২৪ অক্টোবর ২০২৫, শুক্রবার, ৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সেনাবাহিনীতে দাড়িতে ‘না’, মার্কিন নির্দেশের তীব্র নিন্দা জানালেন মার্কিন আইনপ্রণেতা

কিবরিয়া আনসারি
  • আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২৫, বৃহস্পতিবার
  • / 75

পুবের কলম, নিউ ইয়র্ক: সামরিক বাহিনীতে কর্মরত সেনা জওয়ানদের দাড়ি রাখার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এতে বিপাকে পড়েছেন শিখ, মুসলিম এবং ইহুদিরা। ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানালেন বিশিষ্ট মার্কিন আইনপ্রণেতা। একইসঙ্গে আমেরিকান শিখদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিশিষ্ট মার্কিন আইনপ্রণেতা টমাস আর সুওজি মার্কিন প্রশাসনকে এই নীতি পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন। কংগ্রেসম্যান টমাস আর সুওজি দাবি জানিয়েছেন, এমন একটি নীতি নেওয়া হোক যাতে সেনায় কর্মরত সদস্যরা মধ্যে দাড়ি রাখতে পারেন। অকাটা চুল এবং দাড়ি ধরে রাখা তাদের বিশ্বাসের মূল নীতি।

সম্প্রতি সামরিক বাহিনীর পরিচ্ছন্নতা ও সাজসজ্জা সংক্রান্ত নতুন নীতি ঘোষণা করেছেন আমেরিকার প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ। ভার্জিনিয়ার কোয়ান্টিকোতে সামরিক কর্তাদের উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময়ে তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, বাহিনীতে থাকতে হলে লম্বা চুল, দাড়ি রাখা যাবে না। ব্যক্তিগত সাজসজ্জাও নিষিদ্ধ। শুধু স্পেশাল ফোর্সের সদস্যরাই ছাড় পাবেন। প্রায় ৮০০ জেনারেল, অ্যাডমিরাল এবং শীর্ষ কর্তাদের সামনে দাড়িওলা সেনাদের ‘বিয়ার্ডো’ বলে উপহাস করেন পিট হেগসেথ। এই নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়। প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথকে সম্বোধন করে সাম্প্রতিক এক চিঠিতে কংগ্রেসম্যান বলেছেন, যে শিখরা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ উভয় ক্ষেত্রেই প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আমেরিকান সৈন্যদের পাশাপাশি লড়াই করেছে। পাশাপাশি মার্কিন প্রশাসনের সমালোচনা করে নিউ ইয়র্কের তৃতীয় কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্টের মার্কিন প্রতিনিধি বলেছেন, “শিখদের জন্য নিজের দেশের সেবা করা একটি পবিত্র কর্তব্য। সাধু-সিপাহী (সাধু-সৈনিক) আদর্শের মূর্ত প্রতীক যা বিশ্বাস এবং সেবার মিশ্রণ। শিখ ধর্মের অনুগামীদের ঈশ্বরের সামনে ভক্তি এবং সাম্যের প্রতীক হিসাবে কাটা চুল এবং দাড়ি বজায় রাখতে হয়।”

আরও পড়ুন: আধিপত্য কায়েমই মূল লক্ষ্য সাম্রাজ্যবাদীদের, সারা বিশ্বে ৭৫০টি মার্কিন সামরিক ঘাঁটি

উদ্বেগ প্রকাশ করে সুওজি বলেন, তার কিছু শিখ, মুসলিম এবং আফ্রিকান আমেরিকান ভোটার আশঙ্কা করছেন যে ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক বা চিকিৎসা সংক্রান্ত ছাড় ছাড়াই যদি “দাড়ি নিষিদ্ধকরণ” কার্যকর করা হয়, তাহলে অজান্তেই তাদের ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় দেশের সেবা করা থেকে বিরত থাকতে পারে। উল্লেখ্য, গত মাসে আমেরিকান জেনারেল এবং ফ্ল্যাগ অফিসারদের উদ্দেশ্যে তাঁর ভাষণে হেগসেথ বলেছিলেন, “আমরা আমাদের চুল কাটব, দাড়ি ন্যাড়া করব এবং মান মেনে চলব। অপেশাদার চেহারার যুগ শেষ হয়ে গেছে। আর দাড়ি নেই।” মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিবের এই মন্তব্যের পরই সুওজি বলেন, এই মন্তব্যগুলি অন্যথায় “অত্যন্ত অনুপ্রাণিত” আমেরিকানদের মধ্যে প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। যাদের বিশ্বাস বা চিকিৎসা অবস্থার জন্য মুখের চুল রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়।

