২০ অগাস্ট ২০২৫, বুধবার, ৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে মিজোরামে খনি ধস, মৃত কমপক্ষে ১৭

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ২৮ মে ২০২৪, মঙ্গলবার
  • / 17

পুবের কলম প্রতিবেদক:  ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত গোটা মিজোরাম। খনি ধসে কমপক্ষে ১৭ জন শ্রমিকের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। আটকে রয়েছে বেশ কয়েকজন। এদের মধ্যে দুজন শিশু। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা। মঙ্গলবার ভোর ৬টা নাগাদ এই দুর্ঘটনা ঘটে মিজোরামের রাজধানী আইজল শহরের দক্ষিণ মেলথুম এবং হ্লিমেনের মধ্যে একটি এলাকায়। খনি ধসের কাছাকাছি থাকা বাড়িগুলি ধুলিসাৎ হয়ে গেছে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালডুহোমা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কে সাপডাঙ্গান জোখাওথার এবং সমস্ত বিভাগের প্রধানদের সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার জন্য জরুরি বৈঠক করেন। মিজোরাম ডিজিপি অনিল শুক্লা বলেন, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, অসম রাইফেলস এবং স্থানীয় পুলিশ একযোগে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন।

 

 

 

 

 

 

প্রসঙ্গত, অবৈধ কয়লাখনি ধস র‍্যাট হোল শ্রমিকদের জন্য পাতা ‘মরণফাঁদ’! উত্তর-পূর্বের কয়লা খনিতে ভূমিধস, বন্যা খুব সাধারণ ঘটনা। মেঘালয় এবং উত্তর-পূর্বের অন্যান্য অংশে পাওয়া কয়লায় সালফারের পরিমাণ বেশি, তাই বিপর্যয় নতুন কিছু নয়। বিষাক্ত গ্যাসে শ্বাসরোধে কয়লা খনির শ্রমিকদের প্রাণ হারানো অব্যাহত। শনিবার ২৬ মে সেই বিপর্যয় নেমে আসে অসমের তিনসুকিয়া জেলার পাটকাই পাহাড়ে। অবৈধ  ‘ইঁদুরের গর্তে’ খননে নেমে (র‍্যাট হোল মাইনিং) খনিতে আটকা পড়ে শ্রমিকরা। তাদের খোঁজ নেই। রবিবার কর্মকর্তারা জানান, খনি থেকে শ্রমিকদের উদ্ধারে অভিযান চলছে। তিনজনের মধ্যে একজন নেপালের, বাকি দুজন মেঘালয়ের। মোট চারজন শ্রমিক ছিলেন। ২০১৪  সালে এনজিটি ইঁদুর-গর্ত খনন নিষিদ্ধ করে, কিন্তু লেনো-মার্গেরিটা বেল্টে এই বিপজ্জনক পদ্ধতি অব্যাহত।

২৭ তারিখ রাতে রেমালের ল্যান্ডফল, এর প্রভাবে প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত গোটা মিজোরাম। বহু জায়গায় ভূমিধস নেমেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকদের উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত। তবে অবিরাম বৃষ্টিতে উদ্ধারকার্য ব্যাহত হয়েছে। নিহতের মধ্যে তিনজন মিজোরামবাসী নন। একজন শিশুকে উদ্ধার করে, তাকে কাছাকাছি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

হুন্টারে জাতীয় সড়ক ৬-এ ভূমিধসের কারণে আইজল রাজ্যের বাকি অংশের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি ভূমিধসের কারণে আন্তঃরাজ্য ও মহাসড়কের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত জনজীবন। বন্ধ স্কুল-কলেজ। সরকারি কর্মচারীদের বাড়িতে থেকে কাজ করতে বলা হয়েছে, চালু রয়েছে জরুরি পরিষেবা।

উল্লেক্য, অবৈধ কয়লা খনিতে শ্রমিকদের মৃত্যুর ঘটনা নতুন কিছু নয়। ২০২১ সালে মেঘালয়ে পূর্ব জয়ন্তিয়া পাহাড়ের একটি পরিত্যক্ত কয়লা খনিতে একটি দুর্ঘটনায় ৬ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছিল। ২০১৮ সালের ১৩ ডিসেম্বর র‍্যাট হোল মাইনিং খনির কাছাকাছি লাইটিন নদীর জলে প্লাবিত হয়ে ১৫ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। ২০২৩ সালে উত্তরাখণ্ড টানেল বিপর্যয় টানা ১৭ দিন লড়াই চালিয়ে ৪১ জন শ্রমিককে উদ্ধারের র‍্যাট হোল মাইনিং দলে ছিলেন মুসলিম শ্রমিক ওয়াকিল হাসান।

অভাবের তাড়নায় ‘র‍্যাট হোল মাইনিং’-এর কাজ বেছে নেন হতদরিদ্ররা। অন্যান্যরা যেখানে এগিয়ে আসতে ভয় পায়, সেখানে বেশিরভাগ মুসলিম বাঙালি যুবকদের এই কাজে দেখা যায়

