১৬ নভেম্বর ২০২৫, রবিবার, ২৯ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্বামী-স্ত্রীর গোপনে রেকর্ড করা ফোনকল প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হতে পাবে: সুপ্রিম কোর্ট

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২৫, সোমবার
  • / 217

পুবের কলম, নয়াদিল্লি: স্বামী-স্ত্রীর গোপনে রেকর্ড করা ফোনালাপকে প্রমাণ হিসেবে মান্যতা দিল সুপ্রিম কোর্ট। এদিন একটি বিবাহবিচ্ছেদের মামলায় সুপ্রিম কোর্ট এক গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে। বিচারপতি বিভি নাগারত্ন এবং বিচারপতি সতীশ চন্দ্র শর্মার বেঞ্চ সোমবার পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের একটি রায় খারিজ করে জানিয়ে দেয় গোপনে রেকর্ড করা ফোনালাপ প্রমাণ হিসেবে গ্রাহ্য হতে পারে।

ভাটিন্ডার একটি পারিবারিক আদালতে স্বামী তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে মানসিক অত্যাচারের অভিযোগ তুলে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করেছিলেন। তাঁর অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে আদালতে একটি সিডি জমা দেন। সেই সিডিতে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপের রেকর্ড ছিল। ওই সিডিটি পারিবারিক আদালত প্রমাণ হিসেবে গ্রহণও করেছিল।

আরও পড়ুন: Supreme Court on VC Appointment: ১২ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগে সায় ললিত কমিটির

কিন্তু পরে স্ত্রী পারিবারিক আদালতের এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। হাইকোর্টে ওই মহিলা জানান, এই রেকর্ডিংগুলো তাঁর সম্মতি ছাড়াই করা হয়েছিল এবং তা তাঁর মৌলিক অধিকার ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘন করেছে। হাইকোর্ট ওই মহিলার আবেদন গ্রহণ করে এবং পারিবারিক আদালতের আদেশ বাতিল করে। হাইকোর্ট আরও বলে, এই ধরনের রেকর্ডিং আদালতে গ্রহণ করার মতো উপযুক্ত নয়।

আরও পড়ুন: Pendency in Supreme Court সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে

এদিন এই মামলার শুনানি চলাকালীন বিচারপতি বিভি নাগারত্ন এবং বিচারপতি সতীশ চন্দ্র শর্মার বেঞ্চ বলে, ‘এই মামলার ক্ষেত্রে আদালতে যুক্তি দেওয়া হয়েছিল যে এই ধরনের প্রমাণ গ্রহণ করা হলে তা পারিবারিক শান্তি এবং বৈবাহিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে। এবং স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নজরদারি চালানোকে উৎসাহিত করবে। এমন পরিস্থিতিতে সাক্ষ্য আইনের ১২২ ধারার মূল উদ্দেশ্য লঙ্ঘিত হয়।’ তবে দুই বিচারপতির বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, আমরা মনে করি না যে এই ধরনের যুক্তি বৈধ। যদি বৈবাহিক সম্পর্ক এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে স্বামী বা স্ত্রী একে অপরের উপর নজরদারি চালাচ্ছে, তাহলে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, সম্পর্কটি ভাঙনের মুখে এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার অভাব রয়েছে।’

আরও পড়ুন: গাফিলতি দেখলে যত বড় পদেই থাকুন রেহাই নেই : সুপ্রিম কোর্ট

এভিডেন্স অ্যাক্টের ধারা ১২২ অনুযায়ী স্বামী ও স্ত্রীর গোপন কথোপকথন প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। তবে এই গোপনীয়তার অধিকার ততক্ষণ কার্যকর থাকে যতক্ষণ সম্পর্ক স্বাভাবিক থাকে। সত্য উদঘাটনে এই ধরনের রেকর্ডিং যদি সাহায্য করে, তা হলে তা বিচার ব্যবস্থার স্বার্থেই প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত।

এই রায় নিয়ে আইনি মহলে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। অনেকেই বলছেন যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। আগামীদিনে বিবাহ বিচ্ছেদ মামলায় প্রযুক্তিনির্ভর তথ্যকে আইনি স্বীকৃতি দেবে। তেমনই অনেকেই বলছেন, এই রায় যেকোনও সম্পর্কে নজরদারির প্রবণতা বাড়াবে।

