২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, সোমবার, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তসলিমার জিহাদি আবিষ্কার কি এভাবে মাঠে মারা যাবে!

বিশেষ প্রতিবেদকঃ তসলিমা নাসরিন। আমাদের তসলিমা বুবু। না, না কোনও ব্যঙ্গ করার জন্য নয়। বাংলার কিছু মুসলিম প্রধান জেলায় বড় বোনকে ‘বুবু’ বলা হয়। অবশ্য ছোট বোনকেও আদর করে অনেকে ‘বুবু’ বলে ডেকে থাকে। তা দীর্ঘদিন ধরে তসলিমা বুবু ভারতের রাজধানী দিল্লিতে একেবারে বেকার বসে আছেন। এখন আর তাঁর কোনও তেমন কাজ নেই। বিশেষ করে দিল্লিতে এক ডাক্তার ভুল বুঝিয়ে তাঁর পশ্চাৎ দেশে অপারেশন করে দেওয়ার পর তসলিমা তাঁর শারীরিক দুর্গতির আশঙ্কা করে বেশ হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। অবশ্য যতটা ভাবা গিয়েছিল ততটা অবশ্য কষ্ট তাঁর হচ্ছে না। কারণ, তাঁকে প্রায় দেখা যাচ্ছে নিত্য-নতুন শাড়ি পরে ফেসবুকে হাজির হচ্ছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তসলিমাকে দীর্ঘদিন ধরে তাঁর অরিজিনাল ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে না। তবে কয়েকদিন হল তসলিমা আবার পরিচিত রোলে অবতীর্ণ হয়েছেন। এবার তিনি পড়েছেন তাঁর জন্মভূমি বাংলাদেশকে নিয়ে। অবশ্য এখন তসলিমার জন্মভূমি এখন আর তসলিমার কর্মভূমি নয়। তবে ত্রিশোর্ধ বয়সের মধ্যে তিনি যে কয়টি বিয়ে করেছিলেন, তা সবই করেছেন বাংলাদেশে। তা এই বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন নিয়ে তসলিমা এখন ফের ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও ট্যুইটারে সক্রিয় হয়েছেন।

 

শুধু তাই নয়, তিনি একেবারে যাকে বলে ‘পাড়া মাত’ করে ফেলেছেন। পাড়া বলতে অবশ্য তাঁর অনুরাগী পাড়া। তবে ইউনূসের আগেও হাসিনা সরকার মোটেই তসলিমার প্রিয় ছিল না। কিন্তু তিনি বাংলাদেশের নির্বাচন, দুর্নীতি, গণতন্ত্র এগুলি নিয়ে মন্তব্য করেননি, খুবই সতর্ক অবস্থানে থাকতেন। তাঁকে যে লক্ষণ রেখার গন্ডিতে থাকতে বলা হয়েছে, তিনি না আবার তা লঙ্ঘন করে ফেলেন। কিন্তু প্রবাস জীবনে মাঝেমধ্যেই হাসিনাকে একহাত নিয়েছেন তসলিমাজি।

আর এখন বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের পর তসলিমাজি আর মুখ বুজে থাকতে পারেননি। তিনি চড়াগলায় ইস্যু খুঁজে বেড়াচ্ছেন। তবে এখন বাংলাদেশের ক্ষেত্রে জনপ্রিয় ইস্যু হচ্ছে জিহাদি, মাদ্রাসা, সংখ্যালঘু অর্থাৎ হিন্দু নির্যাতন এবং ‘মোল্লা ইউনূসের’ সরকার। এক্ষেত্রে তসলিমা নাসরিনও সত্য-মিথ্যা, রিয়েল না ফেক ঘটনাগুলির কোনও পার্থক্য করতে পারছেন না। হট ইস্যু, মিডিয়া লুফে নেওয়ার জন্য তৈরি তাও যদি আবার তসলিমার মুখ কিংবা কম্পিউটার নিসৃত হয়।

প্রথমে তসলিমার বাংলাদেশ সম্পর্কে যে নিউজ, ছবি ও ভিডিয়োটি আন্তর্জাতিকভাবে ভাইরাল হয়েছে, ‘তাহল যশোর জামিয়া ইসলামিয়ার ব্যানার লাগানো একটি মাদ্রাসার ভিডিয়ো’। ঠিকানা লেখা রয়েছে রামনগর, রাজারহাট, যশোর। এতে দেখা যাচ্ছে, মুখ ঢাকা এক ব্যক্তি আরবিতে উদ্দীপক জিহাদি বক্তব্য দিচ্ছেন। আর তার দুই পাশে দু’টি রাইফেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে যোদ্ধার বেশে দু’জন জিহাদি।