আরও পড়ুন: “ঘুঙ্গাট, পাগড়ি, ক্রসের তাহলে কি হবে ?” জানতে চাইল কর্ণাটক হাইকোর্ট

কংগ্রেসম্যানের আরও বক্তব্য, “আমি বিশ্বাস করি সর্বোচ্চ মান বজায় রাখা সম্পূর্ণরূপে সম্ভব। একই সাথে যুক্তিসঙ্গত, কেস-বাই-কেস সুযোগ-সুবিধা বজায় রাখা – নিশ্চিত করা যে যারা সেবা করতে ইচ্ছুক তারা তাদের গভীর বিশ্বাসের সাথে আপস না করেই তা করতে পারে তা নিশ্চিত করা।” কংগ্রেসম্যান উল্লেখ করেছেন, যে অনেক মুসলিম পুরুষের জন্য দাড়ি রাখা একটি সুন্নাহ মুয়াক্কাদাহ। এটি একটি গভীরভাবে প্রস্তাবিত ধর্মীয় অনুশীলন যা বিনয়ী এবং ঈশ্বরের প্রতি ভক্তির প্রতীক। অনেক আফ্রিকান আমেরিকানদের জন্য চুল সাংস্কৃতিক পরিচয় এবং ঐতিহ্যের সাথে গভীরভাবে আবদ্ধ। তাছাড়া ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার আইন (আরএফআরএ) এর মতো বিদ্যমান আইনি সুরক্ষাগুলি ইতিমধ্যে এই জাতীয় ভারসাম্যের অনুমতি দেয়।

অন্যদিকে, সুওজির কার্যালয় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, এই প্রস্তাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ভারতীয় আমেরিকানদের ইতিহাস ও অবদানকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। হিন্দু, শিখ, জৈন, মুসলিম বা অন্যান্য ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক পরিচয়ের জন্য তাদের টার্গেট করা হয়েছে। ভারতীয় আমেরিকানরা এবং বৃহত্তর দক্ষিণ এশীয় সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণা, বৈষম্য এবং সহিংসতার নিন্দা জানাচ্ছি। ভারতীয় আমেরিকানরা দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে আমাদের সম্প্রদায়ের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের সাফল্যের গল্পগুলি আমেরিকান স্বপ্নের সেরাকে প্রতিফলিত করে।”

প্রতিবেদক

কিবরিয়া আনসারি

Kibria obtained a master's degree in journalism from Aliah University. He has been in journalism since 2018, gaining work experience in multiple organizations. Focused and sincere about his work, Kibria is currently employed at the desk of Purber Kalom.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

সেনাবাহিনীতে দাড়িতে ‘না’, মার্কিন নির্দেশের তীব্র নিন্দা জানালেন মার্কিন আইনপ্রণেতা

আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২৫, বৃহস্পতিবার

পুবের কলম, নিউ ইয়র্ক: সামরিক বাহিনীতে কর্মরত সেনা জওয়ানদের দাড়ি রাখার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এতে বিপাকে পড়েছেন শিখ, মুসলিম এবং ইহুদিরা। ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানালেন বিশিষ্ট মার্কিন আইনপ্রণেতা। একইসঙ্গে আমেরিকান শিখদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিশিষ্ট মার্কিন আইনপ্রণেতা টমাস আর সুওজি মার্কিন প্রশাসনকে এই নীতি পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন। কংগ্রেসম্যান টমাস আর সুওজি দাবি জানিয়েছেন, এমন একটি নীতি নেওয়া হোক যাতে সেনায় কর্মরত সদস্যরা মধ্যে দাড়ি রাখতে পারেন। অকাটা চুল এবং দাড়ি ধরে রাখা তাদের বিশ্বাসের মূল নীতি।

সম্প্রতি সামরিক বাহিনীর পরিচ্ছন্নতা ও সাজসজ্জা সংক্রান্ত নতুন নীতি ঘোষণা করেছেন আমেরিকার প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ। ভার্জিনিয়ার কোয়ান্টিকোতে সামরিক কর্তাদের উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময়ে তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, বাহিনীতে থাকতে হলে লম্বা চুল, দাড়ি রাখা যাবে না। ব্যক্তিগত সাজসজ্জাও নিষিদ্ধ। শুধু স্পেশাল ফোর্সের সদস্যরাই ছাড় পাবেন। প্রায় ৮০০ জেনারেল, অ্যাডমিরাল এবং শীর্ষ কর্তাদের সামনে দাড়িওলা সেনাদের ‘বিয়ার্ডো’ বলে উপহাস করেন পিট হেগসেথ। এই নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়। প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথকে সম্বোধন করে সাম্প্রতিক এক চিঠিতে কংগ্রেসম্যান বলেছেন, যে শিখরা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ উভয় ক্ষেত্রেই প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আমেরিকান সৈন্যদের পাশাপাশি লড়াই করেছে। পাশাপাশি মার্কিন প্রশাসনের সমালোচনা করে নিউ ইয়র্কের তৃতীয় কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্টের মার্কিন প্রতিনিধি বলেছেন, “শিখদের জন্য নিজের দেশের সেবা করা একটি পবিত্র কর্তব্য। সাধু-সিপাহী (সাধু-সৈনিক) আদর্শের মূর্ত প্রতীক যা বিশ্বাস এবং সেবার মিশ্রণ। শিখ ধর্মের অনুগামীদের ঈশ্বরের সামনে ভক্তি এবং সাম্যের প্রতীক হিসাবে কাটা চুল এবং দাড়ি বজায় রাখতে হয়।”

