০৩ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

২০২৫ -এ বিধানসভা ভোটের আগে পশ্চিমবঙ্গে শুরু হচ্ছে ভোটার তালিকার ‘বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা’: নির্বাচন কমিশনের নয়া উদ্যোগ ঘিরে রাজনৈতিক চাপানউতোর

আফিয়া‌‌ নৌশিন
  • আপডেট : ২ জুলাই ২০২৫, বুধবার
  • / 29

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধনের পর এবার নির্বাচন কমিশনের নজর পশ্চিমবঙ্গের দিকে। সূত্রের খবর, চলতি বছরের আগস্ট মাসে রাজ্যে শুরু হতে চলেছে ‘বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা’ (Special Intensive Revision বা SIR)। প্রায় ২৩ বছর পরে পশ্চিমবঙ্গে হতে চলেছে এই ধরণের একটি বড় মাপের সমীক্ষা। শেষ বার এই সমীক্ষা হয়েছিল ২০০২ সালের ১ জানুয়ারি। কমিশনের তরফে ইতিমধ্যেই রাজ্যগুলিকে নতুন নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে, যার আওতায় এই ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ হবে।

কমিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথমে অনলাইনে ভোটার হিসেবে নাম তোলার আবেদন শুরু হবে। তারপরে কমিশনের কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য যাচাই করবেন। যদি কোনও ভুয়ো ভোটার কার্ড বা জাল তথ্য পাওয়া যায়, তবে এফআইআর (FIR) দায়ের করা হবে বলেও জানানো হয়েছে। বিহারের মতো একই পদ্ধতি এবার পশ্চিমবঙ্গেও কার্যকর হবে বলে কমিশনের অভ্যন্তরীণ সূত্রে খবর।

এই প্রক্রিয়াটি মূলত ২০২৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। উল্লেখ্য, আগামী বছরের এপ্রিল-মে মাসে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা।

আরও পড়ুন: বিহার বিধানসভা নির্বাচন ও ভোটার তালিকা সংশোধন ঘিরে তৃণমূলের আপত্তি, নির্বাচন কমিশনে প্রতিনিধিদল

নির্বাচন কমিশনের নয়া নির্দেশিকায় ২০০৩ সালকে ভিত্তি হিসেবে ধরে এসআইআর পরিচালনার কথা বলা হয়েছে। তবে এই সিদ্ধান্ত ঘিরেই রাজনৈতিক বিতর্ক চরমে উঠেছে। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এর তীব্র বিরোধিতা জানিয়েছে।

আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক মারদানী ক্যারাটে প্রতিযোগিতায় ক্যানিংয়ের প্রিয়াংশু পেলো রৌপ্য পদক

মঙ্গলবার লোকসভার সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একটি তৃণমূল প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনের সদর দফতরে গিয়ে তাদের আপত্তি জানায়। প্রতিনিধি দলে ছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ প্রকাশ চিক বরাইক, এবং তিন মন্ত্রী— ফিরহাদ হাকিম, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও অরূপ বিশ্বাস।

আরও পড়ুন: উচ্চ মাধ্যমিকে পাশের হার ৯০.৭৯ শতাংশ, শীর্ষে পূর্ব মেদিনীপুর

তৃণমূলের দাবি, ২০২৪ সালের ভোটার তালিকাকে ভিত্তি ধরেই এসআইআর করা উচিত। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যাঁরা ইতিমধ্যে তালিকাভুক্ত হয়েছেন, তাঁদের নাম যেন বাদ না পড়ে তা নিশ্চিত করতে হবে।”

তৃণমূল আশঙ্কা করছে, এই বিশেষ সমীক্ষার আড়ালে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কিছু নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা হতে পারে। এমন প্রেক্ষাপটে তৃণমূল নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন জানিয়েছে যাতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যাঁরা বৈধভাবে তালিকাভুক্ত, তাঁদের নাম কোনও অবস্থাতেই বাদ না পড়ে।

এই আশঙ্কার কারণ, এর আগে মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা ও দিল্লিতে বিধানসভা ভোটের আগে বিশাল সংখ্যক নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, যা নিয়ে কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি (AAP) ও উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা খুল্লামখুল্লা আপত্তি জানিয়েছিল। তৃণমূল চাইছে, পশ্চিমবঙ্গে যেন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।

নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, কিন্তু তার বাস্তবায়ন ও উদ্দেশ্য ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্ক এখন তুঙ্গে। নির্বাচন কমিশনের বিশেষ সমীক্ষা (SIR) প্রকল্প একদিকে যেমন নির্বাচনী স্বচ্ছতা ও নির্ভুলতা নিশ্চিত করতে চায়, তেমনই তার রাজনৈতিক ব্যাখ্যাও তৈরি হচ্ছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি ও আপত্তিকে কেন্দ্র করে আগামী দিনে এই ইস্যুতে আরও চাপানউতোর দেখা যেতে পারে, বিশেষ করে ভোটের সময় যত এগোবে। কমিশনের নিরপেক্ষতা ও যথার্থতা রক্ষার দায়িত্ব যে ক্রমেই বাড়ছে, তা বলাই বাহুল্য।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

