আগামী ২৫ বছর গরমে হবে না হজ: জানাল সউদি আরব

- আপডেট : ৯ জুন ২০২৫, সোমবার
- / 135
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: প্রতি বছর যখন হজের মৌসুম আসে, তখন লাখো মানুষ বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে হৃদয়ে একটাই উদ্দেশ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করেন—তাঁদের প্রভুর ডাকে সাড়া দিতে। বয়স, শারীরিক কষ্ট, অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা—সব পেরিয়ে মানুষ ছুটে যান সেই পবিত্র ভূমির দিকে, যেখানে কাবা অবস্থিত, যেখানে ইব্রাহিম (আ.)-এর আত্মত্যাগ ও হজরত হাজেরার (আ.) উদাহরণ অমর হয়ে আছে।
এই মহাযাত্রার অন্যতম কঠিন দিক ছিল—গ্রীষ্মের তীব্র উত্তাপ। ৪৫ থেকে ৫০ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করা রোদ্দুরে আরাফার ময়দানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকা, কাঁধে ব্যাগ নিয়ে মিনার তাঁবুতে যাওয়া, মুজদালিফার খোলা আকাশের নিচে রাত কাটানো—এই সব ছিল এক চরম আত্মত্যাগের অনুশীলন। বিশেষত, বয়স্ক, অসুস্থ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য এই তাপমাত্রা অনেক সময় প্রাণসংকটের কারণ হয়ে দাঁড়াত।
এই পটভূমিতেই এসেছে এক আশার আলো। সউদি আরবের জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্র সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে, ২০২৫ সালের পর পরবর্তী ২৫ বছর গ্রীষ্মে আর হজ পড়বে না। কারণ, ইসলামি হিজরি ক্যালেন্ডার প্রতি বছর প্রায় ১১ দিন করে এগিয়ে যায় গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের তুলনায়। এই সূক্ষ্ম কিন্তু নিয়মিত পরিবর্তনের ফলে হজ ক্রমে গ্রীষ্ম থেকে সরে যাবে ঠান্ডা ও সহনীয় ঋতুর দিকে।
সউদি আরবের জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্র -এর মুখপাত্র হুসেইন আল কাহতানি জানান, ২০২৬ সাল থেকে হজ পড়বে বসন্তকালে, অর্থাৎ ফাল্গুন-চৈত্র বা মার্চ-মে মাসের দিকে। এই অবস্থান থাকবে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত। এরপর ২০৩৪ থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে হজ হবে শীতকালে—যখন মক্কার রাতগুলো ঠান্ডা, বাতাস আরামদায়ক, আর সূর্যটা অনেকটা কোমল হয়ে ওঠে। তারপর ২০৪২ থেকে ২০৪৯ সাল পর্যন্ত হজ পড়বে শরতে। ২০৫০ সালে আবার হজ ফিরে আসবে গ্রীষ্মে, ঠিক আগস্ট মাসে।
এই আবহাওয়ার পরিবর্তন শুধু একটি মৌসুমি ঘটনা নয়—এ এক বড় দয়ালু সুযোগ, আল্লাহর পক্ষ থেকে যেন এক পরম অনুগ্রহ। কারণ, হজের যে মানসিক ও শারীরিক পরিশ্রম তা সকলের পক্ষেই সমানভাবে বহন করা সম্ভব নয়। দীর্ঘ পথ হাঁটা, নির্ধারিত সময়ে নির্ধারিত স্থানে পৌঁছানো, ধৈর্য ও সংযমের পরীক্ষা—এসব হজের অঙ্গ। এর সঙ্গে যখন তীব্র গরম যোগ হয়, তখন তা হয়ে ওঠে আরেকরকমের কষ্টসাধ্য সংগ্রাম। তবে এখন এই সংগ্রাম কিছুটা সহজ হতে চলেছে।
ঠান্ডা ঋতু মানে শুধু আরাম নয়, বরং প্রাণ বাঁচানোর উপায়। গরমের কারণে অতীতে অনেক বয়স্ক বা অসুস্থ হজযাত্রী হিটস্ট্রোক, ডিহাইড্রেশন ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তাই এই পরিবর্তন কেবলমাত্র স্বস্তির নয়, জীবনরক্ষার ব্যবস্থাও বটে।
সউদি আরবের পক্ষ থেকে এই দীর্ঘমেয়াদি হজ ক্যালেন্ডার প্রকাশের ফলে বিশ্বজুড়ে মুসলিম দেশগুলোর হজ পরিকল্পনা, যাত্রী পরিবহন, আবাসন ও স্বাস্থ্যসেবার প্রস্তুতি আরও সুসংগঠিতভাবে করা সম্ভব হবে। হজ তো শুধু ধর্মীয় কর্তব্য নয়, এটি এক আত্মশুদ্ধির পথে যাত্রা। যেখানে মানুষ পুরোনো পাপ, অহংকার আর মোহ ত্যাগ করে ফিরে আসেন নতুন এক সত্তায়। সেখানে একটু ঠান্ডা বাতাস, একটু সহনীয় আবহাওয়া সেই আত্মশুদ্ধির যাত্রাকে করে তুলবে আরও গভীর, আরও মানবিক।