দেশে অঘোষিত জরুরি অবস্থা চলছে: কেন্দ্রকে নিশানা গেহলটের

- আপডেট : ২৬ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার
- / 109
জয়পুর: জরুরি অবস্থার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে দেশজুড়ে ‘সংবিধান হত্যা দিবস’ পালন করেছে পদ্ম শিবির। বিজেপির আমলেও কি দেশে অঘোষিত জরুরি অবস্থা চলছে? পদ্ম শিবিরকে নিশানা করে রাজস্থানের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট বললেন, দেশে এখন অঘোষিত জরুরি অবস্থা চলছে। বৃহস্পতিবার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করলেন, “বিজেপি সরকারের ‘সংবিধান হত্য দিবস’ পালন করা একজন অসৎ ব্যক্তির সততার পাঠ দেওয়ার মতো। এই দেশে যদি কখনও গণতন্ত্রের উপর বড় আঘাত লেগে থাকে, তবে তা গত ১১ বছরে হয়েছে। বর্তমান কেন্দ্রের সরকার পদ্ধতিগতভাবে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং মৌলিক স্বাধীনতাকে ধ্বংস করেছে।”
কেন্দ্রের সমালোচনা করে গেহলটের বক্তব্য, দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক পরিবেশ ‘অঘোষিত জরুরি অবস্থা’র সামিল। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সংবিধানের আনুষ্ঠানিক স্থগিতাদেশ বা ঘোষণা হয়নি। তবুও জনগণের অধিকার, বাকস্বাধীনতা এবং বিরোধী কণ্ঠস্বরকে চূর্ণ করার চেষ্টা চলছে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “আজকের ভারতে একজন সাংবাদিক যদি সরকারকে প্রশ্ন করেন, তাহলে তাকে দেশদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কোনো শিক্ষার্থী প্রতিবাদ করলে তাকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়; কোনও বিরোধী নেতা আওয়াজ তুললেই তাঁর বাড়িতে ইডি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।” গেহলটের প্রশ্ন, “এটাই কি বিজেপির গণতন্ত্রের নতুন মডেল? না। এটা গণতন্ত্রের স্পষ্ট হত্যা।” ইন্দিরা গান্ধির সময়ের জরুরি অবস্থার প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা বলেন, জরুরি অবস্থার সময় (১৯৭৫-৭৭) কোনও মুখ্যমন্ত্রীকে জেল ঢোকানি হয়নি। কোনও সাংসদের সদস্যপদও বাতিল করা হয়নি। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন এবং দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে আর্থিক তছরুপের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাহুল গান্ধির সাংসদপদ বাতিল করা হয়েছে।
২০০-রও বেশি বিরোধী নেতার বিরুদ্ধে ইডির মামলা হয়েছে, যা বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে রহস্যজনকভাবে বন্ধ হয়ে যায় বলেও মোদি সরকারকে আক্রমণ করেন রাজস্থানের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “বিজেপি প্রতিনিয়ত অবিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিকে অচল করার চেষ্টা করছে। জরুরি অবস্থার সময় ঘোড়া কেনাবেচার মাধ্যমে কোনও সরকারের পতন হয়নি। কিন্তু গত ১১ বছরে মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, অরুণাচল প্রদেশ, গোয়া, মণিপুরের মতো রাজ্যে দলত্যাগের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করা হয়েছে।” গেহলটের দাবি, “আজকাল দম্পতিরাও নজরদারির ভয়ে নিয়মিত ফোনকলে কথা বলতে ভয় পান। তারা ফেসটাইম বা হোয়াটসঅ্যাপের আশ্রয় নেন।”
সাংবিধানিক বিধানগুলিকে উপেক্ষা এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোয় আঘাত করছে মোদি সরকার বলে মন্তব্য করেছেন গেহলট। তিনি বলেন, “সম্মতি ছাড়াই রাষ্ট্রীয় বিষয়গুলিতে আইন চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে মুখ্যমন্ত্রীরা পুতুল। আর বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলিতে রাজ্যপালরা হস্তক্ষেপ করে রাজ্য সরকারকে অচল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এটা সংবিধান ও গণতন্ত্রের ওপর সরাসরি আঘাত।” কংগ্রেস নেতার সাফ বার্তা, “আমরা ভয় পাব না। আমরা মাথা নত করব না। সংবিধান, গণতন্ত্র ও জনগণের কণ্ঠস্বর রক্ষার জন্য আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।”