০১ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফুটবলের দেশ আর্জেন্টিনায় ইসলামের ইতিহাস  

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২২, সোমবার
  • / 15

পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ আর্জেন্টিনা নাম শুনলেই প্রথমেই মনে পড়ে ফুটবলের কথা। মনে আসে ফুটবলের অন্যতম কিংবদন্তি মারাদোনা ও বর্তমান সময়ের অন্যতম খেলোয়াড়  লিও মেসির নাম। মূলত ফুটবলের জন্যই এই দেশ বিশ্বের কাছে বেশি পরিচিত। তবে ফুটবল ছাড়াও এই দেশটির রয়েছে প্রাচুর্যপূর্ণ ইতিহাস।

 আর্জেন্টিনা দক্ষিণ আমেরিকার একটি দেশ। এর বৃহত্তম শহর ও  রাজধানী বুয়েনস আয়ারস । দেশটি দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ অংশের প্রায় পুরোটা জুড়েই রয়েছে। আয়তনের দিক থেকে এটি দক্ষিণ  আমেরিকার ২য় বৃহত্তম এবং বিশ্বের ৮ম বৃহত্তম দেশ।

ফুটবলের দেশ আর্জেন্টিনায় ইসলামের ইতিহাস  

দেশটির মোট জনসংখ্যা ৪ কোটি ৫৬ লাখ ২০ হাজার ৩৮১ জন । মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি খ্রিস্টান ধর্ম পালন করে।  খ্রিস্টান অধ্যুষিত আর্জেন্টিনার  মুসলিম নাগরিকের সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার লাখ। যা আর্জেন্টিনার মোট জনসংখ্যার মাত্র ২ শতাংশ। এরপরও আর্জেন্টিনায় বসবাসকারীদের মাঝে মুসলিমরা দেশটির বৃহত্তম সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী।

 সম্প্রতি প্রকাশিত হওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুসলমানের বাস এ দেশটিতে। তবে বর্তমান সময়ে দেশটির মুসলিম জনসংখ্যা ক্রমবর্ধমানে বাড়ছে। আর্জেন্টিনার মুসলমানদের এক পঞ্চমাংশই বাস করে রাজধানী বুয়েনস আয়ারসে।

ফুটবলের দেশ আর্জেন্টিনায় ইসলামের ইতিহাস  

আর্জেন্টিনায় মুসলমানদের আগমন লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশের মতোই। একসময়ে স্প্যানিশ উপনিবেশ ছিল দেশটি। তখন  বহু পশ্চিম আফ্রিকান মূলত কৃষ্ণাঙ্গ বর্ণের মানুষদের দেশটিতে দাস হিসেবে নিয়ে আসা হত। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ নাগরিকই ছিল মরক্কোর বাসিন্দা। আর তাদের অধিকাংশই ছিল ইসলাম ধর্মালম্বী।  এদের  হাত ধরেই  আর্জেন্টিনায় ইসলাম ধর্মের আগমন হয়।

 তারপর ঊনবিংশ  শতাব্দীতে মূলত উসমানী খেলাফতের পতনের পরে প্রায় ১ লক্ষ মুসলিম আরব অভিবাসী আর্জেন্টিনায় আসেন। আর্জেন্টিনায় আশ্রয় পেতে আসা মুসলিমদের অনেককে ধর্মান্তরিত করতে নির্যাতন-নিপীড়ন চালানো হয়। নিপীড়ন থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই  বাধ্য হয়ে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করে । আবার অনেকে নিজেদের মুসলিম পরিচয় গোপন করে খ্রিস্টান বলে পরিচয় দিতে শুরু করে।

 তবে ১৯৮৯ সাল থেকে আর্জেন্টিনার ইতিহাস বদলাতে শুরু করে যখন কার্লোস মেনেম  প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন।তিনি আর্জেন্টিনার প্রথম আরব বংশোদ্ভূত প্রেসিডেন্ট।তিনি জন্মসূত্রে মুসলিম হলেও, পরে ক্ষমতায় আসার জন্য  খ্রিস্ট  ধর্ম গ্রহণ করে। তারপরেই রচিত হয় অন্য আর এক ইতিহাস। তাঁর শাসনকালে  দেশ জুড়ে শান্তি বজায় ছিল। তিনি ক্ষমতায় আসার পর দেশটির মুসলিম  নাগরিকদের নানান  ভাবে সহায়তা করেন। বিশেষত সউদি সরকারের সহায়তায় বিভিন্ন মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার নির্মাণ করেন।