প্রতিবেদক

ইমামা খাতুন

২০২২ সাল থেকে সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে রিপোর্টার হিসেবে হাতেখড়ি। ২০২২ সালের শেষান্তে পুবের কলম-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ইমামার ভাষ্যে, The First Law of Journalism: to confirm existing prejudice, rather than contradict it.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

স্বামী-স্ত্রীর গোপনে রেকর্ড করা ফোনকল প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হতে পাবে: সুপ্রিম কোর্ট

আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২৫, সোমবার

পুবের কলম, নয়াদিল্লি: স্বামী-স্ত্রীর গোপনে রেকর্ড করা ফোনালাপকে প্রমাণ হিসেবে মান্যতা দিল সুপ্রিম কোর্ট। এদিন একটি বিবাহবিচ্ছেদের মামলায় সুপ্রিম কোর্ট এক গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে। বিচারপতি বিভি নাগারত্ন এবং বিচারপতি সতীশ চন্দ্র শর্মার বেঞ্চ সোমবার পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের একটি রায় খারিজ করে জানিয়ে দেয় গোপনে রেকর্ড করা ফোনালাপ প্রমাণ হিসেবে গ্রাহ্য হতে পারে।

ভাটিন্ডার একটি পারিবারিক আদালতে স্বামী তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে মানসিক অত্যাচারের অভিযোগ তুলে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করেছিলেন। তাঁর অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে আদালতে একটি সিডি জমা দেন। সেই সিডিতে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপের রেকর্ড ছিল। ওই সিডিটি পারিবারিক আদালত প্রমাণ হিসেবে গ্রহণও করেছিল।

আরও পড়ুন: Supreme Court on VC Appointment: ১২ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগে সায় ললিত কমিটির

কিন্তু পরে স্ত্রী পারিবারিক আদালতের এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। হাইকোর্টে ওই মহিলা জানান, এই রেকর্ডিংগুলো তাঁর সম্মতি ছাড়াই করা হয়েছিল এবং তা তাঁর মৌলিক অধিকার ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘন করেছে। হাইকোর্ট ওই মহিলার আবেদন গ্রহণ করে এবং পারিবারিক আদালতের আদেশ বাতিল করে। হাইকোর্ট আরও বলে, এই ধরনের রেকর্ডিং আদালতে গ্রহণ করার মতো উপযুক্ত নয়।

আরও পড়ুন: Pendency in Supreme Court সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে

এদিন এই মামলার শুনানি চলাকালীন বিচারপতি বিভি নাগারত্ন এবং বিচারপতি সতীশ চন্দ্র শর্মার বেঞ্চ বলে, ‘এই মামলার ক্ষেত্রে আদালতে যুক্তি দেওয়া হয়েছিল যে এই ধরনের প্রমাণ গ্রহণ করা হলে তা পারিবারিক শান্তি এবং বৈবাহিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে। এবং স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নজরদারি চালানোকে উৎসাহিত করবে। এমন পরিস্থিতিতে সাক্ষ্য আইনের ১২২ ধারার মূল উদ্দেশ্য লঙ্ঘিত হয়।’ তবে দুই বিচারপতির বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, আমরা মনে করি না যে এই ধরনের যুক্তি বৈধ। যদি বৈবাহিক সম্পর্ক এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে স্বামী বা স্ত্রী একে অপরের উপর নজরদারি চালাচ্ছে, তাহলে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, সম্পর্কটি ভাঙনের মুখে এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার অভাব রয়েছে।’

আরও পড়ুন: গাফিলতি দেখলে যত বড় পদেই থাকুন রেহাই নেই : সুপ্রিম কোর্ট

এভিডেন্স অ্যাক্টের ধারা ১২২ অনুযায়ী স্বামী ও স্ত্রীর গোপন কথোপকথন প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। তবে এই গোপনীয়তার অধিকার ততক্ষণ কার্যকর থাকে যতক্ষণ সম্পর্ক স্বাভাবিক থাকে। সত্য উদঘাটনে এই ধরনের রেকর্ডিং যদি সাহায্য করে, তা হলে তা বিচার ব্যবস্থার স্বার্থেই প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত।

এই রায় নিয়ে আইনি মহলে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। অনেকেই বলছেন যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। আগামীদিনে বিবাহ বিচ্ছেদ মামলায় প্রযুক্তিনির্ভর তথ্যকে আইনি স্বীকৃতি দেবে। তেমনই অনেকেই বলছেন, এই রায় যেকোনও সম্পর্কে নজরদারির প্রবণতা বাড়াবে।