১৩ অক্টোবর ২০২৫, সোমবার, ২৬ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে ইডি কেন্দ্রীয় সংস্থাকে সুপ্রিম ভর্ৎসনা

চামেলি দাস
  • আপডেট : ২৩ মে ২০২৫, শুক্রবার
  • / 258

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: তৃণমূল কংগ্রেস তথা খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার ইডি, সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ‘অতিসক্রিয়তা’র অভিযোগ তুলেছিলেন। সেই অভিযোগই যেন মান্যতা পেল। তামিলনাড়ু সরকারের করা এক মামলায় যেভাবে ইডিকে তীব্র ভর্ৎসনা করেছে শীর্ষ আদালত তাতে রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, মমতা-স্ট্যালিনরা এতদিন ধরে যে অভিযোগ করে আসছিলেন তা যে ভিত্তিহীন নয়, তা স্পষ্ট হল।

কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তীব্র সমালোচনা করে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের বেঞ্চের মন্তব্য, ‘‘ইডি সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ইডি তার আইনসংগত এক্তিয়ারের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। একটি সরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা মানে সংবিধান এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর তোয়াক্কা না করা। ইডির এই ধরনের আচরণ দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে আঘাত করছে।’’

আরও পড়ুন: দিল্লিতে ED অফিসে হাজিরা দিলেন মিমি চক্রবর্তী

তামিলনাড়ু স্টেট মার্কেটিং কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। এই নিয়ে মামলা হলে মাদ্রাজ হাইকোর্ট তদন্তভার ইডির হাতে তুলে দেয়। সেইমতো তদন্তে নামে ইডি। ইডির দাবি, ওই সংস্থা এক হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারিতে জড়িত। সংস্থাটি বিভিন্ন ডিস্টিলারি থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে মদ সংগ্রহ করেছে, কিন্তু তার হিসেব নেই। ফলে এই আর্থিক লেনদেন কালো টাকার আওতায় পড়ে।

আরও পড়ুন: ইডির হাতে গ্রেফতার জীবনকৃষ্ণ

আর সে কারণেই তারা (ইডি) অর্থপাচার প্রতিরোধ আইন-এর অধীনে তদন্ত শুরু করে। সেইমতো সংস্থাটির একাধিক দফতরে হানা দেয় তদন্তকারী সংস্থা। হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল তামিলানাড়ু সরকার। বৃহস্পতিবার সেই মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসিহের বেঞ্চ মাদ্রাজ হাইকোর্টের নির্দেশের উপর বৃহস্পতিবার স্থগিতাদেশ দিয়েছে। অর্থাৎ, তামিলনাড়ু স্টেট মার্কেটিং কর্পোরেশন-এর বিরুদ্ধে ইডি-র তদন্ত আপাতত বন্ধ থাকবে।

আরও পড়ুন: SSC Scam Probe: কলকাতা-মুর্শিদাবাদ-বীরভূমে ইডির অভিযান

সুপ্রিম কোর্টে তামিলনাড়ু সরকার জানায়, অভিযুক্ত সংস্থার বিরুদ্ধে ৪১টি এফআইআর হয়েছে। রাজ্য সরকারের নজরদারি ও দুর্নীতি দমন শাখা তদন্ত করছে। রাজ্য স্তরে যথাযথ তদন্ত চলছে। এখন ইডি যদি এই মামলায় হস্তক্ষেপ করে, তবে তা হবে দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ।

উল্লেখ্য, মাদ্রাজ হাইকোর্ট ২৩ এপ্রিল ইডি-কে তদন্ত চালিয়ে যেতে নির্দেশ দিয়েছিল। তার বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে পিটিশন দাখিল করে তামিলনাড়ু সরকারের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, একটি রাজ্য নিয়ন্ত্রিত সংস্থা এবং তার উপর কেন্দ্রীয় সংস্থার এমন তদন্ত আইনসংগত নয়। ইডি রাজ্যের অধিকার অতিক্রম করে বেআইনি তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে।

এরপরই সুপ্রিম কোর্ট প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘এমন হলে তো আগামী দিনে যে কোনও রাজ্য সংস্থার উপর ইচ্ছেমতো কেন্দ্রীয় সংস্থা নিজের মতো করে তদন্ত চালাতে পারবে। এটা আমাদের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী। ইডি নিজের এক্তিয়ার বুঝে কাজ করুক, তা না হলে আইন ও সংবিধানের ভারসাম্য নষ্ট হবে। একটা সংস্থার বিরুদ্ধে কী করে মামলা দায়ের হতে পারে? কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হওয়া উচিত ছিল। একটা সংস্থার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা! আপনাদের ইডি সমস্ত সীমা ছাড়াচ্ছে।’’

শীর্ষ আদালতে তামিলনাড়ু সরকারের হয়ে সওয়াল করেন আইনজীবী কপিল সিব্বাল। তিনি জানান, রাজ্য সরকার ২০১৪ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ৪১টি এফআইআর দায়ের করেছে সংস্থাটির বেশ কয়েক জন আধিকারিকের বিরুদ্ধে।

এ দিকে ইডি সদ্যই তদন্তভার হাতে পেয়ে দফতরে হানা দিল। সকলের মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করল। সিব্বালের মন্তব্য, ‘এটা গোপনীয়তার বিষয়।’ এরপরেই অভিযুক্ত সংস্থার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ রয়েছে, তার কী কী প্রমাণ ইডির হাতে এসেছে, তা নিয়ে ইডি’কে হলফনামা জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ইডির হয়ে আদালতে সওয়াল করছিলেন কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এস ভি রাজু।

