ভারত-পাকিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে আজ রুদ্ধদ্বার আলোচনা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে

- আপডেট : ৫ মে ২০২৫, সোমবার
- / 126
পুবের কলম ডেস্ক: জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আজ সোমবার ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি নিয়ে একটি রুদ্ধদ্বার আলোচনা হতে চলেছে। পাকিস্তান এই বিষয়ে জরুরি বৈঠকের আহ্বান জানানোর পর নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান সভাপতি গ্রিস এই বৈঠকের সময় নির্ধারণ করেছেন।
এ মাসে জাতিসংঘের ১৫ সদস্যবিশিষ্ট শক্তিশালী নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিত্ব করছে গ্রিস। বর্তমানে পাকিস্তান অস্থায়ী সদস্য হিসেবে পরিষদে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। পাকিস্তানের তরফে এই “রুদ্ধদ্বার আলোচনা” (Closed Consultation) চাওয়া হয় ভারত-পাকিস্তান বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে, এবং সেটিই আজ ৫ মে বিকালে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
নিরাপত্তা পরিষদের ৫টি স্থায়ী সদস্য – চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র । ছাড়াও অস্থায়ী ১০ সদস্য- আলজেরিয়া, ডেনমার্ক, গ্রিস, গায়ানা, পাকিস্তান, পানামা, দক্ষিণ কোরিয়া, সিয়েরা লিওন, স্লোভেনিয়া এবং সোমালিয়া।
২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁও এলাকায় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর দক্ষিণ এশিয়ার দুটি পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে গ্রিসের রাষ্ট্রদূত ও নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি ইভানজেলোস সেকেরিস বলেন, “এই বৈঠক হওয়া উচিত যাতে সকল পক্ষ তাদের মতামত জানাতে পারে এবং উত্তেজনা প্রশমনে তা সাহায্য করতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা যোগাযোগ রাখছি। খুব শিগগিরই এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর এক প্রশ্নের জবাবে সেকেরিস বলেন, পাকিস্তান নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হলেও ভারতের প্রতি সন্ত্রাসবাদের যে ঘটনা ঘটেছে তা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। তিনি বলেন, “আমরা যেকোনো ধরনের সন্ত্রাসবাদকে কঠোরভাবে নিন্দা করি। পহেলগাঁও-এ যে নৃশংস হামলায় নিরীহ নাগরিকদের প্রাণ হারাতে হয়েছে, তা গভীরভাবে দুঃখজনক।”
তিনি বলেন, “আমরা ভারতের, নেপালের সরকার এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। আমরা সর্বত্র, যেখানেই সন্ত্রাসবাদ ঘটুক না কেন, তার বিরুদ্ধেই আছি। তবে এই অঞ্চলের দুই দেশের মধ্যে যে উত্তেজনা বাড়ছে তা উদ্বেগজনক।”
পহেলগাঁও হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর নিরাপত্তা পরিষদের সকল সদস্যদের (চীন ও পাকিস্তান ব্যতীত) সঙ্গে আলোচনা করেন। এই আলোচনায় তিনি জোর দিয়ে বলেন, “এই হামলার পরিকল্পনাকারী, মদতদাতা ও কারিগরদের বিচারের আওতায় আনা উচিত।”
তিনি গ্রিসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জর্জ গেরাপেট্রাইটিসের সঙ্গেও আলোচনা করেন এবং বলেন, “গ্রিস যে সীমানা পেরিয়ে সন্ত্রাসবাদকে ঘৃণা করে তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। আমাদের কৌশলগত অংশীদারিত্ব আমাদের সম্পর্কের গভীরতা প্রকাশ করে।”
জয়শঙ্কর জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, যুক্তরাজ্যের ডেভিড ল্যামি, ফ্রান্সের জাঁ-নোয়েল বারো, দক্ষিণ কোরিয়ার চো তে-ইউল, ডেনমার্কের লার্স রাসমুসেন, সিয়েরা লিওনের টিমোথি কাব্বা, আলজেরিয়ার আহমেদ আতাফ, গায়ানার হিউগ হিলটন টড, স্লোভেনিয়ার তানজা ফায়ন, সোমালিয়ার আবদিসালাম আলি এবং পানামার হাভিয়ের ভাসকেসের সঙ্গেও এই ইস্যুতে আলোচনা করেন।
গত শুক্রবার জাতিসংঘে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি আসিম ইফতিখার আহমেদ বলেন, “আমরা মনে করি, জম্মু ও কাশ্মীরের প্রেক্ষাপটে যা কিছু ঘটছে তা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শান্তির জন্য হুমকি। সুতরাং নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশ হিসেবে পাকিস্তানের অধিকার আছে এই ইস্যুতে আলোচনা আহ্বান করার।”
তিনি জানান, “আমরা বিষয়টি নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের এবং আগের মাসের ও এই মাসের সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং উপযুক্ত মনে হলে বৈঠক আহ্বান করব।”
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহেই পাকিস্তানি দূত গুতেরেসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন।