‘কাউকে তো মুখ খুলতেই হবে’ ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’, নিয়ে নিজের মন্তব্যে অনড় লাপিড

- আপডেট : ১ ডিসেম্বর ২০২২, বৃহস্পতিবার
- / 9
পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ মুক্তির পর থেকেই বিতর্ক শুরু হয়। অনেকেই অভিযোগ করেছিলেন, ছবিটি গেরুয়া শিবিরকে রাজনৈতিক ফায়দা দিতে ও মুসলিম বিদ্বেষ বাড়াতে তৈরি করা হয়েছে। ফিল্মে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের উপর অত্যাচার দেখানো হলেও কাশ্মীরি মুসলিমদের দূরাবস্থা নিয়ে একটা কথাও বলা নেই। কাশ্মীরি মুসলিমদের যেভাবে ভিন্রাজ্যে জেলে পচতে হচ্ছে, উপত্যকায় কাশ্মীরি যুবকদের উপর মিলিটারিদের নির্যাতন সেসব কিছুই দেখানো হয়নি ছবিতে।
শুধুমাত্র একপেশেভাবে ছবিটি নির্মাণ করা হয়েছে, যাতে মুসলিম বিদ্বেষ আরও ছড়িয়ে দেওয়া যায়। সেই অভিযোগেরই প্রতিধ্বনি শোনা গিয়েছিল ইসরায়েলি চলচ্চিত্র নির্মাতা নাদাভ লাপিডের মুখে। তা নিয়েও তাঁকেও বিস্তর আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে। তারপরও অবশ্য নিজের অবস্থানে অনড় রয়েছেন লাপিড।
স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ‘কাশ্মীর ফাইলস’ নিয়ে যা মন্তব্য তিনি করেছেন তা থেকে পিছিয়ে আসছেন না। ইসরায়েলি নিউজ ওয়েবসাইট ‘ওয়াইনেট’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লাপিড সাফ জানিয়েছেন, যে দেশগুলিতে সত্য বলার ক্ষমতা হারিয়ে যাচ্ছে, সেখানে কাউকে না কাউকে তো মুখ খুলতেই হবে।’
নিজের আগের বক্তব্যের সমর্থনে লাপিড আরও বলেন, যখন তিনি ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ দেখেছিলেন, তিনি অবাক হয়েছিলেন। এটা দেখে অবাক হয়েছিলেন যে, কি নিখুঁতভাবে ছবিটি সরকারী এজেন্ডাগুলি অনুসরণ করেছে। সাক্ষাৎকারে তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন, এই ধরনের মন্তব্য করা মোটেই সহজ ছিল না।
এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি জানতাম যে এই ছবিটি এমন একটি ঘটনার উপর ভিত্তি করে তৈরি, যা দেশের সাথে সম্পর্কিত। এত কিছুর পরও সবার সামনে সত্যিটা বলা সহজ ছিল না, কারণ আমি অতিথি ছিলাম। সেখানে উপস্থিত সবাই আমার সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করছিলেন।
এমতাবস্থায় তাঁদের সামনে আমি যখন এই ধরনের কথা বলতে যাচ্ছিলাম, তখন আমার মনে একটা অস্থিরতা কাজ করছিল। আমি জানতাম না এর পরিণতি কি হবে। তাই ভয়ে আমার কথাগুলো বলেছিলাম। যখন আমি এই ছবিটি দেখেছিলাম, আমি এর সঙ্গে ইসরায়েলের তুলনা করতে শুরু করি। যদিও, সেখানে এরকম কিছু ঘটে না, তবে এটি ঘটতে পারে। সেজন্যই এর বিরুদ্ধে কথা বলা প্রয়োজন মনে করেছি।’
তিনি আরও বলেন, আগামী বছর থেকে ইসরায়েলেও এই ধরনের ছবি তৈরি হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ সম্পর্কে আগের মন্তব্যকে সমর্থন করে তিনি বলেন, ভারতের সব থেকে বড় চলচ্চিত্র উৎসব ছিল। সরকারি উৎসব ছিল। এটি এমন একটি ফিল্ম যা ভারত সরকার আসলে তৈরি না করলেও অন্যায্যভাবে বাজারে নামিয়ে দিয়েছে। এটি মূলত কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত সরকার যে নীতি নিয়েছে তাকে মান্যতা দিয়েছে এবং এই ছবিতে ফ্যাসিবাদী বৈশিষ্ট্য রয়েছে।’
আইএফএফআই-এর আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতা বিভাগের জুরি চেয়ারম্যান ছিলেন লাপিড। উৎসবের শেষ দিনে তিনি ‘ কাশ্মীর ফাইলস’, এর তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ১৫টি ফিল্ম ছিল। তার মধ্যে ১৪টির সিনেমাটিক গুণাবলি অটুট ছিল। যা প্রাণবন্ত আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কিন্তু, ১৫তম ফিল্ম ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’, দেখে আমরা বিরক্ত ও হতবাক হয়েছি।
এটি ছিল একটি অশ্লীল ও প্রচারণামূলক সিনেমা। এমন একটি মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসবে এই ধরনের শৈল্পিক প্রতিযোগিতামূলক বিভাগের জন্য এই ফিল্ম (কাশ্মীর ফাইলস) একেবারে অনুপযুক্ত।’ তাঁর এই মন্তব্যর পরই দেশজুড়ে আলোড়ন পড়ে যায়।
অনেকেই কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর-সহ মোদি সরকারের ঘনিষ্ঠদের সামনে (চলচ্চিত্র উৎসবে তাঁরাও উপস্থিত ছিলেন) এই ধরনের মন্তব্য করার জন্য লাপিডের প্রশংসা করেছেন। যদিও ভারতে নিযুক্ত ইজরায়েলের রাষ্ট্রদূত নাওর গিলন লাপিডের সমালোচনা করে বলেন, ‘অনুষ্ঠানে ভারতীয়দের তরফে আপনাকে যে সম্মান ও উষ্ণ আতিথেয়তা দেখানো হয়েছে তার প্রতি আপনি অন্যায় করেছেন।’