২০ অগাস্ট ২০২৫, বুধবার, ৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কেন্দ্র-আরএসএসের চাপেই মহারাষ্ট্রে হিন্দি আগ্রাসন: সঞ্জয় রাউত

কিবরিয়া আনসারি
  • আপডেট : ২৮ জুন ২০২৫, শনিবার
  • / 148

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: পদ্ম শিবিরের হিন্দি আগ্রাসন নিয়ে ফুঁসে উঠলেন শিবসেনা সাংসদ সঞ্জয় রাউত। কেন্দ্র ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) চাপে মহায়ুতি সরকার প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মারাঠি ও ইংরেজি স্কুলে হিন্দিকে তৃতীয় ভাষা হিসেবে চাপিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করলেন তিনি। শনিবার শিবসেনা সাংসদ বলেন, রাষ্ট্রীয় পাঠ্যক্রমে তৃতীয় ভাষা হিসাবে হিন্দিকে ‘জোর’ করে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। একই সঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দেন, প্রবীণ আরএসএস নেতা ভায়াজি জোশী সম্প্রতি বলেছিলেন, মারাঠি মুম্বইয়ের ভাষা নয়। তাঁর এই বক্তব্যকে হাঁতিয়ার করে কেন্দ্র এবং মহায়ুতি সরকারকে আক্রমণ শানিয়েছেন রাউত।

প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মারাঠি ও ইংরেজি স্কুলে হিন্দি বাধ্যতামূলক করে ত্রিভাষা নীতি বাস্তবায়নের জন্য রাজ্য সরকারের ওপর চাপ ছিল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের পক্ষ থেকে। কেন্দ্রের চাপে কিছুদিন আগেই মহারাষ্ট্রের দেবেন্দ্র ফড়ণবিসের সরকার সে রাজ্যে কেন্দ্রের প্রস্তাবিত ত্রিভাষা নীতি চালুর কথা ঘোষণা করে। তাতে তৃতীয় ভাষা হিসাবে শেখানো হবে হিন্দি। রাউতের দাবি, “কেন্দ্র ও আরএসএসের চাপে রাজ্য সরকার মারাঠিকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে।” এর আগে উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন সরকারই উচ্চ পর্যায়ের কমিটি নিয়োগ করেছিল। যেখানে মারাঠি, ইংরেজি এবং হিন্দি বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়েছিল। এমন দাবি করে শিবসেনাকে পাল্টা দিয়েছে গেরুয়া শিবির। বিজেপির এই দাবি সম্পর্কে রাউত বলেন, “বিজেপি ভুল বিবৃতি দিচ্ছে এবং ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করার জন্য ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে। কমিটি গঠন কি অপরাধ? “

শিবসেনা নেতার প্রশ্ন, “ত্রিভাষিক নীতির সিদ্ধান্ত রাজ্যের উপর চাপিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র। মুখ্যমন্ত্রী যেমন কোনও রিপোর্ট গ্রহণ করেন, তেমনই উদ্ধব ঠাকরেও সেই রিপোর্ট গ্রহণ করেন। কিন্তু উদ্ধব কি সরকারি প্রস্তাব (জিআর) জারি করেছিলেন? উনি কি অর্ডিন্যান্স জারি করেছিলেন?” তাঁর কথায়, “জিআর (হিন্দিকে তৃতীয় ভাষা হিসাবে) কে জারি করেছিল? ফড়নবিশ সরকার এটি জারি করেছে। হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার সরকারি প্রস্তাব মোর্চায় পোড়ানো হবে।” উল্লেখ্য, হিন্দি আগ্রাসনের প্রতিবাদে যৌথ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন রাজ ঠাকরে-উদ্ধব ঠাকরে। দুই ভাই-ই বলেছেন, মহারাষ্ট্রের স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করতে বিশেষ আপত্তি তাঁদের নেই।

