ওয়াকফ-মামলা সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন, ‘উম্মিদ’ পোর্টাল চালু করে দিল কেন্দ্র

- আপডেট : ৭ জুন ২০২৫, শনিবার
- / 54
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ওয়াকফ সংশোধনী আইন বাতিলের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে। এই পরিস্থিতিতে এবার ওয়াকফ সম্পত্তির ডিজিটাল নিবন্ধন (রেজিস্টার্ড)-এর জন্য শুক্রবার উম্মিদ পোর্টাল চালু করল কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রক।
মূলত ওয়াকফ সম্পত্তির তথ্য আপলোড, যাচাই ও নজরদারির জন্য এই পোর্টাল চালু করা হয়েছে। পোর্টালটির উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু উন্নয়নমন্ত্রী কিরেন রিজিজু। সংখ্যালঘু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জর্জ ক্যুরিয়ানের উপস্থিতিতে পোর্টালটির উদ্বোধন করে রিজিজু বলেন, সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায়গুলির সুবিধার বিষয়টি সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা একটি দৃঢ় পদক্ষেপ নিচ্ছি।
পোর্টালটি চালু হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে ওয়াকফ সম্পত্তি সংক্রান্ত তথ্য পোর্টালে রেজিস্টার্ড করতে হবে। কেন্দ্রের সংখ্যালঘু বিষয়ক সচিব চন্দ্রশেখর কুমার বলেন, সংখ্যালঘু বিষয়ক সচিব চন্দ্র শেখর কুমার বলেন, পোর্টালটি তথ্য পেশ করার অনুমতি দেবে ওয়াকফ সম্পত্তি রেজিস্টার্ড করার জন্য যাতে বেআইনি জবরদখল প্রতিরোধ করা যায়। আর যাদের কাছে নথি নেই এমন ‘ওয়াকফ-রক্ষক’দের (ওয়াকফ কাস্টোডিয়ান) ট্রাইব্যুনালে যেতে হবে।
যদিও মুসলিম সংগঠনগুলির প্রশ্ন, মামলা যখন বিচারাধীন তখন কীভাবে ওয়াকফ সম্পত্তি রেজিস্টার্ড করার জন্য এই ধরনের পোর্টাল চালু করতে পারে কেন্দ্র? কেন্দ্রের পক্ষ থেকে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, ওই পোর্টালটি দেশজুড়ে ওয়াকফ সম্পত্তির রেকর্ডের ভাণ্ডার হিসেবে কাজ করবে।
একটি সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পোর্টালটিতে একটি শক্তিশালী ত্রি-স্তরীয় যাচাইয়ের ব্যবস্থা রয়েছে যার মধ্যে রয়েছে—তত্ত্বাবধায়ক, যাচাইকারী ও অনুমোদনকারী। মুতাওয়াল্লিরা তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কাজ করবেন, সম্পত্তির বিবরণ আপলোড করবেন। ওয়াকফ বোর্ডের কর্মকর্তারা যাচাইকারী বা পরীক্ষক হিসেবে কাজ করবেন। এন্ট্রি পর্যালোচনা এবং যাচাই করবেন। অবশেষে, একটি মনোনীত সরকারী কর্তৃপক্ষ অনুমোদনকারী হিসেবে কাজ করবে।
রেকর্ড চূড়ান্ত করার আগে সম্পূর্ণ যাচাইকরণ নিশ্চিত করবে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, পোর্টালটি চালু হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে সমস্ত ওয়াকফ সম্পত্তির নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হবে। গত মাসে, মন্ত্রণালয় দুই দিনের একটি জাতীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে যেখানে বিভিন্ন রাজ্যের প্রায় ১৪১ জন মাস্টার ট্রেইনারকে পোর্টালের বৈশিষ্ট্য এবং কার্যকারিতা সম্পর্কে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
যদিও অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’বোর্ড উম্মিদ পোর্টালের বিরোধিতা করে এটিকে সম্পূর্ণ অবৈধ এবং সুপ্রিম কোর্টে চলমান আইনি কার্যক্রমের লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে। বোর্ডের সভাপতি মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ রহমানি বলেন, অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’বোর্ড ওয়াকফ উম্মিদ পোর্টাল চালুর তীব্র বিরোধিতা করে। আমরা মুসলিমদের কাছে এবং রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডগুলিকে আবেদন করছি যে শীর্ষ আদালত তার রায় না দেওয়া পর্যন্ত পোর্টালে ওয়াকফ সম্পত্তি নিবন্ধন করা থেকে বিরত থাকুন। তিনি আরও বলেন, পোর্টালটি নয়া ওয়াকফ আইনের কাঠামোর নীতির উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে যা মুসলিম সমাজের কাছে ব্যাপকভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে এবং বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
সমস্ত মুসলিম সংগঠন এই আইনের বিরোধিতা করেছে। বিরোধী দলগুলি, মানবাধিকার সংগঠনগুলি, শিখ, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যরাও এটিকে গ্রহণযোগ্য নয় বলে অভিহিত করেছেন। রহমানির কথায, ‘এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, আইনটি আদালতে বিচারাধীন থাকা সত্ত্বেও পোর্টালটি চালু করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, সরকার এমন এক আইন কার্যকর করতে চাইছে, যার সাংবিধানিক বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে এবং যা বর্তমানে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিবেচনাধীন। এর মধ্যেই পোর্টাল চালু করা গভীর উদ্বেগের।
মুসলিম পার্সোনাল ল’বোর্ডের পক্ষ থেকে মুসলিম সমাজ ও রাজ্য ওয়াক্ফ বোর্ডগুলিকে আহ্বান জানানো হয়েছে, তারা যেন কোনোভাবেই এই পোর্টালে সম্পত্তি নিবন্ধন না করেন। সেই সঙ্গে দেশজুড়ে ওয়াক্ফ বোর্ড কর্মকর্তাদের এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে আপত্তি জানাতে এবং সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায় না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে। বোর্ড ঘোষণা করেছে, তারা কেন্দ্র সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে খুব শীঘ্রই সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানাবে।