১৬ জুন ২০২৫, সোমবার, ১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলার হুমকি ক্যালিফর্নিয়ার গভর্নরের

উত্তাল লস অ্যাঞ্জেলেসে বিক্ষোভ ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে বাহিনী

চামেলি দাস
  • আপডেট : ৯ জুন ২০২৫, সোমবার
  • / 111

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ধোঁয়ার কুণ্ডলী, কাঁদানে গ্যাসে ঝাঁঝাল বাতাস, আর রবার বুলেটের আঘাতে ছিন্নভিন্ন শরীর নিয়ে ছুটে বেড়ানো মানুষ; এই হল আমেরিকার আজকের চেহারা। আর এই অস্থিরতার কেন্দ্রে রয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

২০২৫ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ‘আমেরিকা ফার্স্ট’, ‘বিল্ড দা ওয়াল’ ইত্যাদি স্লোগানের আড়ালে ট্রাম্প প্রশাসন শুরু করেছিল এক নির্মম অভিবাসন বিরোধী অভিযান। সেই দমননীতি এবার আরও কঠোর রূপ নিয়েছে। গত শুক্রবার থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে, বিশেষ করে লস অ্যাঞ্জেলেসে, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই),এর একক অভিযানে ১১৮ জন অনিবন্ধিত অভিবাসীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুধুমাত্র শুক্রবারেই গ্রেফতার হন ৪৪ জন। এই ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার থেকে শুরু হয় ব্যাপক বিক্ষোভ। রাস্তায় নেমে আসে সাধারণ মানুষ। হাতে প্ল্যাকার্ড, মুখে মাস্ক পরে তারা স্লোগান তোলে: ‘অভিবাসীরাই আমাদের মেরুদণ্ড! আইস-কে বিলুপ্ত করো!’

আরও পড়ুন: লস অ্যাঞ্জেলেসে জারি কারফিউ, বিক্ষোভ থামাতে গণগ্রেফতার

কিন্তু শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের জবাবে হোয়াইট হাউস লস অ্যাঞ্জেলেসে ২,০০০ ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের নির্দেশ দেয়। রাজপথে নামানো হয় সাঁজোয়া গাড়ি, আধাসামরিক বাহিনী, ছোড়া হয় টিয়ারশেল, চালানো হয় লাঠিচার্জ, এমনকী ব্যবহৃত হয় রবার বুলেট। এক অস্ট্রেলীয় সাংবাদিক রবার বুলেটের আঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন।

আরও পড়ুন: মুসলিম যুবককে হত্যা, প্রতিবাদে গণইস্তফা কর্নাটকের সংখ্যালঘু নেতাদের

শুধু তাই নয়, রবিবার ট্রাম্প নিজে ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্ট করে স্পষ্ট ভাষায় নির্দেশ দেন;যারা মাস্ক পরে বিক্ষোভে নামবে, তাদের দেখামাত্র গ্রেফতার করতে হবে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র, যে দেশ একদিন মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতীক ছিল, সেখানেই আজ মুখ ঢাকলেই তা হয়ে যাচ্ছে ‘অপরাধ’।

আরও পড়ুন: কৃষিমন্ত্রীকে প্রশ্ন করায় গ্রেফতার কৃষক নেতা নির্মল সিং সিধু

নিউ জার্সিতে এক সাংবাদিক বৈঠকে ট্রাম্প আরও বলেন, ‘ওরা থুতু ছিটিয়েছে, আমরা মেরেছি।’ এই মন্তব্য রাষ্ট্রীয় হিংসাকে বৈধতা দেওয়ার সামিল।

এই ঘটনার তীব্র বিরোধিতা করে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসাম জানিয়ে দিয়েছেন, আলোচনার কোনও প্রক্রিয়া ছাড়াই ট্রাম্প লস অ্যাঞ্জেলেসে ফেডারেল বাহিনী মোতায়েন করেছেন। তিনি স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

কেবল নিউসামই নয়, লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র ক্যারেন ব্যাস-ও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘সড়কে সাঁজোয়া যান নামিয়ে সাধারণ মানুষকে আতঙ্কে রাখা হয়েছে। প্রশাসনেরই উসকানিতে শহরের পরিস্থিতি আজ এই জায়গায় পৌঁছেছে।’ ডেমোক্র্যাট পার্টি ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে ‘ক্ষমতার উদ্বেগজনক অপব্যবহার’ বলে চিহ্নিত করেছে।

রবিবার বিক্ষোভ দমন করতে গিয়ে পুলিশ ও ন্যাশনাল গার্ড ইতিমধ্যেই ২০০-র বেশি মানুষকে গ্রেফতার করেছে। বিক্ষোভকারীরা কিছু গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়, একটি প্রধান ফ্রি-ওয়েও অবরুদ্ধ করা হয়। বিবিসি-এর সাংবাদিক লাইভ সম্প্রচারে গ্রেনেডের শধ, হেলিকপ্টারের গর্জন ও গুলির আওয়াজ শোনান, যা একটি যুদ্ধক্ষেত্রের বিভীষিকাই প্রতিফলিত করে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলার হুমকি ক্যালিফর্নিয়ার গভর্নরের