ফুটবলের দেশ আর্জেন্টিনায় ইসলামের ইতিহাস  

এমনকি মুসলিম নববর্ষের প্রথম দিন ছুটির জন্য তিনি আবেদন করেন। আর্জেন্টিনার সংবিধান অনুযায়ী মুসলমানদের ইসলামি নববর্ষের প্রথম দিন উদযাপনের জন্য ছুটি নেয়ার অনুমতি রয়েছে।

বর্তমান সময়ে আর্জেন্টিনার বিভিন্ন শহরে ১৫০ টিরও বেশি ইসলামিক সেন্টার রয়েছে। বর্তমানে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই সেন্টার গুলির সংখ্যাও বেড়ে চলেছে।

 মুসলমানরা ধর্মীয় দিক থেকে বেশ স্বাধীনভাবেই এখানে ধর্ম পালন করতে পারে। পবিত্র রমজান, ঈদসহ সব ইসলামি উৎসব তারা বেশ আনন্দের সঙ্গে পালন করে। ইবাদতের সুবিধার্থে গড়ে উঠেছে বড় বড় ইসলামিক সেন্টার, মসজিদ ইত্যাদি। যার মধ্যে সিআইআরএ (দ্য ইসলামিক সেন্টার অব আর্জেন্টিনা), আহমদ মসজিদ, আত-তাওহিদ মসজিদ, কিং ফাহাদ বা পালার্মো মসজিদ অন্যতম।

ফুটবলের দেশ আর্জেন্টিনায় ইসলামের ইতিহাস  

আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আইরেসে অবস্থিত বাদশাহ ফাহাদ ইসলামিক কালচারাল সেন্টার। ল্যাতিন আমেরিকার সবচেয়ে বড় মসজিদও এটি। পাশাপাশি ইসলামি শিক্ষা ও প্রচারকেন্দ্র হিসেবেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলছে এটি। প্রথমে এর মূল আয়তন ছিল ২০ হাজার স্কয়ার মিটার। ১৯৯২ সালে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট কার্লোস মেনেম সউদি সফরের পর ওই মসজিদের জন্য ৩৪ হাজার স্কয়ার  মিটার জায়গার ব্যবস্থা করেন। অত্যাধুনিক মসজিদ প্রকল্প বাস্তবায়নে ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হয়। মসজিদের আওতায় লাইব্রেরি, দুটি স্কুল ও বিশাল গার্ডেনও রয়েছে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

ফুটবলের দেশ আর্জেন্টিনায় ইসলামের ইতিহাস  

আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২২, সোমবার

পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ আর্জেন্টিনা নাম শুনলেই প্রথমেই মনে পড়ে ফুটবলের কথা। মনে আসে ফুটবলের অন্যতম কিংবদন্তি মারাদোনা ও বর্তমান সময়ের অন্যতম খেলোয়াড়  লিও মেসির নাম। মূলত ফুটবলের জন্যই এই দেশ বিশ্বের কাছে বেশি পরিচিত। তবে ফুটবল ছাড়াও এই দেশটির রয়েছে প্রাচুর্যপূর্ণ ইতিহাস।

 আর্জেন্টিনা দক্ষিণ আমেরিকার একটি দেশ। এর বৃহত্তম শহর ও  রাজধানী বুয়েনস আয়ারস । দেশটি দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ অংশের প্রায় পুরোটা জুড়েই রয়েছে। আয়তনের দিক থেকে এটি দক্ষিণ  আমেরিকার ২য় বৃহত্তম এবং বিশ্বের ৮ম বৃহত্তম দেশ।

ফুটবলের দেশ আর্জেন্টিনায় ইসলামের ইতিহাস  

দেশটির মোট জনসংখ্যা ৪ কোটি ৫৬ লাখ ২০ হাজার ৩৮১ জন । মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি খ্রিস্টান ধর্ম পালন করে।  খ্রিস্টান অধ্যুষিত আর্জেন্টিনার  মুসলিম নাগরিকের সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার লাখ। যা আর্জেন্টিনার মোট জনসংখ্যার মাত্র ২ শতাংশ। এরপরও আর্জেন্টিনায় বসবাসকারীদের মাঝে মুসলিমরা দেশটির বৃহত্তম সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী।

 সম্প্রতি প্রকাশিত হওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুসলমানের বাস এ দেশটিতে। তবে বর্তমান সময়ে দেশটির মুসলিম জনসংখ্যা ক্রমবর্ধমানে বাড়ছে। আর্জেন্টিনার মুসলমানদের এক পঞ্চমাংশই বাস করে রাজধানী বুয়েনস আয়ারসে।

