০৫ অক্টোবর ২০২৫, রবিবার, ১৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চুক্তিহীন ভাবেই শেষ হল ট্রাম্প-পুতিনের আলাস্কা বৈঠক

মারুফা খাতুন
  • আপডেট : ১৬ অগাস্ট ২০২৫, শনিবার
  • / 101

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : আলাস্কার আঙ্কোরেজ শহরের কাছে মার্কিন সেনা ঘাঁটি ‘জয়েন্ট বেস এলমেনডর্ফ-রিচার্ডসন’ শুক্রবার গভীর রাতে এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হল। সেখানেই মুখোমুখি বৈঠকে বসেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। প্রায় তিন ঘণ্টার বৈঠক (মধ্যাহ্নভোজ ধরা হলে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা) ঘিরে ছিল প্রবল উত্তেজনা। ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক কূটনীতির নানা ইস্যু উঠে এল আলোচনায়।

তবে বৈঠকের শুরুটা হয়েছিল একেবারেই অন্যভাবে। সংবাদমাধ্যম তাস জানিয়েছে, সভাকক্ষে নয়, বরং রানওয়েতে দাঁড়ানো মার্কিন প্রেসিডেন্টের ক্যাডিলাক লিমুজিন ‘দ্য বিস্ট’-এর ভেতরে বসেই প্রথম আলাপ শুরু করেন দুই নেতা। পাশাপাশি বসে হওয়া এই গোপন কথাবার্তাই মূল বৈঠকের রূপরেখা তৈরি করে দেয়। পরে ‘থ্রি-অন-থ্রি ফরম্যাটে’ আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়, যেখানে প্রত্যেক রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে ছিলেন আরও দু’জন করে শীর্ষ প্রতিনিধি।

আরও পড়ুন: ট্রাম্প-পুতিনের বৈঠককে স্বাগত জানাল ভারত

ট্রাম্পের সঙ্গে ছিলেন মার্কিন বিদেশসচিব মার্কো রুবিও ও প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। অন্যদিকে, পুতিনের সঙ্গী ছিলেন রুশ বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ এবং প্রেসিডেন্টের সহকারী ইউরি উশাকভ। আলোচনার মূল সিদ্ধান্ত ও যৌথ সাংবাদিক বৈঠকের বিবৃতি তৈরিতে তাঁদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

আরও পড়ুন: আলাস্কা বৈঠকের পর জেলেনস্কি-ন্যাটো নেতাদের ফোন ট্রাম্পের

সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল যুদ্ধবিরতি। অনেকেই ভেবেছিলেন, পুতিন ‘ভূমি বিনিময়’-এর প্রস্তাব তুলবেন। কিন্তু সেটি এড়িয়ে গিয়েও ট্রাম্প বললেন, যুদ্ধবন্দি বিনিময়সহ নানা বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে দ্রুতই একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হতে পারে। ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বৈঠককে ‘অত্যন্ত ইতিবাচক’ আখ্যা দিয়ে জানান, শান্তির পথে এগোতে এ আলোচনাই দুই দেশকে আত্মবিশ্বাস যোগাবে।

পুতিনও ট্রাম্পের মনোভাবের প্রশংসা করে বলেন, ২০২২ সালে যদি ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে থাকতেন, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুই হতো না। এই মন্তব্যই আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে আলোড়ন তোলে।

যদিও চূড়ান্ত সমাধান হয়নি, তবু বৈঠকে ‘বিপুল অগ্রগতি’ হয়েছে বলে দাবি করেছে উভয় পক্ষ। ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, মস্কোয় আরও একটি বৈঠক হতে পারে, যেখানে যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের প্রসঙ্গ আসবে। পুতিনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতায় যে পৌঁছানো যায়নি, সেকথা স্বীকার করেন ট্রাম্পও।

রাশিয়ার সংবাদমাধ্যমের ভাষায়, এই বৈঠক ওয়াশিংটন-মস্কো সম্পর্কের বরফ গলাতে বড় ভূমিকা রাখবে। এমনকি বৈঠকের পর ট্রাম্পও অর্থনৈতিক শুল্ক শিথিল করার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, এর আগে ২০২১ সালে সুইজারল্যান্ডের জেনিভায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন পুতিন। তার ঠিক চার বছর পর, ২০২৫ সালের আলাস্কা বৈঠককে নতুন অধ্যায়ের সূচনা বলেই দেখছে কূটনৈতিক মহল।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