উত্তাল লস অ্যাঞ্জেলেসে বিক্ষোভ ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে বাহিনী

আপডেট : ৯ জুন ২০২৫, সোমবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ধোঁয়ার কুণ্ডলী, কাঁদানে গ্যাসে ঝাঁঝাল বাতাস, আর রবার বুলেটের আঘাতে ছিন্নভিন্ন শরীর নিয়ে ছুটে বেড়ানো মানুষ; এই হল আমেরিকার আজকের চেহারা। আর এই অস্থিরতার কেন্দ্রে রয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

২০২৫ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ‘আমেরিকা ফার্স্ট’, ‘বিল্ড দা ওয়াল’ ইত্যাদি স্লোগানের আড়ালে ট্রাম্প প্রশাসন শুরু করেছিল এক নির্মম অভিবাসন বিরোধী অভিযান। সেই দমননীতি এবার আরও কঠোর রূপ নিয়েছে। গত শুক্রবার থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে, বিশেষ করে লস অ্যাঞ্জেলেসে, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই),এর একক অভিযানে ১১৮ জন অনিবন্ধিত অভিবাসীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুধুমাত্র শুক্রবারেই গ্রেফতার হন ৪৪ জন। এই ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার থেকে শুরু হয় ব্যাপক বিক্ষোভ। রাস্তায় নেমে আসে সাধারণ মানুষ। হাতে প্ল্যাকার্ড, মুখে মাস্ক পরে তারা স্লোগান তোলে: ‘অভিবাসীরাই আমাদের মেরুদণ্ড! আইস-কে বিলুপ্ত করো!’

আরও পড়ুন: লস অ্যাঞ্জেলেসে জারি কারফিউ, বিক্ষোভ থামাতে গণগ্রেফতার

কিন্তু শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের জবাবে হোয়াইট হাউস লস অ্যাঞ্জেলেসে ২,০০০ ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের নির্দেশ দেয়। রাজপথে নামানো হয় সাঁজোয়া গাড়ি, আধাসামরিক বাহিনী, ছোড়া হয় টিয়ারশেল, চালানো হয় লাঠিচার্জ, এমনকী ব্যবহৃত হয় রবার বুলেট। এক অস্ট্রেলীয় সাংবাদিক রবার বুলেটের আঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন।

আরও পড়ুন: মুসলিম যুবককে হত্যা, প্রতিবাদে গণইস্তফা কর্নাটকের সংখ্যালঘু নেতাদের

শুধু তাই নয়, রবিবার ট্রাম্প নিজে ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্ট করে স্পষ্ট ভাষায় নির্দেশ দেন;যারা মাস্ক পরে বিক্ষোভে নামবে, তাদের দেখামাত্র গ্রেফতার করতে হবে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র, যে দেশ একদিন মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতীক ছিল, সেখানেই আজ মুখ ঢাকলেই তা হয়ে যাচ্ছে ‘অপরাধ’।

আরও পড়ুন: কৃষিমন্ত্রীকে প্রশ্ন করায় গ্রেফতার কৃষক নেতা নির্মল সিং সিধু

নিউ জার্সিতে এক সাংবাদিক বৈঠকে ট্রাম্প আরও বলেন, ‘ওরা থুতু ছিটিয়েছে, আমরা মেরেছি।’ এই মন্তব্য রাষ্ট্রীয় হিংসাকে বৈধতা দেওয়ার সামিল।

এই ঘটনার তীব্র বিরোধিতা করে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসাম জানিয়ে দিয়েছেন, আলোচনার কোনও প্রক্রিয়া ছাড়াই ট্রাম্প লস অ্যাঞ্জেলেসে ফেডারেল বাহিনী মোতায়েন করেছেন। তিনি স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

কেবল নিউসামই নয়, লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র ক্যারেন ব্যাস-ও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘সড়কে সাঁজোয়া যান নামিয়ে সাধারণ মানুষকে আতঙ্কে রাখা হয়েছে। প্রশাসনেরই উসকানিতে শহরের পরিস্থিতি আজ এই জায়গায় পৌঁছেছে।’ ডেমোক্র্যাট পার্টি ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে ‘ক্ষমতার উদ্বেগজনক অপব্যবহার’ বলে চিহ্নিত করেছে।

রবিবার বিক্ষোভ দমন করতে গিয়ে পুলিশ ও ন্যাশনাল গার্ড ইতিমধ্যেই ২০০-র বেশি মানুষকে গ্রেফতার করেছে। বিক্ষোভকারীরা কিছু গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়, একটি প্রধান ফ্রি-ওয়েও অবরুদ্ধ করা হয়। বিবিসি-এর সাংবাদিক লাইভ সম্প্রচারে গ্রেনেডের শধ, হেলিকপ্টারের গর্জন ও গুলির আওয়াজ শোনান, যা একটি যুদ্ধক্ষেত্রের বিভীষিকাই প্রতিফলিত করে।