২০২৫ -এ বিধানসভা ভোটের আগে পশ্চিমবঙ্গে শুরু হচ্ছে ভোটার তালিকার ‘বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা’: নির্বাচন কমিশনের নয়া উদ্যোগ ঘিরে রাজনৈতিক চাপানউতোর

আপডেট : ২ জুলাই ২০২৫, বুধবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধনের পর এবার নির্বাচন কমিশনের নজর পশ্চিমবঙ্গের দিকে। সূত্রের খবর, চলতি বছরের আগস্ট মাসে রাজ্যে শুরু হতে চলেছে ‘বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা’ (Special Intensive Revision বা SIR)। প্রায় ২৩ বছর পরে পশ্চিমবঙ্গে হতে চলেছে এই ধরণের একটি বড় মাপের সমীক্ষা। শেষ বার এই সমীক্ষা হয়েছিল ২০০২ সালের ১ জানুয়ারি। কমিশনের তরফে ইতিমধ্যেই রাজ্যগুলিকে নতুন নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে, যার আওতায় এই ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ হবে।

কমিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথমে অনলাইনে ভোটার হিসেবে নাম তোলার আবেদন শুরু হবে। তারপরে কমিশনের কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য যাচাই করবেন। যদি কোনও ভুয়ো ভোটার কার্ড বা জাল তথ্য পাওয়া যায়, তবে এফআইআর (FIR) দায়ের করা হবে বলেও জানানো হয়েছে। বিহারের মতো একই পদ্ধতি এবার পশ্চিমবঙ্গেও কার্যকর হবে বলে কমিশনের অভ্যন্তরীণ সূত্রে খবর।

এই প্রক্রিয়াটি মূলত ২০২৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। উল্লেখ্য, আগামী বছরের এপ্রিল-মে মাসে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা।

আরও পড়ুন: বিহার বিধানসভা নির্বাচন ও ভোটার তালিকা সংশোধন ঘিরে তৃণমূলের আপত্তি, নির্বাচন কমিশনে প্রতিনিধিদল

নির্বাচন কমিশনের নয়া নির্দেশিকায় ২০০৩ সালকে ভিত্তি হিসেবে ধরে এসআইআর পরিচালনার কথা বলা হয়েছে। তবে এই সিদ্ধান্ত ঘিরেই রাজনৈতিক বিতর্ক চরমে উঠেছে। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এর তীব্র বিরোধিতা জানিয়েছে।

আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক মারদানী ক্যারাটে প্রতিযোগিতায় ক্যানিংয়ের প্রিয়াংশু পেলো রৌপ্য পদক

মঙ্গলবার লোকসভার সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একটি তৃণমূল প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনের সদর দফতরে গিয়ে তাদের আপত্তি জানায়। প্রতিনিধি দলে ছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ প্রকাশ চিক বরাইক, এবং তিন মন্ত্রী— ফিরহাদ হাকিম, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও অরূপ বিশ্বাস।

আরও পড়ুন: উচ্চ মাধ্যমিকে পাশের হার ৯০.৭৯ শতাংশ, শীর্ষে পূর্ব মেদিনীপুর

তৃণমূলের দাবি, ২০২৪ সালের ভোটার তালিকাকে ভিত্তি ধরেই এসআইআর করা উচিত। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যাঁরা ইতিমধ্যে তালিকাভুক্ত হয়েছেন, তাঁদের নাম যেন বাদ না পড়ে তা নিশ্চিত করতে হবে।”

তৃণমূল আশঙ্কা করছে, এই বিশেষ সমীক্ষার আড়ালে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কিছু নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা হতে পারে। এমন প্রেক্ষাপটে তৃণমূল নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন জানিয়েছে যাতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যাঁরা বৈধভাবে তালিকাভুক্ত, তাঁদের নাম কোনও অবস্থাতেই বাদ না পড়ে।

এই আশঙ্কার কারণ, এর আগে মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা ও দিল্লিতে বিধানসভা ভোটের আগে বিশাল সংখ্যক নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, যা নিয়ে কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি (AAP) ও উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা খুল্লামখুল্লা আপত্তি জানিয়েছিল। তৃণমূল চাইছে, পশ্চিমবঙ্গে যেন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।

নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, কিন্তু তার বাস্তবায়ন ও উদ্দেশ্য ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্ক এখন তুঙ্গে। নির্বাচন কমিশনের বিশেষ সমীক্ষা (SIR) প্রকল্প একদিকে যেমন নির্বাচনী স্বচ্ছতা ও নির্ভুলতা নিশ্চিত করতে চায়, তেমনই তার রাজনৈতিক ব্যাখ্যাও তৈরি হচ্ছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি ও আপত্তিকে কেন্দ্র করে আগামী দিনে এই ইস্যুতে আরও চাপানউতোর দেখা যেতে পারে, বিশেষ করে ভোটের সময় যত এগোবে। কমিশনের নিরপেক্ষতা ও যথার্থতা রক্ষার দায়িত্ব যে ক্রমেই বাড়ছে, তা বলাই বাহুল্য।