 

 

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে মিজোরামে খনি ধস, মৃত কমপক্ষে ১৭

আপডেট : ২৮ মে ২০২৪, মঙ্গলবার

পুবের কলম প্রতিবেদক:  ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত গোটা মিজোরাম। খনি ধসে কমপক্ষে ১৭ জন শ্রমিকের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। আটকে রয়েছে বেশ কয়েকজন। এদের মধ্যে দুজন শিশু। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা। মঙ্গলবার ভোর ৬টা নাগাদ এই দুর্ঘটনা ঘটে মিজোরামের রাজধানী আইজল শহরের দক্ষিণ মেলথুম এবং হ্লিমেনের মধ্যে একটি এলাকায়। খনি ধসের কাছাকাছি থাকা বাড়িগুলি ধুলিসাৎ হয়ে গেছে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালডুহোমা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কে সাপডাঙ্গান জোখাওথার এবং সমস্ত বিভাগের প্রধানদের সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার জন্য জরুরি বৈঠক করেন। মিজোরাম ডিজিপি অনিল শুক্লা বলেন, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, অসম রাইফেলস এবং স্থানীয় পুলিশ একযোগে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন।

 

 

 

 

 

 

প্রসঙ্গত, অবৈধ কয়লাখনি ধস র‍্যাট হোল শ্রমিকদের জন্য পাতা ‘মরণফাঁদ’! উত্তর-পূর্বের কয়লা খনিতে ভূমিধস, বন্যা খুব সাধারণ ঘটনা। মেঘালয় এবং উত্তর-পূর্বের অন্যান্য অংশে পাওয়া কয়লায় সালফারের পরিমাণ বেশি, তাই বিপর্যয় নতুন কিছু নয়। বিষাক্ত গ্যাসে শ্বাসরোধে কয়লা খনির শ্রমিকদের প্রাণ হারানো অব্যাহত। শনিবার ২৬ মে সেই বিপর্যয় নেমে আসে অসমের তিনসুকিয়া জেলার পাটকাই পাহাড়ে। অবৈধ  ‘ইঁদুরের গর্তে’ খননে নেমে (র‍্যাট হোল মাইনিং) খনিতে আটকা পড়ে শ্রমিকরা। তাদের খোঁজ নেই। রবিবার কর্মকর্তারা জানান, খনি থেকে শ্রমিকদের উদ্ধারে অভিযান চলছে। তিনজনের মধ্যে একজন নেপালের, বাকি দুজন মেঘালয়ের। মোট চারজন শ্রমিক ছিলেন। ২০১৪  সালে এনজিটি ইঁদুর-গর্ত খনন নিষিদ্ধ করে, কিন্তু লেনো-মার্গেরিটা বেল্টে এই বিপজ্জনক পদ্ধতি অব্যাহত।

২৭ তারিখ রাতে রেমালের ল্যান্ডফল, এর প্রভাবে প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত গোটা মিজোরাম। বহু জায়গায় ভূমিধস নেমেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকদের উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত। তবে অবিরাম বৃষ্টিতে উদ্ধারকার্য ব্যাহত হয়েছে। নিহতের মধ্যে তিনজন মিজোরামবাসী নন। একজন শিশুকে উদ্ধার করে, তাকে কাছাকাছি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

হুন্টারে জাতীয় সড়ক ৬-এ ভূমিধসের কারণে আইজল রাজ্যের বাকি অংশের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি ভূমিধসের কারণে আন্তঃরাজ্য ও মহাসড়কের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত জনজীবন। বন্ধ স্কুল-কলেজ। সরকারি কর্মচারীদের বাড়িতে থেকে কাজ করতে বলা হয়েছে, চালু রয়েছে জরুরি পরিষেবা।

উল্লেক্য, অবৈধ কয়লা খনিতে শ্রমিকদের মৃত্যুর ঘটনা নতুন কিছু নয়। ২০২১ সালে মেঘালয়ে পূর্ব জয়ন্তিয়া পাহাড়ের একটি পরিত্যক্ত কয়লা খনিতে একটি দুর্ঘটনায় ৬ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছিল। ২০১৮ সালের ১৩ ডিসেম্বর র‍্যাট হোল মাইনিং খনির কাছাকাছি লাইটিন নদীর জলে প্লাবিত হয়ে ১৫ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। ২০২৩ সালে উত্তরাখণ্ড টানেল বিপর্যয় টানা ১৭ দিন লড়াই চালিয়ে ৪১ জন শ্রমিককে উদ্ধারের র‍্যাট হোল মাইনিং দলে ছিলেন মুসলিম শ্রমিক ওয়াকিল হাসান।

অভাবের তাড়নায় ‘র‍্যাট হোল মাইনিং’-এর কাজ বেছে নেন হতদরিদ্ররা। অন্যান্যরা যেখানে এগিয়ে আসতে ভয় পায়, সেখানে বেশিরভাগ মুসলিম বাঙালি যুবকদের এই কাজে দেখা যায়