দেউচা-পাচামিতে বেসাল্ট উত্তোলনে দ্বিতীয় পর্যায়ের দরপত্র ঘোষণা রাজ্যের

- আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২৫, রবিবার
- / 74
পুবের কলম প্রতিবেদক: বীরভূমের দেউচা-পাচামি দেওয়ানগঞ্জ-হারিনসিঙ্ঘা অঞ্চলে দ্বিতীয় পর্যায়ের বেসাল্ট খনন শুরু করতে বড় পদক্ষেপ নিল পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম লিমিটেড (ডাবলিউবি-পিডিসিএল)। শনিবার সংস্থাটি নতুন একটি দরপত্র বা টেন্ডার জারি করেছে, যার মাধ্যমে একটি খনি উন্নয়ন সংস্থা নির্বাচিত হবে। এই চুক্তি হবে আয় ভাগাভাগি পদ্ধতিতে, অর্থাৎ নিগম ও নির্বাচিত সংস্থা যৌথভাবে আয়ের অংশীদার হবে।
বর্তমানে প্রায় ১২ একর জমিতে প্রথম পর্যায়ের বেসাল্ট খনন চলছে। এবার সেই কাজের পরিধি বাড়িয়ে প্রায় ৩১৪.৭৮ একর পর্যন্ত সম্প্রসারণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নির্বাচিত সংস্থাকে প্রথমে একটি পূর্ণাঙ্গ খনি উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী খনন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। পরবর্তী সময়ে প্রথম পর্যায়ের ১২ একর জমিকেও নতুন পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত করে মোট ৩২৬.৭৮ একর এলাকায় একত্রে কাজ করতে হবে। নিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম পর্যায়ের খনন কাজ শুরু হয়। এখনও পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার টন বেসাল্ট উত্তোলন হয়েছে। সরকারি নথি অনুযায়ী, রাজ্যের রাজস্ব অংশীদারিত্বের হার নির্ধারিত হয়েছে ৪৫ শতাংশ। প্রথম পর্যায়ে বেসরকারি সংস্থার অংশ ছিল প্রায় ৭১.৫ শতাংশ। দ্বিতীয় পর্যায়েও প্রায় একই কাঠামো অনুসরণ করা হবে বলে জানা গিয়েছে।
দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী নির্বাচিত সংস্থাকে পুরো ৩২৬.৭৮ একর জুড়ে ভূতাত্ত্বিক সমীক্ষা (জিওলজিক্যাল রিপোর্ট) প্রস্তুত করতে হবে এবং তার পাশাপাশি পূর্ণাঙ্গ খনি উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। সেই পরিকল্পনার ভিত্তিতে বিভিন্ন দফতর থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদন ও পরিবেশগত ছাড়পত্র সংগ্রহ করতে হবে। সমস্ত অনুমোদন সম্পন্ন হলে পূর্ণমাত্রায় খনন শুরু করা যাবে। নিগমের এক প্রবীণ আধিকারিক বলেন,ক্ষ্মবেসাল্ট খননই হচ্ছে দেউচা-পাচামি প্রকল্পের প্রথম বড় ধাপ। এর মাধ্যমেই ভবিষ্যতে মূল কয়লা খননের রাস্তা তৈরি হবে। দেউচা-পাচামি প্রকল্পকে ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকার ‘বাংলার উন্নয়নের অনুঘটক’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এখানকার খনিজ সম্পদের পরিমাণ বিশাল-প্রায় ১,২৪০ মিলিয়ন টন কয়লা এবং ২,৬০০ মিলিয়ন টন বেসাল্ট মজুত রয়েছে। এই বিপুল সম্পদ ভবিষ্যতে রাজ্যের শিল্প ও বিদ্যুৎ খাতে নতুন দিশা এনে দেবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় কয়লা দফতর এই ব্লকটি রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের হাতে তুলে দেয়। পরে ২০২২ সালের ২২ জুন সংশোধিত বরাদ্দপত্র জারি হয়। সেই বরাদ্দ অনুসারেই ধাপে ধাপে খনি উন্নয়নের কাজ এগোচ্ছে। নিগমের মতে, দ্বিতীয় পর্যায়ের এই দরপত্র শুধু রাজ্যের সবচেয়ে বড় খনি প্রকল্পের ভবিষ্যৎ রূপায়ণেই নয়, স্থানীয় কর্মসংস্থান ও পরিকাঠামো গঠনের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। এলাকায় সড়ক, বিদ্যুৎ, পানীয় জলের ব্যবস্থা, স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনের কাজও সমান্তরালে চলবে। নিগমের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ক্ষ্মআমরা চাই এই প্রকল্পটি শুধুমাত্র শিল্প নয়, স্থানীয় জীবিকা ও অর্থনীতির ক্ষেত্রেও নতুন অধ্যায়ের সূচনা করুক। দ্বিতীয় পর্যায়ে কাজ শুরু হলে এলাকার প্রায় এক হাজার মানুষের সরাসরি ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি হবে।ক্ষ্ম নতুন দরপত্র প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন হলে পশ্চিমবঙ্গে খনিজ সম্পদ আহরণ ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে এটি এক ঐতিহাসিক অধ্যায় তৈরি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।