আরও পড়ুন: কৃষক আত্মহত্যা: মহারাষ্ট্রে ৩ মাসে আত্মঘাতী ৭৬৭ জন

শিব সেনার উদ্ধব শিবিরের মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত ঘোষণা করেছেন, হিন্দি আগ্রাসনের প্রতিবাদে এবার ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াইয়ে নামছেন উদ্ধব ঠাকরে এবং রাজ ঠাকরে। মহারাষ্ট্রের স্কুলে বাধ্যতামুলকভাবে হিন্দি শেখানোর প্রতিবাদে এমএনএস এবং শিব সেনা উদ্ধব যৌথ কর্মসূচি নিতে চলেছে। আগামী ৫ জুলাই এমএনএসের এবং ৭ জুলাই উদ্ধব সেনার পৃথক কর্মসূচি রয়েছে ওই একই ইস্যুতে। মনে করা হচ্ছে, দুই শিবির এবার ঐক্যবদ্ধভাবে রাস্তায় নামবে। আসন্ন মোর্চা থেকে নিশ্চয়ই ভালো কিছু বেরিয়ে আসবে বলে আশা রাউতের। তিনি বলেন, “আমরা চাই মারাঠি বাহিনী একসঙ্গে বৃহন্মুম্বই পুরসভা নির্বাচনে লড়ুক। এর আগে শিবসেনা ইউবিটি এবং এমএনএস নেতারা একে অপরের সাথে দেখা করেননি, তবে এখন তারা একে অপরের সাথে দেখা করছেন। তারা আলোচনা করছেন। মোর্চার পরে ইতিবাচক পরিবেশ থাকবে। এখন আমি বিশ্বাস করি যে মারাঠি জনগণের ঐক্য ভাঙবে না।”

আরও পড়ুন: মহারাষ্ট্র: পদ্ম বিধায়কের বিরুদ্ধে মিছিল খ্রিস্টানদের

শিবসেনা নেতার মন্তব্যের পর রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র কেশব উপাধ্যায় বলেছেন, “উদ্ধব ঠাকরে এই প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ হিন্দি নিয়ে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছেন বলে যে দাবি করা হচ্ছে, তা বেশ হাস্যকর। উদ্ধব ঠাকরে অ্যাকশন টেকেন রিপোর্টের জন্য একটি কমিটিও গঠন করেছিলেন। উদ্ধব ঠাকরে মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন রাজ্য সরকার মারাঠি ভাষা ভবন নয়, উর্দু ভবন নির্মাণের কথা ঘোষণা করেছিল।” তাঁর প্রশ্ন, তখন মারাঠির প্রতি তাঁদের ভালোবাসা কোথায় ছিল? মারাঠি ইস্যু তুলে ধরে মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছেন উদ্ধব ঠাকরে।

আরও পড়ুন: শনি শিঙ্গনাপুর মন্দির থেকে ছাটাই ১১৪ জন মুসলিম কর্মী, পর্দার আড়ালে হিন্দুত্ববাদীরা!

প্রতিবেদক

কিবরিয়া আনসারি

Kibria obtained a master's degree in journalism from Aliah University. He has been in journalism since 2018, gaining work experience in multiple organizations. Focused and sincere about his work, Kibria is currently employed at the desk of Purber Kalom.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

কেন্দ্র-আরএসএসের চাপেই মহারাষ্ট্রে হিন্দি আগ্রাসন: সঞ্জয় রাউত

আপডেট : ২৮ জুন ২০২৫, শনিবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: পদ্ম শিবিরের হিন্দি আগ্রাসন নিয়ে ফুঁসে উঠলেন শিবসেনা সাংসদ সঞ্জয় রাউত। কেন্দ্র ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) চাপে মহায়ুতি সরকার প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মারাঠি ও ইংরেজি স্কুলে হিন্দিকে তৃতীয় ভাষা হিসেবে চাপিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করলেন তিনি। শনিবার শিবসেনা সাংসদ বলেন, রাষ্ট্রীয় পাঠ্যক্রমে তৃতীয় ভাষা হিসাবে হিন্দিকে ‘জোর’ করে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। একই সঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দেন, প্রবীণ আরএসএস নেতা ভায়াজি জোশী সম্প্রতি বলেছিলেন, মারাঠি মুম্বইয়ের ভাষা নয়। তাঁর এই বক্তব্যকে হাঁতিয়ার করে কেন্দ্র এবং মহায়ুতি সরকারকে আক্রমণ শানিয়েছেন রাউত।

প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মারাঠি ও ইংরেজি স্কুলে হিন্দি বাধ্যতামূলক করে ত্রিভাষা নীতি বাস্তবায়নের জন্য রাজ্য সরকারের ওপর চাপ ছিল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের পক্ষ থেকে। কেন্দ্রের চাপে কিছুদিন আগেই মহারাষ্ট্রের দেবেন্দ্র ফড়ণবিসের সরকার সে রাজ্যে কেন্দ্রের প্রস্তাবিত ত্রিভাষা নীতি চালুর কথা ঘোষণা করে। তাতে তৃতীয় ভাষা হিসাবে শেখানো হবে হিন্দি। রাউতের দাবি, “কেন্দ্র ও আরএসএসের চাপে রাজ্য সরকার মারাঠিকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে।” এর আগে উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন সরকারই উচ্চ পর্যায়ের কমিটি নিয়োগ করেছিল। যেখানে মারাঠি, ইংরেজি এবং হিন্দি বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়েছিল। এমন দাবি করে শিবসেনাকে পাল্টা দিয়েছে গেরুয়া শিবির। বিজেপির এই দাবি সম্পর্কে রাউত বলেন, “বিজেপি ভুল বিবৃতি দিচ্ছে এবং ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করার জন্য ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে। কমিটি গঠন কি অপরাধ? “

