ওয়াকফ কবজা করতে চায় সরকার, আইন বাতিলের দাবিতে জোরালো সওয়াল সুপ্রিম কোর্টে

- আপডেট : ২০ মে ২০২৫, মঙ্গলবার
- / 327
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: সুপ্রিম কোর্টে আজ মঙ্গলবার ছিল দেশের গুরুত্বপূর্ণ ওয়াকফ মামলার শুনানি। প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই এবং বিচারপতি এজি মসিহ-র বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয়। আবেদনকারীদের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র মোস্ট আইনজীবী কপিল সিব্বাল, অভিষেক মনু সিংভি, হুজেফা আহমদি, সিইউ সিং এবং রাজীব ধাওয়ান। শুনানির শুরুতে সরকার পক্ষের সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা আবেদন জানান, আগের শুনানিতে যে তিনটি বিষয় নিয়ে আপত্তি উঠেছিল, শুধু সেই বিষয়ের উপর আলোচনা চলুক। কিন্তু বিরোধী পক্ষের আইনজীবীরা সকলেই জানান, টুকরো টুকরো আলোচনা সম্ভব নয়, সমগ্র ওয়াকফ সংশোধনী আইনের উপর আলোচনা করতে হবে। কেন-না এই আইনটি সংবিধান বিরোধী।
শুনানির শুরুতে কপিল সিব্বাল স্পষ্ট করে দিয়েছেন ওয়াকফ সম্পত্তি ধীরে ধীরে সরকার কবজা করে নেবে, একমাত্র সেই উদ্দেশ্যেই এই আইন সংশোধন করা হয়েছে। আইনের বিভিন্ন ধারা কোথায় কোথায় সংবিধান বিরোধী সেসব একের পর এক উল্লেখ করেন তিনি। সিব্বাল বলেন, শুধুমাত্র মুসলিমদের সংবিধান প্রদত্ত অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে না, এই আইন সংবিধানে প্রদত্ত অন্যান্য মৌলিক অধিকার হরণ করবে এবং সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার উপর বড় আঘাত আসবে। এই আইনের বলে সারা দেশের যতগুলি প্রাচীন ধর্মস্থান আছে মুসলিমদের সেসব কেড়ে নেওয়া হবে। তার জন্য ঘুঁটি সাজানো হয়েছে। রেকর্ড নেই, রেজিস্ট্রেশন নেই, তাই সম্পত্তি কেড়ে নেওয়া হবে। বিরোধ আছে তাই রেজিস্ট্রি হবে না। প্রশাসনের নির্দেশে নামায ও ধর্মীয় অনুশীলন বন্ধ হবে। কোনও আদালতেও যেতে পারবে না। এমনকী মোতাওয়াল্লীদের জেল জরিমানার সাজারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। কপিল সিব্বাল বলেন, যে সম্পত্তি একবার ওয়াকফ হয়ে যায় সেটি বরাবরই ওয়াকফ থাকে। কোনও মানুষ, মোতাওয়াল্লী বোর্ড বা সরকার তার চরিত্র বদল করে দিতে পারে না।
হুজেফা আহমদি বলেন, এই আইনে আছে ওয়াকফকারীকে পাঁচ বছরের অনুশীলনকারী মুসলিম হতে হবে। কিন্তু অন্যান্য ধর্মে মানুষ যদি সম্পত্তি দান করতে চান, তাহলে তাদের সম্পর্কে জানা হয় না তারা পাঁচ বছর ধরে ধর্মপালন করছেন কি না। তাছাড়া কে পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে রোযা রাখে, মদ খায় না— এ সব কারা বিচার করবে? তিনি বলেন, ধর্মস্থান আইন ১৯৯১-এর উপর ছড়ি ঘোরাবে এই ওয়াকফ আইন। পুরোনো কোনও ওয়াকফ সম্পত্তি আর টিকে থাকবে না। এই আইন প্রয়োগ হলে রাতারাতি সব ওয়াকফ সম্পত্তি অদৃশ্য হয়ে যাবে।
অভিষেক মনু সিংভি বলেন, মনুমেন্ট আইন ওয়াকফ সম্পত্তির উপর চাপিয়ে দিয়ে ওয়াকফ তকমা কেড়ে নেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। এএসআই হেরিটেজ বোর্ড লাগিয়ে দিলেই ওয়াকফ সাইন বোর্ড সরে যাবে। বোর্ডের হাত থেকে সেই সম্পত্তি সরকারের হাতে চলে আসবে। তিনি বলেন, সরকার ২০১৩ থেকে ওয়াকফ সম্পত্তি ডিজিটাল শুরু করেছে, আর কেন্দ্রের পক্ষ থেকে কোর্টে বলা হচ্ছে ওয়াকফ সম্পত্তির সংখ্যা নাকি হু-হু করে বেড়ে চলেছে। তিনি বলেন, এই আইন তৈরির আগে সংসদে বিশদ আলোচনা হয়নি এমনকী জেপিসিতেও বিশদ আলোচনা হয়নি। সারা দেশের ওয়াকফ বোর্ডের সব তথ্য না নিয়েই আইন তৈরি করে দেওয়া হয়েছে মূল্যবান ওয়াকফ সম্পত্তি কেড়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যেই।
আইনজীবী রাজীব ধাওয়ান বলেন, সংবিধানের ২৯ ধারা অধিকার দিয়েছে আমাদের ধর্মীয় সংßৃñতি সংরক্ষণের। সেটা কেড়ে নিতে দেবেন না। আমরা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী। তিনি বলেন, ব্রিটিশরা এই সম্পত্তির সংজ্ঞা বদল করেনি। এখন কেন প্রয়োজন হয়ে পড়ল ওয়াকফ সম্পত্তির চরিত্র বদল করার? একমাত্র ইসলাম ধর্মেই এভাবে ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবহার চলে আসছে অনন্তকাল ধরে।
উল্লেখ্য, সংসদে সদ্য অনুমোদিত ওয়াকফ সংশোধনী আইন ২০২৫-এর সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে আইনি লড়াই শুরু হয়েছে। বেশ কয়েকটি রাজ্য সরকার ও একটি অমুসলিম সংগঠনও এই আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্টে তেমনি বিজেপি শাসিত ৬টি রাজ্য আইনের স্বপক্ষে লড়াই করতে ছুটে এসেছে নয়াদিল্লিতে। আগের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার বেঞ্চে এই মামলা ছিল। তাঁর অবসরের পর নতুন প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই-এর বেঞ্চে চলছে এই মামলা। এদিন শুনানি শেষ হয় বিকেল ৪টেয়। আবার বুধবার শুনানি রয়েছে। আবেদনকারীদের দাবি সম্পূর্ণ বাতিল হোক এই কালাকানুন। আর সরকারপক্ষ চাইছে কয়েকটি ধারা নিয়েই শুধু আলোচনা হোক। কয়েকটি ধারার উপর স্থগিতাদেশ আসবে নাকি সম্পূর্ণ আইনটি বাতিল হয়ে যাবে, তবে কেন্দ্রীয় সরকার কোর্টে হলফনামা দিয়েছে তারা কোনও ওয়াকফ সম্পত্তির ওয়াকফ তকমা সরাবে না এবং বোর্ডে কোনও অমুসলিম সদস্য নিয়োগ হবে না। সেই সঙ্গে ওয়াকফ সম্পত্তিকে সরকারি জমি হিসেবে আপাতত দাবি করা যাবে না। এই তিনটি বিষয়ে সাময়িক স্থগিতাদেশ বহাল রয়েছে সুপ্রিম কোর্টে।