১৩ জুলাই ২০২৫, রবিবার, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মরক্কোর মহিলা কারিগরদের হাতে পুনরুজ্জীবিত ঐতিহ্যবাহী গালিচা

আফিয়া‌‌ নৌশিন
  • আপডেট : ৬ জুলাই ২০২৫, রবিবার
  • / 56

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ‘ওয়াওউজগিট’ গালিচা কেবল একটি মেঝে ঢাকার উপকরণ নয়, এটি মরক্কোর সংষ্কৃতির এক জীবন্ত প্রতীক। দক্ষিণ-পূর্ব মরক্কোর তাজনাখ্ত শহরে অবস্থিত আগুইনেস গালিচা সমবায় এই ঐতিহ্যবাহী গালিচা তৈরির কাজ করে থাকে, যেখানে সমস্ত কর্মীই মহিলা। এই গালিচা বুননের সাথে মহিলাদের এক দীর্ঘস্থায়ী এবং দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে।

প্রথাগতভাবে, এই গালিচাগুলি কনের যৌতুকের অংশ হিসেবে দেওয়া হতো এবং বিবাহ ঘোষণার একটি মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহৃত হত। তাজনাখ্তের মহিলা গালিচা কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক আবদাররহমান জানাহ বলেন, ক্ষ্মমহিলারা গালিচা তৈরির মাধ্যমে তাঁদের সৃজনশীলতা প্রকাশ করতেন এবং এটি ছিল তাঁদের আবেগ প্রকাশের একটি মাধ্যম।

এই গালিচাগুলি সম্পূর্ণ হাতে তৈরি এবং এতে ব্যবহৃত হয় প্রাকৃতিক পশম, যা স্থানীয়ভাবে, বিশেষ করে সিরোয়া পর্বতের কাছাকাছি থাকা ভেড়া থেকে সংগ্রহ করা হয়। তাজনাখ্তের মহিলারা এই পশম ধুয়ে, সুতো কেটে তারপর স্থানীয় উদ্ভিদের উপাদান থেকে তৈরি প্রাকৃতিক রং ব্যবহার করে তা রং করেন;যেমন হেনা, ডালিমের খোসা, জাফরান বা নীল পাতা।

আরও পড়ুন: বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও সুন্দর মসজিদ গুলো জানলে অবাক হবেন !

আগুইনেস গালিচা সমবায়ের কারিগর নাইমা আখরাজে বলেন, প্রাকৃতিক রংগুলোর সুবিধা হলো, এগুলি স্বাস্থ্যসম্মত এবং অ্যালার্জির কারণ হয় না। পাশাপাশি, রংগুলো গালিচার গায়ে স্থায়ীভাবে থেকে যায় এবং ধোওয়ার সময় একে অপরের সঙ্গে মিশে যায় না।

গালিচার প্রতিটি রং এবং নকশার আকারের রয়েছে বিশেষ তাৎপর্য। এই জ্যামিতিক ডিজাইনগুলি উর্বরতা, সুরক্ষা, পরিবার বা মাটির সঙ্গে মানবিক সংযোগের প্রতীক। মহিলারা ঐতিহ্যবাহী কাঠের তাঁতের সাহায্যে গালিচাগুলি বোনেন। একটি গালিচা সম্পূর্ণ করতে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে, যা এর আকার ও জটিলতার উপর নির্ভর করে।

তাজনাখ্তে বর্তমানে একাধিক সমবায় ও গোষ্ঠী রয়েছে, যারা এই গালিচাগুলি প্রচার করে এবং গালিচা বোনার কাজ করা মহিলাদের ন্যায্য মূল্য দিতে সহায়তা করে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ‘তাজনাখ্ত গালিচার উন্নয়নের জন্য মহিলা কেন্দ্র’, যা ৩৫টি সমবায় এবং ৩,৫০০ জন মহিলা বুনন শিল্পী নিয়ে গঠিত। ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কেন্দ্রটি এখন প্রতি মাসে প্রায় ৩০০টি গালিচা তৈরি করতে সক্ষম।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

