স্কুলের প্রাইভেট শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এবার তদন্তে নামছে শিক্ষা দফতর

- আপডেট : ৩ অগাস্ট ২০২৩, বৃহস্পতিবার
- / 11
পুবের কলম প্রতিবেদক: রাজ্যের সরকারি ও সরকার পোষিত স্কুলের শিক্ষকরা প্রাইভেট টিউশন পড়াতে পারবেন না সে নিয়ম আগে থেকেই রয়েছে নির্দেমিকা। কিন্তু তারপরও দেখা যাচ্ছে নিয়মভঙ্গ করে এক শ্রেণির শিক্ষক প্রাইভেট টিউশন পড়াচ্ছেন, অথবা বিভিন্ন প্রাইভেট টিউশন ইনস্টিটিউশন অথবা কোচিং সেন্টাগুলিতে পড়াচ্ছেন। এই সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তালিকা তৈরি করেছে শিক্ষা দফতর। এবার তাঁদের বিষয়টি তদন্তের জন্য জেলায় জেলায় বিশেষ টিম কাজ করবে।
এদিকে, সরকারি শিক্ষকরা যে কোনওভাবে প্রাইভেট টিউশন করতে পারবেন না, সেই নির্দেশ আগেই দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। এবার সে কথা আরও একবার জানিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ।
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের নিয়ম ভেঙে সরকারি শিক্ষকরা টিউশন পড়ালে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে বলে আগামী ৩ মাসের মধ্যে, এমনই নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। সংশ্লিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং পর্ষদকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। না হলে হাইকোর্ট নিজেই পদক্ষেপ করবে বলে জানিয়ে দিয়েছে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।
প্রাইভেট টিউশন বন্ধে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছিল প্রাইভেট টিউটর ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। তাদের আইনজীবী এক্রামূল বাড়ি আদালতে দাবি করেন, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ রুল জারি করে সরকারি স্কুলের শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মীদের প্রাইভেট টিউশন বন্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। কিন্তু তারপরও দেখা যাচ্ছে অনেক শিক্ষক পড়ুয়াদের পরীক্ষায় নম্বর কম দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টিউশন পড়তে বাধ্য করছেন। এটা অপরাধ বলে আদালতে দাবি করেন আইনজীবী।
এ বিষয়ে পদক্ষেপ করার জন্য তিনি আদালতের কাছে আবেদন জানান। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ বিষয়টি খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন বেশ কিছু শিক্ষক। তাদের বক্তব্য, পর্ষদের নির্দেশে স্পষ্ট জানানো রয়েছে সরকারি শিক্ষকরা প্রাইভেট টিউশন করতে পারবেন না।
কর্মরত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এবার তদন্তে খোদ রাজ্য সরকার। নিয়োগ দুর্নীতি তদন্তের মাঝেই এবার রাজ্য সরকারও তদন্ত শুরু করল কর্মরত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যেই মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে বিভিন্ন জেলায় কর্মরত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্কুল শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, আইন অনুযায়ী কর্মরত শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশন করা বন্ধ। কিন্তু তারপরেও একাধিক জেলায় কর্মরত শিক্ষক শিক্ষিকারা প্রাইভেট টিউশন করছেন। একটি নির্দিষ্ট সংস্থার তরফে অভিযোগ রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতরে আসার পরই প্রাথমিকভাবে তদন্ত করেছে রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতর। আর সেক্ষেত্রেই একাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকার নাম উঠে এসেছে যাঁরা প্রাইভেট টিউশন করছেন।
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলার পর তদন্ত কমিটি গঠন করতে শুরু করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, শুধুমাত্র উত্তর ২৪ পরগনা জেলাতেই একাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকার নাম পাওয়া গিয়েছে যাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করার নির্দেশ সংশ্লিষ্ট জেলা স্কুলবিদ্যালয় পরিদর্শক দিয়েছেন। স্কুলের নাম ও শিক্ষক-শিক্ষিকার নাম উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট জেলার স্কুল শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট জেলার স্কুল বিদ্যালয় পরিদর্শকরা।
তদন্ত করে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করার নির্দেশ ইতিমধ্যেই দিয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। সেই অনুযায়ী, প্রাইভেট টিউশন নিয়ে যে সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকার নাম উঠে এসেছে তাঁদের তদন্তকারী সদস্যদের মুখোমুখি হতে হবে বলেই জানা গিয়েছে।
তারপরে সেই রিপোর্ট মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে পাঠাতে হবে। গোটা প্রক্রিয়াটি দ্রুত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্যের তরফে বলেই সূত্রের খবর। এর আগে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে বিভিন্ন জেলার স্কুল বিদ্যালয় পরিদর্শকদের কোন কোন কর্মরত শিক্ষক প্রাইভেট টিউশনের সঙ্গে যুক্ত তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু তারপরেও কোনও ইতিবাচক উত্তর না আসায় জুলাই মাসে শেষদিকে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ করা চিঠি পাঠায় বিভিন্ন জেলার স্কুল বিদ্যালয় পরিদর্শকদের বলেই জানা গিয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতেই বিভিন্ন জেলার স্কুল বিদ্যালয় পরিদর্শকরা স্কুল শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের নিয়েই তদন্ত শুরু করল।