ফুটবলের দেশ আর্জেন্টিনায় ইসলামের ইতিহাস  

আর্জেন্টিনায় মুসলমানদের আগমন লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশের মতোই। একসময়ে স্প্যানিশ উপনিবেশ ছিল দেশটি। তখন  বহু পশ্চিম আফ্রিকান মূলত কৃষ্ণাঙ্গ বর্ণের মানুষদের দেশটিতে দাস হিসেবে নিয়ে আসা হত। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ নাগরিকই ছিল মরক্কোর বাসিন্দা। আর তাদের অধিকাংশই ছিল ইসলাম ধর্মালম্বী।  এদের  হাত ধরেই  আর্জেন্টিনায় ইসলাম ধর্মের আগমন হয়।

 তারপর ঊনবিংশ  শতাব্দীতে মূলত উসমানী খেলাফতের পতনের পরে প্রায় ১ লক্ষ মুসলিম আরব অভিবাসী আর্জেন্টিনায় আসেন। আর্জেন্টিনায় আশ্রয় পেতে আসা মুসলিমদের অনেককে ধর্মান্তরিত করতে নির্যাতন-নিপীড়ন চালানো হয়। নিপীড়ন থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই  বাধ্য হয়ে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করে । আবার অনেকে নিজেদের মুসলিম পরিচয় গোপন করে খ্রিস্টান বলে পরিচয় দিতে শুরু করে।

 তবে ১৯৮৯ সাল থেকে আর্জেন্টিনার ইতিহাস বদলাতে শুরু করে যখন কার্লোস মেনেম  প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন।তিনি আর্জেন্টিনার প্রথম আরব বংশোদ্ভূত প্রেসিডেন্ট।তিনি জন্মসূত্রে মুসলিম হলেও, পরে ক্ষমতায় আসার জন্য  খ্রিস্ট  ধর্ম গ্রহণ করে। তারপরেই রচিত হয় অন্য আর এক ইতিহাস। তাঁর শাসনকালে  দেশ জুড়ে শান্তি বজায় ছিল। তিনি ক্ষমতায় আসার পর দেশটির মুসলিম  নাগরিকদের নানান  ভাবে সহায়তা করেন। বিশেষত সউদি সরকারের সহায়তায় বিভিন্ন মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার নির্মাণ করেন।

ফুটবলের দেশ আর্জেন্টিনায় ইসলামের ইতিহাস  

এমনকি মুসলিম নববর্ষের প্রথম দিন ছুটির জন্য তিনি আবেদন করেন। আর্জেন্টিনার সংবিধান অনুযায়ী মুসলমানদের ইসলামি নববর্ষের প্রথম দিন উদযাপনের জন্য ছুটি নেয়ার অনুমতি রয়েছে।

বর্তমান সময়ে আর্জেন্টিনার বিভিন্ন শহরে ১৫০ টিরও বেশি ইসলামিক সেন্টার রয়েছে। বর্তমানে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই সেন্টার গুলির সংখ্যাও বেড়ে চলেছে।

 মুসলমানরা ধর্মীয় দিক থেকে বেশ স্বাধীনভাবেই এখানে ধর্ম পালন করতে পারে। পবিত্র রমজান, ঈদসহ সব ইসলামি উৎসব তারা বেশ আনন্দের সঙ্গে পালন করে। ইবাদতের সুবিধার্থে গড়ে উঠেছে বড় বড় ইসলামিক সেন্টার, মসজিদ ইত্যাদি। যার মধ্যে সিআইআরএ (দ্য ইসলামিক সেন্টার অব আর্জেন্টিনা), আহমদ মসজিদ, আত-তাওহিদ মসজিদ, কিং ফাহাদ বা পালার্মো মসজিদ অন্যতম।

ফুটবলের দেশ আর্জেন্টিনায় ইসলামের ইতিহাস  

আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আইরেসে অবস্থিত বাদশাহ ফাহাদ ইসলামিক কালচারাল সেন্টার। ল্যাতিন আমেরিকার সবচেয়ে বড় মসজিদও এটি। পাশাপাশি ইসলামি শিক্ষা ও প্রচারকেন্দ্র হিসেবেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলছে এটি। প্রথমে এর মূল আয়তন ছিল ২০ হাজার স্কয়ার মিটার। ১৯৯২ সালে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট কার্লোস মেনেম সউদি সফরের পর ওই মসজিদের জন্য ৩৪ হাজার স্কয়ার  মিটার জায়গার ব্যবস্থা করেন। অত্যাধুনিক মসজিদ প্রকল্প বাস্তবায়নে ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হয়। মসজিদের আওতায় লাইব্রেরি, দুটি স্কুল ও বিশাল গার্ডেনও রয়েছে।