চুক্তিহীন ভাবেই শেষ হল ট্রাম্প-পুতিনের আলাস্কা বৈঠক

আপডেট : ১৬ অগাস্ট ২০২৫, শনিবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : আলাস্কার আঙ্কোরেজ শহরের কাছে মার্কিন সেনা ঘাঁটি ‘জয়েন্ট বেস এলমেনডর্ফ-রিচার্ডসন’ শুক্রবার গভীর রাতে এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হল। সেখানেই মুখোমুখি বৈঠকে বসেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। প্রায় তিন ঘণ্টার বৈঠক (মধ্যাহ্নভোজ ধরা হলে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা) ঘিরে ছিল প্রবল উত্তেজনা। ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক কূটনীতির নানা ইস্যু উঠে এল আলোচনায়।

তবে বৈঠকের শুরুটা হয়েছিল একেবারেই অন্যভাবে। সংবাদমাধ্যম তাস জানিয়েছে, সভাকক্ষে নয়, বরং রানওয়েতে দাঁড়ানো মার্কিন প্রেসিডেন্টের ক্যাডিলাক লিমুজিন ‘দ্য বিস্ট’-এর ভেতরে বসেই প্রথম আলাপ শুরু করেন দুই নেতা। পাশাপাশি বসে হওয়া এই গোপন কথাবার্তাই মূল বৈঠকের রূপরেখা তৈরি করে দেয়। পরে ‘থ্রি-অন-থ্রি ফরম্যাটে’ আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়, যেখানে প্রত্যেক রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে ছিলেন আরও দু’জন করে শীর্ষ প্রতিনিধি।

আরও পড়ুন: ট্রাম্প-পুতিনের বৈঠককে স্বাগত জানাল ভারত

ট্রাম্পের সঙ্গে ছিলেন মার্কিন বিদেশসচিব মার্কো রুবিও ও প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। অন্যদিকে, পুতিনের সঙ্গী ছিলেন রুশ বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ এবং প্রেসিডেন্টের সহকারী ইউরি উশাকভ। আলোচনার মূল সিদ্ধান্ত ও যৌথ সাংবাদিক বৈঠকের বিবৃতি তৈরিতে তাঁদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

আরও পড়ুন: আলাস্কা বৈঠকের পর জেলেনস্কি-ন্যাটো নেতাদের ফোন ট্রাম্পের

সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল যুদ্ধবিরতি। অনেকেই ভেবেছিলেন, পুতিন ‘ভূমি বিনিময়’-এর প্রস্তাব তুলবেন। কিন্তু সেটি এড়িয়ে গিয়েও ট্রাম্প বললেন, যুদ্ধবন্দি বিনিময়সহ নানা বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে দ্রুতই একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হতে পারে। ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বৈঠককে ‘অত্যন্ত ইতিবাচক’ আখ্যা দিয়ে জানান, শান্তির পথে এগোতে এ আলোচনাই দুই দেশকে আত্মবিশ্বাস যোগাবে।

পুতিনও ট্রাম্পের মনোভাবের প্রশংসা করে বলেন, ২০২২ সালে যদি ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে থাকতেন, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুই হতো না। এই মন্তব্যই আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে আলোড়ন তোলে।

যদিও চূড়ান্ত সমাধান হয়নি, তবু বৈঠকে ‘বিপুল অগ্রগতি’ হয়েছে বলে দাবি করেছে উভয় পক্ষ। ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, মস্কোয় আরও একটি বৈঠক হতে পারে, যেখানে যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের প্রসঙ্গ আসবে। পুতিনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতায় যে পৌঁছানো যায়নি, সেকথা স্বীকার করেন ট্রাম্পও।

রাশিয়ার সংবাদমাধ্যমের ভাষায়, এই বৈঠক ওয়াশিংটন-মস্কো সম্পর্কের বরফ গলাতে বড় ভূমিকা রাখবে। এমনকি বৈঠকের পর ট্রাম্পও অর্থনৈতিক শুল্ক শিথিল করার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, এর আগে ২০২১ সালে সুইজারল্যান্ডের জেনিভায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন পুতিন। তার ঠিক চার বছর পর, ২০২৫ সালের আলাস্কা বৈঠককে নতুন অধ্যায়ের সূচনা বলেই দেখছে কূটনৈতিক মহল।