২০ অগাস্ট ২০২৫, বুধবার, ৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মোবাইল ব‍্যবহার করতে দিয়ে হ‍্যাকিংয়ের ফাঁদে আসিফ, চেন্নাইয়ের জেলে বন্দী , ৯২ দিন পর মুক্ত পরিযায়ী শ্রমিক

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ২৩ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার
  • / 26

দেবশ্রী মজুমদার, বীরভূম: কে জানতো নিজের মোবাইল অন‍্যকে ব‍্যবহার করতে দিলে হ‍্যাকিং চক্রের ফাঁদে পড়ে জেল খাটতে হবে! এমন অঘটন কাণ্ড ঘটেছে মুরারইয়ের পাইকর থানার কাঠিয়া গ্রামের একজন পরিযায়ী শ্রমিকের ভাগ‍্যে। নাম আসিফ সেখ (২১)।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মাস তিনেক আগে বীরভূম জেলার পাইকর থানার কাঠিয়া গ্রামের পরিযায়ী শ্রমিক কাজের জন্য তামিলনাড়ু রাজ্যের চিঙ্গালপেট্টু এলাকায় গেছিলেন। তখনও আসিফ জানতো না নিজের অগোচরে কী মারাত্মক ভুল সে করেছে!
সেখানে কিছুদিন কাজ করার পর‌ই বিপদ ঘটে।

হঠাৎ একদিন তামিলনাড়ু রাজ্যের সাইবার ক্রাইম বিভাগের পুলিশ গ্রেফতার করে পরিযায়ী শ্রমিক আসিফকে। গ্রেফতারের কারণ আসিফ নিজেও ঠিক বুঝে উঠতে পারছিল না। খোঁজ নিয়ে জানতে পারা যায় যে, আসিফের নামে সাইবার ক্রাইমে একটি অভিযোগ আছে হ্যাকিংয়ের মতো গুরুতর অপরাধের।

কিন্তু আসিফের মতো সাধারণ ছেলের পক্ষে এই ধরণের কাজ করার জন‍্য বিদ‍্যা বুদ্ধি বা দক্ষতা কোনটাই ছিল না। তাছাড়া সে একজন সাধারণ পেশায় বহুরূপী ঘরের ছেলে। পেটের তাগিদে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে তামিলনাড়ু এসেছিল। এই খবরে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে পরিবারের মাথায়।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, মাস ছয়েক আগে আসিফ যখন চেন্নাইয়ে কাজ করতো তখন কিছু ছেলের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়। মাঝেমধ্যে তারা আসিফের মোবাইল কাজের সাইটে ফোন করার নামে ব্যবহার করত। আসিফ সাধাসিধে ছেলে অতটা বুঝে উঠতে পারেনি যে বন্ধুদের ফোন দেওয়াটা তার বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

সেই সময়ে আসিফের মোবাইল ব্যবহার করে একটা হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটে। অফিসাররা তদন্ত করে আসিফের মোবাইল নম্বরটি খুঁজে পান। পরের বার আসিফ তামিলনাড়ু কাজে গেলে সেখানকার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। কাজ করতে গিয়ে পরিচিত হওয়া ছেলেগুলোও সেখান থেকে কবেই চলে গেছিল। কে জানত তারাই আসিফের কপালে বিপদ ডেকে নিয়ে আসবে।

আসিফের বাবা একজন বহুরুপী শিল্পী, ইনকাম বলতে কোনো রকমে সংসার চলে। ছেলেকে ফেরত পাওয়ার জন্য আসিফের বাবা বহু জায়গাতে যোগাযোগ করে কিন্তু সবাই তার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। যে পরিবার কখনো থানা পুলিশের দারস্থ হয়নি সেই পরিবারের সদস্য জেলবন্দি। এলাকার লোকের কথাবার্তা শুনে আরো ভেঙে পড়ে আসিফের পরিবার। কিভাবে ছেলেটিকে জেল থেকে ছাড়ানো যায় সে ব্যাপারে কেউ পরামর্শটুকুও দেয়নি আসিফের পরিবারকে। আসিফের বাবা মনিরুল শেখ জানান, ছেলে তামিলনাড়ুতে গ্রেপ্তার হয়েছে শুনে ভেঙে পড়েছিলাম। আমার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালেও ভর্তি হয়েছিল। কোনভাবেই বিষয়টিকে মেনে নিতে পারছিলাম না।

বহু মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি কিন্তু সহযোগিতার জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি। তখনই বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের সদস‍্য মুরারইয়ের বাসিন্দা মহম্মদ রিপন পরিবারের সাহায্যে এগিয়ে আসেন। ৯২ দিন আইনী লড়াইয়ের পর চেন্নাইয়ের জেলে বন্দি পরিযায়ী শ্রমিক আসিফ উদ্ধার হয়ে পরিবারের কাছে ফিরে আসে।

মহঃ রিপন জানান, আমি আমার তামিলনাড়ুতে পরিচিত কয়েকজন বন্ধুর সহযোগিতায় কাজ শুরু করি ও তাদেরকে বিষয়টি বলি। আমার বন্ধু অলোক, আসিফকে ছাড়িয়ে আনতে খুব সহযোগিতা করেছে।

ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট বহুবার আসিফের বেল বাতিল করেছিল। তারপর আমরা সেশন কোর্টে যাই। প্রায় ৯২ দিন পর জামিন মঞ্জুর হয়।আমাদের কাছে এটা খুব বড় একটা চ্যালেঞ্জিং লড়াই ছিল। আইনি লড়াইয়ে আদালতে আসিফ নির্দোষ প্রমাণিত হয়।