শিবসেনা নেতার প্রশ্ন, “ত্রিভাষিক নীতির সিদ্ধান্ত রাজ্যের উপর চাপিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র। মুখ্যমন্ত্রী যেমন কোনও রিপোর্ট গ্রহণ করেন, তেমনই উদ্ধব ঠাকরেও সেই রিপোর্ট গ্রহণ করেন। কিন্তু উদ্ধব কি সরকারি প্রস্তাব (জিআর) জারি করেছিলেন? উনি কি অর্ডিন্যান্স জারি করেছিলেন?” তাঁর কথায়, “জিআর (হিন্দিকে তৃতীয় ভাষা হিসাবে) কে জারি করেছিল? ফড়নবিশ সরকার এটি জারি করেছে। হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার সরকারি প্রস্তাব মোর্চায় পোড়ানো হবে।” উল্লেখ্য, হিন্দি আগ্রাসনের প্রতিবাদে যৌথ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন রাজ ঠাকরে-উদ্ধব ঠাকরে। দুই ভাই-ই বলেছেন, মহারাষ্ট্রের স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করতে বিশেষ আপত্তি তাঁদের নেই।

আরও পড়ুন: কৃষক আত্মহত্যা: মহারাষ্ট্রে ৩ মাসে আত্মঘাতী ৭৬৭ জন

শিব সেনার উদ্ধব শিবিরের মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত ঘোষণা করেছেন, হিন্দি আগ্রাসনের প্রতিবাদে এবার ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াইয়ে নামছেন উদ্ধব ঠাকরে এবং রাজ ঠাকরে। মহারাষ্ট্রের স্কুলে বাধ্যতামুলকভাবে হিন্দি শেখানোর প্রতিবাদে এমএনএস এবং শিব সেনা উদ্ধব যৌথ কর্মসূচি নিতে চলেছে। আগামী ৫ জুলাই এমএনএসের এবং ৭ জুলাই উদ্ধব সেনার পৃথক কর্মসূচি রয়েছে ওই একই ইস্যুতে। মনে করা হচ্ছে, দুই শিবির এবার ঐক্যবদ্ধভাবে রাস্তায় নামবে। আসন্ন মোর্চা থেকে নিশ্চয়ই ভালো কিছু বেরিয়ে আসবে বলে আশা রাউতের। তিনি বলেন, “আমরা চাই মারাঠি বাহিনী একসঙ্গে বৃহন্মুম্বই পুরসভা নির্বাচনে লড়ুক। এর আগে শিবসেনা ইউবিটি এবং এমএনএস নেতারা একে অপরের সাথে দেখা করেননি, তবে এখন তারা একে অপরের সাথে দেখা করছেন। তারা আলোচনা করছেন। মোর্চার পরে ইতিবাচক পরিবেশ থাকবে। এখন আমি বিশ্বাস করি যে মারাঠি জনগণের ঐক্য ভাঙবে না।”

আরও পড়ুন: মহারাষ্ট্র: পদ্ম বিধায়কের বিরুদ্ধে মিছিল খ্রিস্টানদের

শিবসেনা নেতার মন্তব্যের পর রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র কেশব উপাধ্যায় বলেছেন, “উদ্ধব ঠাকরে এই প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ হিন্দি নিয়ে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছেন বলে যে দাবি করা হচ্ছে, তা বেশ হাস্যকর। উদ্ধব ঠাকরে অ্যাকশন টেকেন রিপোর্টের জন্য একটি কমিটিও গঠন করেছিলেন। উদ্ধব ঠাকরে মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন রাজ্য সরকার মারাঠি ভাষা ভবন নয়, উর্দু ভবন নির্মাণের কথা ঘোষণা করেছিল।” তাঁর প্রশ্ন, তখন মারাঠির প্রতি তাঁদের ভালোবাসা কোথায় ছিল? মারাঠি ইস্যু তুলে ধরে মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছেন উদ্ধব ঠাকরে।

আরও পড়ুন: শনি শিঙ্গনাপুর মন্দির থেকে ছাটাই ১১৪ জন মুসলিম কর্মী, পর্দার আড়ালে হিন্দুত্ববাদীরা!