বিদ্বেষের লড়াই

- আপডেট : ২১ মে ২০২৫, বুধবার
- / 58
পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: ‘যুদ্ধ সাধারণ মানুষের জীবনে কত বড় বিপর্যয় আনে তা যুদ্ধবাজদের বোঝা সম্ভব নয়। যারা যুদ্ধ চায় তারা যুদ্ধে কখনও যায় না।’ সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন মন্তব্যের জন্য রবিবার ভোরবেলায় হঠাৎ অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আলি খান মাহমুদাবাদের বাড়িতে চড়াও হয় দিল্লি পুলিশ। দেশদ্রোহী-সহ ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতের অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিজেপির যুব মোর্চার নেতা যোগেশ জাঠেরি একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় তার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছেন। সোনিপত কোর্টে তাঁকে পেশ করা হয়। এই ঘটনা নিয়ে উঠছে একাধিক প্রশ্ন। একদিকে ঘৃণার বিরুদ্ধে পক্ষ নেওয়ায় পুলিশি নিগ্রহের মুখোমুখি হয়েছেন এই অধ্যাপক। অন্যদিকে কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে ‘সন্ত্রাসবাদীদের বোন’ আর ‘ভারতীয় সেনা মোদির চরণে নত মস্তক’ বলে মন্তব্য করেও দিব্যি হাজতের বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মধ্যপ্রদেশের এক বিজেপি মন্ত্রী ও উপমুখ্যমন্ত্রী। দেশদ্রোহিতার ব্যাখ্যায় এমন বৈষম্য কেন, উঠছে প্রশ্ন। সকালে গ্রেফতারির পর আলি খান মাহমুদাবাদের বিরুদ্ধে করা আরও একটা এফআইআর-এর বিষয়ে জানা যায়। হরিয়ানা রাজ্য মহিলা কমিশন তাঁর বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করে দাবি করে, তিনি নাকি সোফিয়া কুরেশি-সহ সেনার সমস্ত মহিলা অফিসারকে অপমান করেছেন। যদিও তাঁর ঠিক কোন কথাটা অপমানজনক তা স্পষ্ট করে জানাতে পারেনি মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন রেণু ভাটিয়া। সংবাদ সংস্থার প্রশ্নের চাপে পড়ে তিনি আমতা আমতা করে বলেন, মহিলা অফিসারদের একই পঙক্তিতে ‘যুদ্ধ’, ‘গণহত্যার’ মতো শধ ব্যবহার করে নাকি তাদের অপমান করা হয়েছে। মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সনের এমন সাফাই নানা মহল থেকে কটাক্ষের মুখোমুখি হয়েছে। গত ১২ মে মাহমুদাবাদকে তলব করে রাজ্য মহিলা কমিশন। শুনানি চলাকালীন তিনি জানান, তাঁর বক্তব্য পুরোপুরি ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তিনি এ কথাও বলেন যে তিনি তাঁর বাক-স্বাধীনতা প্রয়োগ করেছেন। পোস্টে শান্তি ও সম্প্রীতির পক্ষে দাঁড়িয়ে দেশের সেনাবাহিনীকে সম্মান জানিয়েছেন। যারা দেশে হিংসা ও বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য রেখেছেন।
গত ৮ মে এক ফেসবুক পোস্টে আলি খান মাহমুদাবাদ লেখেন, কিছু মানুষ আছে যাঁরা সমস্ত বোধ-বুদ্ধি ত্যাগ করে, পাগলের মতো যুদ্ধ চাইছেন। তারা যে শুধু যুদ্ধক্ষেত্রের আশেপাশে কোনওদিন থাকেননি তা নয়, কোনওদিন চাক্ষুষ যুদ্ধ দেখছেন বলেও মনে হয় না। কোনও অসামরিক মহড়ায় অংশ নিয়েই কেউ সৈনিক হয়ে ওঠে না। যুদ্ধে আপনজনের কাউকে হারালেই তবে তার আসল মর্ম বোঝা সম্ভব। গরিব মানুষ তার নির্মম আঘাতের শিকার হন। মুনাফা কামায় দেশের শাসক শ্রেণি ও অস্ত্র কারাবারিরা। অধ্যাপকের এমন মন্তব্যেই বিজেপি নেতা মামলা দায়ের করেছেন। অথচ সপ্তাহ খানেক আগে ঠিক একই ধরনের মন্তব্য করেছিলেন দেশের প্রাক্তন সেনাপ্রধান মনোজ মুকু¨ নারাভানে। এক আলোচনায় তিনি বলেছিলেন, যুদ্ধ নিয়ে আদিখ্যাতা বন্ধ করুন। এসব আপনাদের বলিউড সিনেমা নয়। একজন সেনাকর্মী ক’নও চাইতে পারেন না দুই দেশের মধ্যে পুরোদস্তুর যুদ্ধ বাঁধুক। অজ্ঞাত কোনও কারণে প্রাক্তন সেনাপ্রধান নারাভানে কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের হেনস্থার মুখে না পড়লেও মাহমুদাবাদ তাদের থেকে রেহাই পেলেন না। এক্ষেত্রে তাঁর মুসলিম পরিচয়ই যে আক্রমণের মূল কারণ হয়ে উঠেছে তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। রবিবার সকাল থেকেই বিজেপির আইটি সেল অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই অধ্যাপককে ‘জেহাদি’, ‘দেশদ্রোহী’, ‘পাক গুপ্তচর’, ‘সন্ত্রাসবাদীদের মদদদাতা’র মতো অজস্র কটুক্তি করে চলেছে। অনেকে আবার তাঁকে পাকিস্তানে প্রত্যার্পণের দাবিও তুলেছেন। এটা থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, বিজেপির দুই মন্ত্রীর কুমন্তব্যকে আড়াল করতে দলের আইটি সেল মাহমুদাবাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। কারণ তিনি সংগঠিতভাবে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ, বুলডোজার-রাজের বিরুদ্ধেও সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক সত্যি কথা বলে ফেলেছিলেন। তাই তার বিরুদ্ধে চলছে বিদ্বেষের লড়াই! এতে কি তিনি ভালোবাসা দিয়ে জিততে পারবেন?