আর কি! তসলিমার জন্য এটা এক মোক্ষম আবিষ্কার! বাংলাদেশের মাদ্রাসায় রাইফেল নিয়ে ‘জিহাদি ভাষণ’ চলছে। তসলিমা লিখেছেন, ‘যশোরের মাদ্রাসায় জিহাদি সেজেছে ছাত্ররা। আরবি ভাষায় বত্তৃতা দেওয়া হচ্ছে। জিহাদের পক্ষে বত্তৃতা।’

তারপরই অবশ্য তসলিমা একটু বিপাকে পড়েছেন। বলা যায়, সাইবার মুশকিলে পড়েছেন। কারণ, দেখা গেছে ওই ভিডিয়োটি আসলে মাদ্রাসার কচিকচি ছাত্রদের জিহাদি করার ট্রেনিং সেন্টার নয়। একেবারে আমাদের দেশ  ভারতের নাকের ডগায় অবস্থিত বাংলাদেশের যশোর জেলার রামনগরের এক মাদ্রাসায় ছাত্রদের বার্ষিক স্পোর্টস-এর সময় ‘যেমন খুশি সাজো’ প্রতিযোগিতার একটি ভিডিয়ো।

 

বাংলাদেশের মানুষ এমন কি অগণিত দেশের মানুষ গাজায় ইসরাইলের বর্বর হামলা এবং অকাতরে নারী-শিশু-বৃদ্ধ হত্যার বিরুদ্ধে হামাসের বীর স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সমর্থন করেছে। ওই ভিডিয়োতে একজন কিশোর সেজেছে হামাসের মুখপাত্র আবু ওবাইদা হিসেবে। তিনি প্রায় মিডিয়ার সামনে হাজির হয়ে হামাসের পক্ষে সাংবাদিক সম্মেলন করে থাকেন। সেই সম্মেলনেরই অনুকরণে মাদ্রাসার ছাত্ররা আবু ওবাইদার মতো সেজে  প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল এবং দু’জন কিশোর ছাত্র দু’টি কাঠের খেলনা বন্দুক হাতে নিয়ে নকল আবু  ওবাইদার পাশে দাঁড়িয়েছে।

 

আর মাদ্রাসার ছাত্রদের আবু ওবাইদার আরবি ভাষার বত্তৃ«তা মুখস্ত করে আওড়ানো তো জল-ভাত, অন্য কথায়  নস্যি! তারা পুরো কুরআন হৃদয়ে হিফজ্ করে তিলাওয়াত করে থাকে। আবু ওবাইদার একটি ছোট বক্তব্য মুখস্ত করে তারা মঞ্চে বলবে এতে কেউই অবাক হবেন না। অবশ্য তসলিমার বিস্ময়বোধ করা স্বাভাবিক।

 

তিনি তো মুসলিম, মাদ্রাসা, মুহাম্মদ সা., বোরকা থেকে শুরু করে মাথায় হিজাব বা স্কার্ফ সব কিছুর ঘোরতর বিরোধী। তিনি মাদ্রাসার ছেলেদের হিফজ করার তথ্য কোথা থেকে জানবেন? কিন্তু ফেসবুকে পোস্ট করা তাঁর জালিয়াতি ধরা পড়ে যাওয়ার পরই তসলিমা নিদারুন যাকে বলে ক্ষেপে গেছেন।

এমন সুুন্দর একটা ইস্যু তিনি আবিষ্কার করেছিলেন, আর তা কি না এভাবে মাঠে মারা গেল! উল্টে তিনি একটু  বেকায়দায় পড়ে গেলেন। তাঁকেই কি না ট্রোল করা হচ্ছে! তিনি এরপর পুনরায় ফেসবুকে একের পর এক পোস্ট করতে শুরু করেছেন। যদিও তাঁর যুক্তিতে খুব একটা শক্তি নেই। কিন্তু ‘বড় গলা’ করে তিনি সচিৎকারে লড়ে চলেছেন। সেই খবর ক্রমশ প্রকাশ্য।

ট্যাগ :
প্রতিবেদক

ইমামা খাতুন

২০২২ সাল থেকে সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে রিপোর্টার হিসেবে হাতেখড়ি। ২০২২ সালের শেষান্তে পুবের কলম-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ইমামার ভাষ্যে, The First Law of Journalism: to confirm existing prejudice, rather than contradict it.
সর্বধিক পাঠিত

হাদি হত্যা নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের দাবি নাকচ করল বিএসএফ ও মেঘালয় পুলিশ

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

তসলিমার জিহাদি আবিষ্কার কি এভাবে মাঠে মারা যাবে!

আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, রবিবার

বিশেষ প্রতিবেদকঃ তসলিমা নাসরিন। আমাদের তসলিমা বুবু। না, না কোনও ব্যঙ্গ করার জন্য নয়। বাংলার কিছু মুসলিম প্রধান জেলায় বড় বোনকে ‘বুবু’ বলা হয়। অবশ্য ছোট বোনকেও আদর করে অনেকে ‘বুবু’ বলে ডেকে থাকে। তা দীর্ঘদিন ধরে তসলিমা বুবু ভারতের রাজধানী দিল্লিতে একেবারে বেকার বসে আছেন। এখন আর তাঁর কোনও তেমন কাজ নেই। বিশেষ করে দিল্লিতে এক ডাক্তার ভুল বুঝিয়ে তাঁর পশ্চাৎ দেশে অপারেশন করে দেওয়ার পর তসলিমা তাঁর শারীরিক দুর্গতির আশঙ্কা করে বেশ হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। অবশ্য যতটা ভাবা গিয়েছিল ততটা অবশ্য কষ্ট তাঁর হচ্ছে না। কারণ, তাঁকে প্রায় দেখা যাচ্ছে নিত্য-নতুন শাড়ি পরে ফেসবুকে হাজির হচ্ছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তসলিমাকে দীর্ঘদিন ধরে তাঁর অরিজিনাল ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে না। তবে কয়েকদিন হল তসলিমা আবার পরিচিত রোলে অবতীর্ণ হয়েছেন। এবার তিনি পড়েছেন তাঁর জন্মভূমি বাংলাদেশকে নিয়ে। অবশ্য এখন তসলিমার জন্মভূমি এখন আর তসলিমার কর্মভূমি নয়। তবে ত্রিশোর্ধ বয়সের মধ্যে তিনি যে কয়টি বিয়ে করেছিলেন, তা সবই করেছেন বাংলাদেশে। তা এই বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন নিয়ে তসলিমা এখন ফের ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও ট্যুইটারে সক্রিয় হয়েছেন।

 

শুধু তাই নয়, তিনি একেবারে যাকে বলে ‘পাড়া মাত’ করে ফেলেছেন। পাড়া বলতে অবশ্য তাঁর অনুরাগী পাড়া। তবে ইউনূসের আগেও হাসিনা সরকার মোটেই তসলিমার প্রিয় ছিল না। কিন্তু তিনি বাংলাদেশের নির্বাচন, দুর্নীতি, গণতন্ত্র এগুলি নিয়ে মন্তব্য করেননি, খুবই সতর্ক অবস্থানে থাকতেন। তাঁকে যে লক্ষণ রেখার গন্ডিতে থাকতে বলা হয়েছে, তিনি না আবার তা লঙ্ঘন করে ফেলেন। কিন্তু প্রবাস জীবনে মাঝেমধ্যেই হাসিনাকে একহাত নিয়েছেন তসলিমাজি।

আর এখন বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের পর তসলিমাজি আর মুখ বুজে থাকতে পারেননি। তিনি চড়াগলায় ইস্যু খুঁজে বেড়াচ্ছেন। তবে এখন বাংলাদেশের ক্ষেত্রে জনপ্রিয় ইস্যু হচ্ছে জিহাদি, মাদ্রাসা, সংখ্যালঘু অর্থাৎ হিন্দু নির্যাতন এবং ‘মোল্লা ইউনূসের’ সরকার। এক্ষেত্রে তসলিমা নাসরিনও সত্য-মিথ্যা, রিয়েল না ফেক ঘটনাগুলির কোনও পার্থক্য করতে পারছেন না। হট ইস্যু, মিডিয়া লুফে নেওয়ার জন্য তৈরি তাও যদি আবার তসলিমার মুখ কিংবা কম্পিউটার নিসৃত হয়।

প্রথমে তসলিমার বাংলাদেশ সম্পর্কে যে নিউজ, ছবি ও ভিডিয়োটি আন্তর্জাতিকভাবে ভাইরাল হয়েছে, ‘তাহল যশোর জামিয়া ইসলামিয়ার ব্যানার লাগানো একটি মাদ্রাসার ভিডিয়ো’। ঠিকানা লেখা রয়েছে রামনগর, রাজারহাট, যশোর। এতে দেখা যাচ্ছে, মুখ ঢাকা এক ব্যক্তি আরবিতে উদ্দীপক জিহাদি বক্তব্য দিচ্ছেন। আর তার দুই পাশে দু’টি রাইফেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে যোদ্ধার বেশে দু’জন জিহাদি।

আর কি! তসলিমার জন্য এটা এক মোক্ষম আবিষ্কার! বাংলাদেশের মাদ্রাসায় রাইফেল নিয়ে ‘জিহাদি ভাষণ’ চলছে। তসলিমা লিখেছেন, ‘যশোরের মাদ্রাসায় জিহাদি সেজেছে ছাত্ররা। আরবি ভাষায় বত্তৃতা দেওয়া হচ্ছে। জিহাদের পক্ষে বত্তৃতা।’

তারপরই অবশ্য তসলিমা একটু বিপাকে পড়েছেন। বলা যায়, সাইবার মুশকিলে পড়েছেন। কারণ, দেখা গেছে ওই ভিডিয়োটি আসলে মাদ্রাসার কচিকচি ছাত্রদের জিহাদি করার ট্রেনিং সেন্টার নয়। একেবারে আমাদের দেশ  ভারতের নাকের ডগায় অবস্থিত বাংলাদেশের যশোর জেলার রামনগরের এক মাদ্রাসায় ছাত্রদের বার্ষিক স্পোর্টস-এর সময় ‘যেমন খুশি সাজো’ প্রতিযোগিতার একটি ভিডিয়ো।

 

বাংলাদেশের মানুষ এমন কি অগণিত দেশের মানুষ গাজায় ইসরাইলের বর্বর হামলা এবং অকাতরে নারী-শিশু-বৃদ্ধ হত্যার বিরুদ্ধে হামাসের বীর স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সমর্থন করেছে। ওই ভিডিয়োতে একজন কিশোর সেজেছে হামাসের মুখপাত্র আবু ওবাইদা হিসেবে। তিনি প্রায় মিডিয়ার সামনে হাজির হয়ে হামাসের পক্ষে সাংবাদিক সম্মেলন করে থাকেন। সেই সম্মেলনেরই অনুকরণে মাদ্রাসার ছাত্ররা আবু ওবাইদার মতো সেজে  প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল এবং দু’জন কিশোর ছাত্র দু’টি কাঠের খেলনা বন্দুক হাতে নিয়ে নকল আবু  ওবাইদার পাশে দাঁড়িয়েছে।

 

আর মাদ্রাসার ছাত্রদের আবু ওবাইদার আরবি ভাষার বত্তৃ«তা মুখস্ত করে আওড়ানো তো জল-ভাত, অন্য কথায়  নস্যি! তারা পুরো কুরআন হৃদয়ে হিফজ্ করে তিলাওয়াত করে থাকে। আবু ওবাইদার একটি ছোট বক্তব্য মুখস্ত করে তারা মঞ্চে বলবে এতে কেউই অবাক হবেন না। অবশ্য তসলিমার বিস্ময়বোধ করা স্বাভাবিক।

 

তিনি তো মুসলিম, মাদ্রাসা, মুহাম্মদ সা., বোরকা থেকে শুরু করে মাথায় হিজাব বা স্কার্ফ সব কিছুর ঘোরতর বিরোধী। তিনি মাদ্রাসার ছেলেদের হিফজ করার তথ্য কোথা থেকে জানবেন? কিন্তু ফেসবুকে পোস্ট করা তাঁর জালিয়াতি ধরা পড়ে যাওয়ার পরই তসলিমা নিদারুন যাকে বলে ক্ষেপে গেছেন।

এমন সুুন্দর একটা ইস্যু তিনি আবিষ্কার করেছিলেন, আর তা কি না এভাবে মাঠে মারা গেল! উল্টে তিনি একটু  বেকায়দায় পড়ে গেলেন। তাঁকেই কি না ট্রোল করা হচ্ছে! তিনি এরপর পুনরায় ফেসবুকে একের পর এক পোস্ট করতে শুরু করেছেন। যদিও তাঁর যুক্তিতে খুব একটা শক্তি নেই। কিন্তু ‘বড় গলা’ করে তিনি সচিৎকারে লড়ে চলেছেন। সেই খবর ক্রমশ প্রকাশ্য।