আরও পড়ুন: আধিপত্য কায়েমই মূল লক্ষ্য সাম্রাজ্যবাদীদের, সারা বিশ্বে ৭৫০টি মার্কিন সামরিক ঘাঁটি

উদ্বেগ প্রকাশ করে সুওজি বলেন, তার কিছু শিখ, মুসলিম এবং আফ্রিকান আমেরিকান ভোটার আশঙ্কা করছেন যে ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক বা চিকিৎসা সংক্রান্ত ছাড় ছাড়াই যদি “দাড়ি নিষিদ্ধকরণ” কার্যকর করা হয়, তাহলে অজান্তেই তাদের ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় দেশের সেবা করা থেকে বিরত থাকতে পারে। উল্লেখ্য, গত মাসে আমেরিকান জেনারেল এবং ফ্ল্যাগ অফিসারদের উদ্দেশ্যে তাঁর ভাষণে হেগসেথ বলেছিলেন, “আমরা আমাদের চুল কাটব, দাড়ি ন্যাড়া করব এবং মান মেনে চলব। অপেশাদার চেহারার যুগ শেষ হয়ে গেছে। আর দাড়ি নেই।” মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিবের এই মন্তব্যের পরই সুওজি বলেন, এই মন্তব্যগুলি অন্যথায় “অত্যন্ত অনুপ্রাণিত” আমেরিকানদের মধ্যে প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। যাদের বিশ্বাস বা চিকিৎসা অবস্থার জন্য মুখের চুল রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়।

আরও পড়ুন: “ঘুঙ্গাট, পাগড়ি, ক্রসের তাহলে কি হবে ?” জানতে চাইল কর্ণাটক হাইকোর্ট

কংগ্রেসম্যানের আরও বক্তব্য, “আমি বিশ্বাস করি সর্বোচ্চ মান বজায় রাখা সম্পূর্ণরূপে সম্ভব। একই সাথে যুক্তিসঙ্গত, কেস-বাই-কেস সুযোগ-সুবিধা বজায় রাখা – নিশ্চিত করা যে যারা সেবা করতে ইচ্ছুক তারা তাদের গভীর বিশ্বাসের সাথে আপস না করেই তা করতে পারে তা নিশ্চিত করা।” কংগ্রেসম্যান উল্লেখ করেছেন, যে অনেক মুসলিম পুরুষের জন্য দাড়ি রাখা একটি সুন্নাহ মুয়াক্কাদাহ। এটি একটি গভীরভাবে প্রস্তাবিত ধর্মীয় অনুশীলন যা বিনয়ী এবং ঈশ্বরের প্রতি ভক্তির প্রতীক। অনেক আফ্রিকান আমেরিকানদের জন্য চুল সাংস্কৃতিক পরিচয় এবং ঐতিহ্যের সাথে গভীরভাবে আবদ্ধ। তাছাড়া ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার আইন (আরএফআরএ) এর মতো বিদ্যমান আইনি সুরক্ষাগুলি ইতিমধ্যে এই জাতীয় ভারসাম্যের অনুমতি দেয়।

অন্যদিকে, সুওজির কার্যালয় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, এই প্রস্তাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ভারতীয় আমেরিকানদের ইতিহাস ও অবদানকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। হিন্দু, শিখ, জৈন, মুসলিম বা অন্যান্য ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক পরিচয়ের জন্য তাদের টার্গেট করা হয়েছে। ভারতীয় আমেরিকানরা এবং বৃহত্তর দক্ষিণ এশীয় সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণা, বৈষম্য এবং সহিংসতার নিন্দা জানাচ্ছি। ভারতীয় আমেরিকানরা দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে আমাদের সম্প্রদায়ের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের সাফল্যের গল্পগুলি আমেরিকান স্বপ্নের সেরাকে প্রতিফলিত করে।”