০১ অক্টোবর ২০২৫, বুধবার, ১৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সাম্প্রদায়িক হিংসার পর কড়া পুলিশ, মেরুকরণের তাশ বিজেপির

কিবরিয়া আনসারি
  • আপডেট : ৫ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার
  • / 169

বেঙ্গালুরু: সম্প্রীতি কর্ণাটকে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার মধ্যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনায় এবার কড়া অবস্থান নিল সিদ্দারামাইয়ার পুলিশ। কংগ্রেস শাসিত রাজ্যের দক্ষিণ কন্নড় জেলা পুলিশ ওই অঞ্চলে বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। দাগী অপরাধী, সমাজবিরোধী, অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে ৩৬ জন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে তাদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।

কর্ণাটক পুলিশ সূত্রে খবর, আইনের ৫৫ নম্বর ধারায় বান্টওয়াল, ভিট্টাল, পুত্তুর টাউন এবং গ্রামীণ, কাদাবা, সুলিয়া, উপ্পিনাঙ্গাদি, পুঞ্জলকাট্টে এবং বেলথাঙ্গাদি সহ বিভিন্ন থানা সীমানার সাথে যুক্ত ৩৬ জনকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান শুরু হয়েছে। এই তালিকায় জেলার বিভিন্ন প্রান্তের ২২ থেকে ৫৪ বছর বয়সী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে হামলা, ভয় দেখানো, তোলাবাজি এবং গ্যাং সম্পর্কিত ক্রিয়াকলাপে জড়িত থাকার মতো অপরাধের জন্য মামলা করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: কর্ণাটকে সেনার পোশাকে দুঃসাহসী ডাকাতি, ৫৮ কেজি সোনা লুট

প্রসঙ্গত, পাকিস্তান জিন্দাবাদ স্লোগান দেওয়ার মিথ্যা অভিযোগ এনে কেরলের বাসিন্দা আশরাফ নামে এক মানসিক ভারসাম্যহীন মুসলিম ব্যক্তিকে হিন্দুত্ববাদীরা হত্যা করে। এই ঘটনার কিছুদিন পর বজরং দলের মতো হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ৪২ বছর বয়সী হিন্দু ডানপন্থী ব্যক্তিত্ব সুহাস শেট্টিকে খুন করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের পর উপকূলীয় কর্ণাটকে রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। এই ঘটনার পর থেকে কড়া পদক্ষেপ নিতে শুরু করে পুলিশ।

আরও পড়ুন: ঘৃণা ভাষণ রুখতে আইনের ভাবনা সিদ্দারামাইয়ার

সূত্রের খবর, এই তালিকায় হিন্দু ও মুসলিম উভয় নামই থাকলেও বিজেপি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে মেরুকরণের তাশ খেলা শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ প্রতিমন্ত্রী শোভা কারান্দলাজে পুলিশ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বিচারপতি এন কে সুধীন্দ্র রাওকে চিঠি লিখেছেন।

আরও পড়ুন: জলমগ্ন মুম্বই-বিপর্যস্ত জনজীবন, রেড অ্যালার্ট জারি কর্ণাটকে

তিনি দাবি করেছেন যে হিন্দু নেতাদের অন্যায়ভাবে টার্গেট করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর অভিযোগ, “কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার রাজনৈতিক চাপের মুখে পরিকল্পিতভাবে হিন্দুত্বপন্থী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি, সমাজকর্মী, ব্যবসায়ী এবং এমনকি সাধারণ আইন মেনে চলা সাধারণ নাগরিকদেরও টার্গেট করছে এবং হয়রানি করা হচ্ছে।” তবে এই তালিকায় মুসলিম সম্প্রদায়ের ১৫ জন এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ২১ জনের নাম রয়েছে।

কারান্দলাজে বলেন, পরিস্থিতি বিশেষভাবে উদ্বেগজনক। পুলিশ কর্মকর্তারা গভীর রাতে লোকজনের বাড়িতে যাচ্ছে এবং তাদের বাড়ির ছবি তুলে নিয়ে আসছে। কোনো আইনি পরোয়ানা বা ন্যায়সঙ্গত কারণ ছাড়াই জিপিএস স্থানাঙ্ক রেকর্ড করছে। এই পদক্ষেপগুলি গোপনীয়তার অধিকার, ২১ অনুচ্ছেদের অধীনে জীবনের অধিকার এবং অনুচ্ছেদ ১৪ এর অধীনে সাম্যের অধিকার সহ সংবিধানে সুরক্ষিত মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন করছে।

সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার জেরে দক্ষিণ কন্নড় ও উদুপি জেলার পুলিশ সুপারদের পাশাপাশি কর্ণাটক সরকার ম্যাঙ্গালুরু শহরের পুলিশ কমিশনারকে (এসপি) বদলি করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ম্যাঙ্গালুরুতে পুলিশ নেতৃত্বের সাম্প্রতিক পরিবর্তনের পরেই এই ভয় দেখানোর প্যাটার্ন শুরু হয়েছে।”

এবিষয়ে দক্ষিণ কন্নড়ের পুলিশ সুপার অরুণ কে বলেন, “আমরা এই অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখতে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। এক্সটার্নমেন্ট হল একটি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা যা দাগী অপরাধীদের যোগসূত্র ভাঙার লক্ষ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তারা যাতে সমাজের পুণরায় হিংসা ছড়াতে না পারে।”

