শীর্ষে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি, সংখ্যালঘুদের স্বাধীনতা নিয়ে গভীর প্রশ্ন
দেশজুড়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ১৮৪টি হামলা-আক্রমণ ও নির্যাতন: রিপোর্ট

- আপডেট : ১৫ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার
- / 156
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে দেশজুড়ে সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর বেড়েছে সহিংসতা, আক্রমণ, হামলা ও নির্যাতন। চলতি বছরের ২২ এপ্রিল থেকে ৮ মে পর্যন্ত মুসলিমদের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ১৮৪টি বিদ্বেষমূলক ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে শুধুমাত্র পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে ১০৬টি সহিংসতা, আক্রমণ, হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অফ সিভিল রাইটস (এপিসিআর)মানবাধিকার সংগঠনের এক রিপোর্টে এমনই চাংল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।
সম্প্রতি ‘পহেলগাঁওয়ের পর ঘৃণা: সহিংসতা ও ভীতি প্রদর্শনের মানচিত্র’ শিরোনামে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে এপিসিআর। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতেই সবচেয়ে বেশি মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণাভাষণ, হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা সামনে এসেছে। ঘৃণা ভাষণের ফলে কমপক্ষে ৩১৬ জন মুসলিম ব্যক্তিকে শারীরিক নিগৃহ ও নির্যাতন করা হয়েছে বলে রিপোর্টে উঠে এসেছে। সংস্থাটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, মুসলিমদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে যোগীর উত্তরপ্রদেশে। রাজ্যটিতে হামলা ও নির্যাতনের ৪৩টি ঘটনা ঘটেছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বিজেপি শাসিত মহারাষ্ট্র ও উত্তরাখণ্ড। দুটি রাজ্যেই ২৪টি করে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ২০টি সহিংসতার ঘটনা নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে মধ্যপ্রদেশ। রাজধানী দিল্লিতে ঘটেছে ৬টি ঘটনা। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গে ৯টি, হরিয়ানায় ৯টি, বিহারে ৬টি, হিমাচল প্রদেশে ৬টি, পঞ্জাবে ৪টি, রাজস্থানে ৩টি, তেলেঙ্গানায় ৩টি, ওড়িশায় ১টি, অসমে ১টি, জম্মু ও কাশ্মীরে ২টি, কর্ণাটক ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল চণ্ডীগড়ে ৬টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পরই রাজ্যগুলিতে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি বড়সড় প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক নেতা থেকে প্রশাসনিক কর্তাদের ভূমিকা নিয়েও।
এপিসিআর-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশজুড়ে ৮৪টি বিদ্বেষ ও ঘৃণা ভাষণ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় জনসভা থেকে দেওয়া ঘৃণা ভাষণ, রাজনৈতিক নেতাদের বিদ্বেষমূলক মন্তব্য এবং একশ্রেণীর সংবাদ মাধ্যমে উস্কানিমূলক বক্তব্য। মুসলিমদের হুমকি দেওয়া, বলপ্রয়োগ করে তাদের সম্পত্তি খালি করা, ব্যবসা বন্ধ করা এবং ধর্মীয় রীতি পালন না করতে ভয় দেখানোর ৬৪টি ঘটনা ঘটেছে। মুসলিমদের হয়রানি করার ৪২টি ঘটনা সামনে এসেছে। মুসলিমদের লক্ষ্যবস্তু করে তাদের ওপর হামলার ৩৯টি ঘটনা ঘটেছে। মুসলিমদের মসজিদ, মাদ্রাসা ও দোকানপাট ভাঙচুরের ১৯টি ঘটনা ঘটেছে। ১৪টি হুমকি, ৭টি মৌখিক গালিগালাজের ঘটনা ঘটেছে। রিপোর্টে উল্লেখিত ঘটনাগুলি নিয়ে দেশে সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় ও ব্যক্তি স্বাধীনতা নিয়ে গভীর প্রশ্ন উঠেছে।
ক্ষতিগ্রস্থ একাধিক মুসলিম পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে গোটা ঘটনা রেকর্ড করেছে মানবাধিকার সংগঠনটি। উত্তরপ্রদেশের এক ক্ষতিগ্রস্থ মুসলিম পরিবার এপিসিআর-কে বলেছে, “আমার ভাই মাথায় টুপি পরে কলেজ গিয়েছিল বলে তাঁকে ধরে একদল যুবক ব্যাপক মারধর করে। হামলাকারীরা তাকে জঙ্গি বলে দাগিয়ে দেয়। এমনকি তাঁকে কলেজে আসতে দেখলে খুন করে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়।” মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরের এক মুসলিম সবজি বিক্রেতাকে বারবার হেনস্থা ও হুমকির মুখে তাঁর স্টল বন্ধ করে দিতে বাধ্য করা হয়েছে। তিনি বলেন, “তারা আমাকে পাকিস্তান চলে যেতে বলে।” এই সমস্ত ঘটনার জন্য কার্যত ঘর থেকে ভেরোতে ভয় পাচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্থ মুসলিম পরিবারগুলি।
এপিসিআর-এর মতে, পহেলগাঁও হামলা পর মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনা নতুন মাত্রায় পৌঁছায়। একাধিক জায়গায় গুজব ও হিংসা ছড়িয়ে মুসলিমদের ঘাড়ে দোষ চাপানো হয়েছে। পরে ওই ঘটনার জন্য তাদের নিশানা বানিয়ে আক্রমণ করা হয়েছে। এই সমস্ত সহিংসতার কারণে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে নষ্ট করছে। এই ঘটনাগুলিকে কড়া হাতে দমন না করলে দেশ গভীর সাম্প্রদায়িক বিভাজনের ঝুঁকি তৈরি করবে।