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে ইডি কেন্দ্রীয় সংস্থাকে সুপ্রিম ভর্ৎসনা

আপডেট : ২৩ মে ২০২৫, শুক্রবার

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: তৃণমূল কংগ্রেস তথা খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার ইডি, সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ‘অতিসক্রিয়তা’র অভিযোগ তুলেছিলেন। সেই অভিযোগই যেন মান্যতা পেল। তামিলনাড়ু সরকারের করা এক মামলায় যেভাবে ইডিকে তীব্র ভর্ৎসনা করেছে শীর্ষ আদালত তাতে রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, মমতা-স্ট্যালিনরা এতদিন ধরে যে অভিযোগ করে আসছিলেন তা যে ভিত্তিহীন নয়, তা স্পষ্ট হল।

কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তীব্র সমালোচনা করে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের বেঞ্চের মন্তব্য, ‘‘ইডি সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ইডি তার আইনসংগত এক্তিয়ারের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। একটি সরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা মানে সংবিধান এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর তোয়াক্কা না করা। ইডির এই ধরনের আচরণ দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে আঘাত করছে।’’

আরও পড়ুন: দিল্লিতে ED অফিসে হাজিরা দিলেন মিমি চক্রবর্তী

তামিলনাড়ু স্টেট মার্কেটিং কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। এই নিয়ে মামলা হলে মাদ্রাজ হাইকোর্ট তদন্তভার ইডির হাতে তুলে দেয়। সেইমতো তদন্তে নামে ইডি। ইডির দাবি, ওই সংস্থা এক হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারিতে জড়িত। সংস্থাটি বিভিন্ন ডিস্টিলারি থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে মদ সংগ্রহ করেছে, কিন্তু তার হিসেব নেই। ফলে এই আর্থিক লেনদেন কালো টাকার আওতায় পড়ে।

আরও পড়ুন: ইডির হাতে গ্রেফতার জীবনকৃষ্ণ

আর সে কারণেই তারা (ইডি) অর্থপাচার প্রতিরোধ আইন-এর অধীনে তদন্ত শুরু করে। সেইমতো সংস্থাটির একাধিক দফতরে হানা দেয় তদন্তকারী সংস্থা। হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল তামিলানাড়ু সরকার। বৃহস্পতিবার সেই মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসিহের বেঞ্চ মাদ্রাজ হাইকোর্টের নির্দেশের উপর বৃহস্পতিবার স্থগিতাদেশ দিয়েছে। অর্থাৎ, তামিলনাড়ু স্টেট মার্কেটিং কর্পোরেশন-এর বিরুদ্ধে ইডি-র তদন্ত আপাতত বন্ধ থাকবে।

আরও পড়ুন: SSC Scam Probe: কলকাতা-মুর্শিদাবাদ-বীরভূমে ইডির অভিযান

সুপ্রিম কোর্টে তামিলনাড়ু সরকার জানায়, অভিযুক্ত সংস্থার বিরুদ্ধে ৪১টি এফআইআর হয়েছে। রাজ্য সরকারের নজরদারি ও দুর্নীতি দমন শাখা তদন্ত করছে। রাজ্য স্তরে যথাযথ তদন্ত চলছে। এখন ইডি যদি এই মামলায় হস্তক্ষেপ করে, তবে তা হবে দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ।

উল্লেখ্য, মাদ্রাজ হাইকোর্ট ২৩ এপ্রিল ইডি-কে তদন্ত চালিয়ে যেতে নির্দেশ দিয়েছিল। তার বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে পিটিশন দাখিল করে তামিলনাড়ু সরকারের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, একটি রাজ্য নিয়ন্ত্রিত সংস্থা এবং তার উপর কেন্দ্রীয় সংস্থার এমন তদন্ত আইনসংগত নয়। ইডি রাজ্যের অধিকার অতিক্রম করে বেআইনি তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে।

এরপরই সুপ্রিম কোর্ট প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘এমন হলে তো আগামী দিনে যে কোনও রাজ্য সংস্থার উপর ইচ্ছেমতো কেন্দ্রীয় সংস্থা নিজের মতো করে তদন্ত চালাতে পারবে। এটা আমাদের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী। ইডি নিজের এক্তিয়ার বুঝে কাজ করুক, তা না হলে আইন ও সংবিধানের ভারসাম্য নষ্ট হবে। একটা সংস্থার বিরুদ্ধে কী করে মামলা দায়ের হতে পারে? কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হওয়া উচিত ছিল। একটা সংস্থার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা! আপনাদের ইডি সমস্ত সীমা ছাড়াচ্ছে।’’

শীর্ষ আদালতে তামিলনাড়ু সরকারের হয়ে সওয়াল করেন আইনজীবী কপিল সিব্বাল। তিনি জানান, রাজ্য সরকার ২০১৪ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ৪১টি এফআইআর দায়ের করেছে সংস্থাটির বেশ কয়েক জন আধিকারিকের বিরুদ্ধে।

এ দিকে ইডি সদ্যই তদন্তভার হাতে পেয়ে দফতরে হানা দিল। সকলের মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করল। সিব্বালের মন্তব্য, ‘এটা গোপনীয়তার বিষয়।’ এরপরেই অভিযুক্ত সংস্থার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ রয়েছে, তার কী কী প্রমাণ ইডির হাতে এসেছে, তা নিয়ে ইডি’কে হলফনামা জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ইডির হয়ে আদালতে সওয়াল করছিলেন কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এস ভি রাজু।