প্রতিবেদক

কিবরিয়া আনসারি

Kibria obtained a master's degree in journalism from Aliah University. He has been in journalism since 2018, gaining work experience in multiple organizations. Focused and sincere about his work, Kibria is currently employed at the desk of Purber Kalom.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

সাম্প্রদায়িক হিংসার পর কড়া পুলিশ, মেরুকরণের তাশ বিজেপির

আপডেট : ৫ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার

বেঙ্গালুরু: সম্প্রীতি কর্ণাটকে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার মধ্যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনায় এবার কড়া অবস্থান নিল সিদ্দারামাইয়ার পুলিশ। কংগ্রেস শাসিত রাজ্যের দক্ষিণ কন্নড় জেলা পুলিশ ওই অঞ্চলে বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। দাগী অপরাধী, সমাজবিরোধী, অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে ৩৬ জন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে তাদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।

কর্ণাটক পুলিশ সূত্রে খবর, আইনের ৫৫ নম্বর ধারায় বান্টওয়াল, ভিট্টাল, পুত্তুর টাউন এবং গ্রামীণ, কাদাবা, সুলিয়া, উপ্পিনাঙ্গাদি, পুঞ্জলকাট্টে এবং বেলথাঙ্গাদি সহ বিভিন্ন থানা সীমানার সাথে যুক্ত ৩৬ জনকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান শুরু হয়েছে। এই তালিকায় জেলার বিভিন্ন প্রান্তের ২২ থেকে ৫৪ বছর বয়সী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে হামলা, ভয় দেখানো, তোলাবাজি এবং গ্যাং সম্পর্কিত ক্রিয়াকলাপে জড়িত থাকার মতো অপরাধের জন্য মামলা করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: কর্ণাটকে সেনার পোশাকে দুঃসাহসী ডাকাতি, ৫৮ কেজি সোনা লুট

প্রসঙ্গত, পাকিস্তান জিন্দাবাদ স্লোগান দেওয়ার মিথ্যা অভিযোগ এনে কেরলের বাসিন্দা আশরাফ নামে এক মানসিক ভারসাম্যহীন মুসলিম ব্যক্তিকে হিন্দুত্ববাদীরা হত্যা করে। এই ঘটনার কিছুদিন পর বজরং দলের মতো হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ৪২ বছর বয়সী হিন্দু ডানপন্থী ব্যক্তিত্ব সুহাস শেট্টিকে খুন করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের পর উপকূলীয় কর্ণাটকে রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। এই ঘটনার পর থেকে কড়া পদক্ষেপ নিতে শুরু করে পুলিশ।

আরও পড়ুন: ঘৃণা ভাষণ রুখতে আইনের ভাবনা সিদ্দারামাইয়ার

সূত্রের খবর, এই তালিকায় হিন্দু ও মুসলিম উভয় নামই থাকলেও বিজেপি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে মেরুকরণের তাশ খেলা শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ প্রতিমন্ত্রী শোভা কারান্দলাজে পুলিশ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বিচারপতি এন কে সুধীন্দ্র রাওকে চিঠি লিখেছেন।

আরও পড়ুন: জলমগ্ন মুম্বই-বিপর্যস্ত জনজীবন, রেড অ্যালার্ট জারি কর্ণাটকে

তিনি দাবি করেছেন যে হিন্দু নেতাদের অন্যায়ভাবে টার্গেট করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর অভিযোগ, “কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার রাজনৈতিক চাপের মুখে পরিকল্পিতভাবে হিন্দুত্বপন্থী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি, সমাজকর্মী, ব্যবসায়ী এবং এমনকি সাধারণ আইন মেনে চলা সাধারণ নাগরিকদেরও টার্গেট করছে এবং হয়রানি করা হচ্ছে।” তবে এই তালিকায় মুসলিম সম্প্রদায়ের ১৫ জন এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ২১ জনের নাম রয়েছে।

কারান্দলাজে বলেন, পরিস্থিতি বিশেষভাবে উদ্বেগজনক। পুলিশ কর্মকর্তারা গভীর রাতে লোকজনের বাড়িতে যাচ্ছে এবং তাদের বাড়ির ছবি তুলে নিয়ে আসছে। কোনো আইনি পরোয়ানা বা ন্যায়সঙ্গত কারণ ছাড়াই জিপিএস স্থানাঙ্ক রেকর্ড করছে। এই পদক্ষেপগুলি গোপনীয়তার অধিকার, ২১ অনুচ্ছেদের অধীনে জীবনের অধিকার এবং অনুচ্ছেদ ১৪ এর অধীনে সাম্যের অধিকার সহ সংবিধানে সুরক্ষিত মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন করছে।

সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার জেরে দক্ষিণ কন্নড় ও উদুপি জেলার পুলিশ সুপারদের পাশাপাশি কর্ণাটক সরকার ম্যাঙ্গালুরু শহরের পুলিশ কমিশনারকে (এসপি) বদলি করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ম্যাঙ্গালুরুতে পুলিশ নেতৃত্বের সাম্প্রতিক পরিবর্তনের পরেই এই ভয় দেখানোর প্যাটার্ন শুরু হয়েছে।”

এবিষয়ে দক্ষিণ কন্নড়ের পুলিশ সুপার অরুণ কে বলেন, “আমরা এই অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখতে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। এক্সটার্নমেন্ট হল একটি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা যা দাগী অপরাধীদের যোগসূত্র ভাঙার লক্ষ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তারা যাতে সমাজের পুণরায় হিংসা ছড়াতে না পারে।”