বিহারে ৩ লাখ ভোটারকে ‘সন্দেহজনক নাগরিক’ ঘোষণা

- আপডেট : ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, বুধবার
- / 82
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : সম্প্রতি বিহারে নির্বাচন কমিশনের এক নজিরবিহীন পদক্ষেপে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। কমিশনের একটি সমীক্ষার ভিত্তিতে রাজ্যের প্রায় ৩ লক্ষ ভোটারকে ‘সন্দেহজনক নাগরিক’ (ডাউটফুল সিটিজেন) হিসেবে চিহ্নিত করে নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
এই পদক্ষেপের ফলে বিপুল সংখ্যক ভোটারকে এখন নিজেদের নাগরিকত্বের প্রমাণ দাখিল করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের দাবি, ভোটের তালিকা থেকে ত্রুটিপূর্ণ বা ভুয়ো নাম বাদ দিয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাই এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য। ‘নিউজক্লিক’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই নোটিশগুলি মূলত এমন ভোটারদের কাছে পাঠানো হয়েছে, যাদের ভোটার আইডি কার্ডে কিছু অসঙ্গতি রয়েছে।
এর মধ্যে থাকতে পারে একই ঠিকানা বা একই ছবি একাধিক ভোটারের নামে ব্যবহার হওয়া, বা ভোটার আইডি কার্ডে থাকা তথ্যের সঙ্গে অন্যান্য সরকারি নথিপত্রের মিল না থাকা। নোটিশপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের এখন নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সচিত্র পরিচয়পত্র, জন্ম প্রমাণপত্র, ঠিকানা প্রমাণপত্র ইত্যাদি নথি জমা দিয়ে নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হবে। তাছাড়া মোদি সরকার আবার সব রাজ্যকে ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি করতে বলেছে। তাদের আশঙ্কা, সন্দেহজনক ভোটারদেরকে হয়তো ক্যাম্পে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে।
এই পদক্ষেপের ফলে রাজ্যজুড়ে উদ্বেগ ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষেরা এর ফলে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হচ্ছেন। বহু মানুষের কাছে প্রয়োজনীয় সব নথি নেই অথবা সেগুলির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিরোধীরা অভিযোগ করছে যে, এই প্রক্রিয়াটি মূলত দুর্বল অর্থনৈতিক বা সামাজিক অবস্থান সম্পন্ন মানুষদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার একটি সুপরিকল্পিত চক্রান্ত। তাদের মতে, এটি একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে করা হচ্ছে, যা গণতন্ত্রের মূল আদর্শের পরিপন্থী।
নির্বাচন কমিশনের এই পদক্ষেপ আপাতদৃষ্টিতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার জন্য প্রয়োজনীয় মনে হলেও, এর গভীর কিছু সমস্যা রয়েছে। যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ নিজেদের পরিচয়পত্র তৈরি করতেই হিমশিম খায়, সেখানে হঠাৎ করে এমন ব্যাপক যাচাই প্রক্রিয়া তাদের জন্য এক বিরাট বোঝা। এই পদক্ষেপের ফলে বহু বৈধ ভোটার, যারা হয়তো সামান্য ভুল বা প্রশাসনিক জটিলতার কারণে ‘সন্দেহজনক’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন, তারা ভোটদানের অধিকার হারাতে পারেন।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রতিটি নাগরিকের ভোটাধিকার সুরক্ষিত থাকা আবশ্যক। তাই স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি, নির্বাচন কমিশনের উচিত এই যাচাই প্রক্রিয়াকে আরও মানবিক ও সহজলভ্য করে তোলা, যাতে কোনও প্রকৃত নাগরিক অযথা হয়রানির শিকার না হন। নইলে, এই ধরনের পদক্ষেপ গণতন্ত্রের ভিত্তিকে দুর্বল করে তুলবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।