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

মোবাইল ব‍্যবহার করতে দিয়ে হ‍্যাকিংয়ের ফাঁদে আসিফ, চেন্নাইয়ের জেলে বন্দী , ৯২ দিন পর মুক্ত পরিযায়ী শ্রমিক

আপডেট : ২৩ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার

দেবশ্রী মজুমদার, বীরভূম: কে জানতো নিজের মোবাইল অন‍্যকে ব‍্যবহার করতে দিলে হ‍্যাকিং চক্রের ফাঁদে পড়ে জেল খাটতে হবে! এমন অঘটন কাণ্ড ঘটেছে মুরারইয়ের পাইকর থানার কাঠিয়া গ্রামের একজন পরিযায়ী শ্রমিকের ভাগ‍্যে। নাম আসিফ সেখ (২১)।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মাস তিনেক আগে বীরভূম জেলার পাইকর থানার কাঠিয়া গ্রামের পরিযায়ী শ্রমিক কাজের জন্য তামিলনাড়ু রাজ্যের চিঙ্গালপেট্টু এলাকায় গেছিলেন। তখনও আসিফ জানতো না নিজের অগোচরে কী মারাত্মক ভুল সে করেছে!
সেখানে কিছুদিন কাজ করার পর‌ই বিপদ ঘটে।

হঠাৎ একদিন তামিলনাড়ু রাজ্যের সাইবার ক্রাইম বিভাগের পুলিশ গ্রেফতার করে পরিযায়ী শ্রমিক আসিফকে। গ্রেফতারের কারণ আসিফ নিজেও ঠিক বুঝে উঠতে পারছিল না। খোঁজ নিয়ে জানতে পারা যায় যে, আসিফের নামে সাইবার ক্রাইমে একটি অভিযোগ আছে হ্যাকিংয়ের মতো গুরুতর অপরাধের।

কিন্তু আসিফের মতো সাধারণ ছেলের পক্ষে এই ধরণের কাজ করার জন‍্য বিদ‍্যা বুদ্ধি বা দক্ষতা কোনটাই ছিল না। তাছাড়া সে একজন সাধারণ পেশায় বহুরূপী ঘরের ছেলে। পেটের তাগিদে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে তামিলনাড়ু এসেছিল। এই খবরে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে পরিবারের মাথায়।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, মাস ছয়েক আগে আসিফ যখন চেন্নাইয়ে কাজ করতো তখন কিছু ছেলের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়। মাঝেমধ্যে তারা আসিফের মোবাইল কাজের সাইটে ফোন করার নামে ব্যবহার করত। আসিফ সাধাসিধে ছেলে অতটা বুঝে উঠতে পারেনি যে বন্ধুদের ফোন দেওয়াটা তার বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

সেই সময়ে আসিফের মোবাইল ব্যবহার করে একটা হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটে। অফিসাররা তদন্ত করে আসিফের মোবাইল নম্বরটি খুঁজে পান। পরের বার আসিফ তামিলনাড়ু কাজে গেলে সেখানকার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। কাজ করতে গিয়ে পরিচিত হওয়া ছেলেগুলোও সেখান থেকে কবেই চলে গেছিল। কে জানত তারাই আসিফের কপালে বিপদ ডেকে নিয়ে আসবে।

আসিফের বাবা একজন বহুরুপী শিল্পী, ইনকাম বলতে কোনো রকমে সংসার চলে। ছেলেকে ফেরত পাওয়ার জন্য আসিফের বাবা বহু জায়গাতে যোগাযোগ করে কিন্তু সবাই তার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। যে পরিবার কখনো থানা পুলিশের দারস্থ হয়নি সেই পরিবারের সদস্য জেলবন্দি। এলাকার লোকের কথাবার্তা শুনে আরো ভেঙে পড়ে আসিফের পরিবার। কিভাবে ছেলেটিকে জেল থেকে ছাড়ানো যায় সে ব্যাপারে কেউ পরামর্শটুকুও দেয়নি আসিফের পরিবারকে। আসিফের বাবা মনিরুল শেখ জানান, ছেলে তামিলনাড়ুতে গ্রেপ্তার হয়েছে শুনে ভেঙে পড়েছিলাম। আমার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালেও ভর্তি হয়েছিল। কোনভাবেই বিষয়টিকে মেনে নিতে পারছিলাম না।

বহু মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি কিন্তু সহযোগিতার জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি। তখনই বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের সদস‍্য মুরারইয়ের বাসিন্দা মহম্মদ রিপন পরিবারের সাহায্যে এগিয়ে আসেন। ৯২ দিন আইনী লড়াইয়ের পর চেন্নাইয়ের জেলে বন্দি পরিযায়ী শ্রমিক আসিফ উদ্ধার হয়ে পরিবারের কাছে ফিরে আসে।

মহঃ রিপন জানান, আমি আমার তামিলনাড়ুতে পরিচিত কয়েকজন বন্ধুর সহযোগিতায় কাজ শুরু করি ও তাদেরকে বিষয়টি বলি। আমার বন্ধু অলোক, আসিফকে ছাড়িয়ে আনতে খুব সহযোগিতা করেছে।

ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট বহুবার আসিফের বেল বাতিল করেছিল। তারপর আমরা সেশন কোর্টে যাই। প্রায় ৯২ দিন পর জামিন মঞ্জুর হয়।আমাদের কাছে এটা খুব বড় একটা চ্যালেঞ্জিং লড়াই ছিল। আইনি লড়াইয়ে আদালতে আসিফ নির্দোষ প্রমাণিত হয়।