা থাকার কারণে তার ডায়ালিইসিস চলছিল। সেই ডায়ালিসিস নিতে না পেরে মাল্টি অর্গান ফেলিওর হয়ে মৃত্যু হয়েছে তার। এসএসকেএম হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করে দেহ পাঠানো হবে পশ্চিম মেদিনীপুরে।
তবে ইতিমধ্যে ওই গাফিলতির অভিযোগে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মোট ৬ জন জুনিয়র ডাক্তার সহ সিনিয়র মিলিয়ে ১১ জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল। তারপরে শুরু হওয়া নানা আন্দোলনের জেরে জুনিয়র চিকিৎসকদের সাসপেনশন প্রত্যাহার করা হয়েছে। সিনিয়র চিকিৎসকদের সাসপেনশন আজও অব্যাহত। সেই চিকিৎসকদের কয়েকজন ঘটনার দিনে হাসপাতালে উপস্থিত না থেকে নার্সিংহোমে চিকিৎসায় সময় কাটিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ ছিল। এই কাণ্ড এখনো জ্বলজ্বল করছে সকলের মনে। তার মাঝে নতুন করে মৃত্যুর ঘটনা শেষ এক প্রসূতির।