ভুয়ো সাংবাদিকদের নিয়ে এবার মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী
- আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২১, বুধবার
- / 6
শুভজিৎ দেবনাথ, জলপাইগুড়ি: এবারে ভুয়ো সাংবাদিকদের নিয়ে সরব হলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এতদিন বিভিন্ন প্রেস ক্লাবের তরফে সরব হতে দেখা গিয়েছিল এক শ্রেণির মানুষ যেভাবে ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল খুলে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় জাহির করেছে এমন অভিযোগ বিভিন্ন প্রেস ক্লাবের কাছে এসেছে। একাধিকবার বিভিন্ন প্রেসক্লাবকে যার বিরুদ্ধে সরব হতে দেখা গিয়েছে। তথাপি এদের দৌরাত্ম্য কমাতে পারা যায়নি, উল্টে যত দিন যাচ্ছে আরো বেড়েই চলেছে বলেই অভিযোগ।
তবে এবার স্বয়ং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নাকা চেকিংয়ের মধ্য দিয়ে সরকারি ভুয়ো গাড়ির উপর নজরদারি চালানোর কথা বলছেন, তেমনি ভুয়ো প্রেস স্টিকার লাগিয়ে দাপিয়ে বেড়ানো সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপের কথা বলেছেন। প্রেসকাব গুলিকেও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে বলেছেন। স্বাভাবিকভাবে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে রীতিমত খুশি বিভিন্ন প্রেস ক্লাব গুলি।
কারণ বিভিন্ন সময় দেখা গিয়েছে এক শ্রেণির মানুষ নিজেরাই ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল খুলে নিয়ে তারা আবার নিজেরাই নিজেদেরকে স্বঘোষিত সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় দাপিয়ে বেড়ান। বিশেষ করে গ্রামগঞ্জের অসহায় মানুষদের বিভিন্ন ভাবে ব্ল্যাকমেইলিং তাদেরকে ভয় দেখানো এবং ভীতি প্রদর্শন করে টাকা আত্মসাত করার মতন ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ। তাই এই সমস্ত বিষয় গুলির উপর পুলিশ যাতে কড়া নজরদারি করেন সেই বিষয়ে দাবি সমস্ত প্রেস ক্লাব গুলির।
প্রতিষ্ঠিত এবং সরকারি অনুমোদন প্রাপ্ত সংবাদমাধ্যদের কর্মীদের যাতে হ্যারেজমেন্ট না হয় সেদিকটাও নজর দিতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী, শিলিগুড়ির প্রশাসনিক বৈঠক থেকে।
প্রসঙ্গত, এর আগে ভুয়ো সাংবাদিক নিয়ে জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ি প্রেস ক্লাবের তরফে জেলা প্রশাসনের কাছে একটি স্মারকলিপি তুলে দিয়েছিল ধূপগুড়ি প্রেস ক্লাবের সদস্যরা। এছাড়াও ভুয়ো সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল শিলিগুড়ি জার্নালিস্ট ক্লাব ও আলিপুরদুয়ার জেলা প্রেসক্লাব।
ধূপগুড়ি প্রেস ক্লাবের সম্পাদক সপ্তর্ষি সরকার বলেন , আইনের উর্দ্ধে কেউ না। গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ যাদের বলা হয়, তাদের ওপর এই দায়িত্বটা আরো বেশি পড়ে। সুযোগটা অনেকেই নেওয়ার চেষ্টা করে। বর্তমানে যেমন ভুয়ো আইপিএস অফিসার, সিবিআই অফিসার সাজতে পারে, তেমনি ভুয়ো সাংবাদিক সেজে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টাও কেউ করতেই পারে। ফেসবুক পেজ খুলেই নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া অর্থাৎ শুরুটাই তো বাটপারি। আমরাও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।
জলপাইগুড়ি প্রেসক্লাবের সম্পাদক সান্তনু কর বলেন, যে সমস্ত স্বঘোষিত সাংবাদিক রয়েছে তারা স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারন অনেকেই ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করে নিজেদেরকে সাংবাদিক বলে দাবি করছেন। এদের বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ উঠে আসে। প্রশাসনের উচিত এদের বিরুদ্ধে কড়া নজরদারি করে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার। না হলে যারা মেইনস্ট্রিমের সাংবাদিক প্রতিষ্ঠিত সংবাদপত্র বা টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক তারাও কলঙ্কিত হচ্ছে এই সমস্ত এক শ্রেণির মানুষদের জন্য। তাই মুখ্যমন্ত্রী যে কথা বলেছেন সেটাকে আমরা সমর্থন করি। জলপাইগুড়ি প্রেসকাবের থেকেও আমরা বিষয়টিকে নিয়ে এসব পদক্ষেপ নেবো, যাতে জেলা পুলিশ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখেন।কারণ আমরাও শুনেছি বিভিন্ন জায়গায় ভুয়ো প্রেস স্টিকার লাগিয়ে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার জন্য প্রবণতা রয়েছে কোথাও কোথাও।
জলপাইগুড়ি পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত জানান, পুলিশের তরফে জেলায় সবসময় চেকিং চলছে। আমাদের ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি থানা গুলোকেও বলা হয়েছে যারা গাড়িতে প্রেস স্টিকার লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রত্যেকের আই কার্ড চেক করবার জন্য তারা প্রতিষ্ঠিত কোনও সংবাদমাধ্যমের কর্মী কিনা।