মরক্কোর মহিলা কারিগরদের হাতে পুনরুজ্জীবিত ঐতিহ্যবাহী গালিচা

আপডেট : ৬ জুলাই ২০২৫, রবিবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ‘ওয়াওউজগিট’ গালিচা কেবল একটি মেঝে ঢাকার উপকরণ নয়, এটি মরক্কোর সংষ্কৃতির এক জীবন্ত প্রতীক। দক্ষিণ-পূর্ব মরক্কোর তাজনাখ্ত শহরে অবস্থিত আগুইনেস গালিচা সমবায় এই ঐতিহ্যবাহী গালিচা তৈরির কাজ করে থাকে, যেখানে সমস্ত কর্মীই মহিলা। এই গালিচা বুননের সাথে মহিলাদের এক দীর্ঘস্থায়ী এবং দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে।

প্রথাগতভাবে, এই গালিচাগুলি কনের যৌতুকের অংশ হিসেবে দেওয়া হতো এবং বিবাহ ঘোষণার একটি মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহৃত হত। তাজনাখ্তের মহিলা গালিচা কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক আবদাররহমান জানাহ বলেন, ক্ষ্মমহিলারা গালিচা তৈরির মাধ্যমে তাঁদের সৃজনশীলতা প্রকাশ করতেন এবং এটি ছিল তাঁদের আবেগ প্রকাশের একটি মাধ্যম।

এই গালিচাগুলি সম্পূর্ণ হাতে তৈরি এবং এতে ব্যবহৃত হয় প্রাকৃতিক পশম, যা স্থানীয়ভাবে, বিশেষ করে সিরোয়া পর্বতের কাছাকাছি থাকা ভেড়া থেকে সংগ্রহ করা হয়। তাজনাখ্তের মহিলারা এই পশম ধুয়ে, সুতো কেটে তারপর স্থানীয় উদ্ভিদের উপাদান থেকে তৈরি প্রাকৃতিক রং ব্যবহার করে তা রং করেন;যেমন হেনা, ডালিমের খোসা, জাফরান বা নীল পাতা।

আরও পড়ুন: বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও সুন্দর মসজিদ গুলো জানলে অবাক হবেন !

আগুইনেস গালিচা সমবায়ের কারিগর নাইমা আখরাজে বলেন, প্রাকৃতিক রংগুলোর সুবিধা হলো, এগুলি স্বাস্থ্যসম্মত এবং অ্যালার্জির কারণ হয় না। পাশাপাশি, রংগুলো গালিচার গায়ে স্থায়ীভাবে থেকে যায় এবং ধোওয়ার সময় একে অপরের সঙ্গে মিশে যায় না।

গালিচার প্রতিটি রং এবং নকশার আকারের রয়েছে বিশেষ তাৎপর্য। এই জ্যামিতিক ডিজাইনগুলি উর্বরতা, সুরক্ষা, পরিবার বা মাটির সঙ্গে মানবিক সংযোগের প্রতীক। মহিলারা ঐতিহ্যবাহী কাঠের তাঁতের সাহায্যে গালিচাগুলি বোনেন। একটি গালিচা সম্পূর্ণ করতে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে, যা এর আকার ও জটিলতার উপর নির্ভর করে।

তাজনাখ্তে বর্তমানে একাধিক সমবায় ও গোষ্ঠী রয়েছে, যারা এই গালিচাগুলি প্রচার করে এবং গালিচা বোনার কাজ করা মহিলাদের ন্যায্য মূল্য দিতে সহায়তা করে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ‘তাজনাখ্ত গালিচার উন্নয়নের জন্য মহিলা কেন্দ্র’, যা ৩৫টি সমবায় এবং ৩,৫০০ জন মহিলা বুনন শিল্পী নিয়ে গঠিত। ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কেন্দ্রটি এখন প্রতি মাসে প্রায় ৩০০টি গালিচা তৈরি করতে সক্ষম।