প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হল ‘বাংলাদেশ বুক অলিম্পিয়াড’

- আপডেট : ২০ জুলাই ২০২৫, রবিবার
- / 48
নিজস্ব প্রতিবেদক, বাংলাদেশ: ‘বই পড়ি, স্বপ্ন আঁকি’ স্লোগানে শুরু হলো স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘বাংলাদেশ বুক অলিম্পিয়াড’। শিশু-কিশোরদের বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করার জন্য এই অলিম্পিয়াড আয়োজন। আজ শনিবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আলোক শিক্ষালয়ে প্রথমবারে মতো মুক্ত আসরের উদ্যোগে বাংলাদেশ বুক অলিম্পিয়াড কমিটির আয়োজনে ২০০ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মাধ্যমে অলিম্পিয়াডের যাত্রা শুরু হয়। লাল ফিতা কেটে বাংলাদেশ বুক অলিম্পিয়াড উদ্বোধন করেন শব্দঘর সম্পাদক ও কথাসাহিত্যিক মোহিত কামাল।
মোহিত কামাল বলেন, প্রথমবারের এমন আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। বইয়ের সঙ্গে থাকতে চাই। অত্যধিক নেট-আসক্তির কারণে ‘ব্রেনরট’ নামের নতুন শব্দ চালু হয়েছে বিশ্ব ডিকশনারিতে। বলা যায়, ব্রেনের অপরিমিত তথ্যপ্রবাহে জট তৈরি হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মস্তিষ্কের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া। পড়াশোনায় বিমুখ হচ্ছে সন্তানেরা, আচরণেও ব্যাপক বিধ্বংসী অবস্থা তৈরি হচ্ছে, ঘরে ঘরে চলছে প্রকাশ্য যুদ্ধ। মা-বাবা ও সন্তান দুইপক্ষই হয়ে যাচ্ছ একে অপরের বিরুদ্ধপক্ষ।
শিশুকাল থেকে নেটের এই অপব্যবহার কেবল ‘ব্রেনরট’ করেই থেমে যাচ্ছে না, পড়াশোনা থেকেও দূরে সরিয়ে দিচ্ছে সন্তানদের। তাদের ক্যারিয়ার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এসব সহ্য করতে পারছেন না মা-বাবা, অসুস্থও হয়ে যাচ্ছেন অল্প বয়সে, নানা রোগশোকে আক্রান্ত হচ্ছেন।
মোহিত কামাল আরও বলেন, উৎকর্ষ প্রযুক্তির এ যুগে অবশ্যই নেটের লাগামহীন ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে শিশুকাল থেকেই। নেটের সঙ্গে তারা পরিচিত হবে, সমস্যা নেই। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত হয়ে গেলে রক্ষা নেই। শিশুকাল থেকে দৃঢ়তার সঙ্গে নিয়ম-শৃঙ্খলা জাগিয়ে তুলতে হবে শিশুর ব্যবহারে, নিয়মিত জীবনে। নেটের বিকল্প হিসেবে বিনোদনের আরও অন্যান্য বাবস্থাপনা থাকতে হবে, তার ঘরে-লাইবেরি গড়ে তুলতে হবে। শিশুতোষ বই কিংবা বয়স অনুযায়ী শিশুদের ঘরে পারিবারিক সামর্থ্যের আলোকে লাইব্রেরি সাজাতে হবে।
মজার মজার বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে, পড়ার মাধ্যমে বিনোদন দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারলে, অনিয়ন্ত্রিত হওয়ার সুযোগ পাবে না সন্তান। তারসাথে, যাতে তারা বাচ্চাদের সময় দিতে পারে তাই বড়দেরও নিয়ন্ত্রিত হতে হবে নেট–আসক্তি থেকে। তাদেরই রোলমডেল প্লে করতে হবে, পরিবারের বড়দেরও। শিশুর ঘরে চিত্রাঙ্কনের নানা উপকরণ কিংবা লুডু, সাপলুডু, ক্যারম বোর্ড, দাবা ইত্যাদি ঘরোয়া খেলাধুলার পুরোনো দিনের অভ্যাসটাকে চালু করতে হবে। মুক্ত আসর নতুন উদ্যোগ নিয়েছে, ‘বই পড়ি, স্বপ্ন আঁকি’ শিরোনামে তারা ‘বুক অলিম্পিয়াড ২০২৫’ শুরু করল। তাদের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।
শিশুসাহিত্যিক আখতার হুসেন বলেন, ‘আমার এখন ৮১ বছর বয়স। তবু আমি এখানে এসেছি। কারণ, বুক অলিম্পিয়াড বিষয়টা আমার কাছে দারুণ লেগেছে। প্রথমবারের মতো এমন আয়োজনের সাক্ষী হিসেবে থাকতে পেরে আবেগাপ্লুত। নিশ্চয়ই একদিন গণিত অলিম্পিয়াডের মতো এর ব্যাপক বিস্তার পাবে।’
বাংলাদেশ বুক অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি রোকেয়া ইসলাম বলেন, ‘আমরা চাই, বই পড়ার মাধ্যমে ছেলেমেয়ের চিন্তার বিকাশ হোক। আমরা বুক অলিম্পিয়াডকে অনেক দূর নিয়ে যেতে চাই। ছেলেমেয়েরা বই পড়ার মাধ্যমে তাদের স্বপ্নকে বড় করবে।’
বাংলাদেশ বুক অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ বলেন, ‘আমরা চাই বই পড়ার মাধ্যমে ছেলেমেয়েদের সৃজনশীল ও মননশীল চিন্তার সৃষ্টি হোক। প্রতিবছর কমপক্ষে শিক্ষার্থীরা ক্লাসের পড়া বাদ দিয়ে ২০-২৫টি বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠুক।
এ ছাড়া বক্তব্য দেন শিশুসাহিত্যিক দন্ত্যস রওশন, লেখক ও গবেষক সাহাদাত পারভেজ, যোগাযোগবিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক আবুল বাসার মিরাজ, আলোক শিক্ষালয়ের শিক্ষক শাওলিন আক্তার, লেখক সাহাদাত পারভেজ, মুক্ত আসরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৌশিক চাকমা প্রমুখ।
এক ঘণ্টা বইবিষয়ক নানা ধরনের প্রশ্ন নিয়ে তিনটি ক্যাটাগরিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তিনটি ক্যাটাগরিতে ৩২ জনকে বিজয় করা হয়। প্রত্যেক বিজয়ীকে দেওয়া হয় বই, সনদ। প্রস্তুতি পর্বের বিজয়ীরা সরাসরি জাতীয় পর্যায় অংশ নেবে।
পরীক্ষাপর্ব শেষ হলে শুরু হয়ে সাংস্কৃতিক ও আলোচনা অনুষ্ঠান। নজরুলসংগীত পরিবেশন করেন নজরুলসংগীতশিল্পী ও আমিই নজরুলের পরিচালক উম্মে রুমা ট্রফি ও সহপরিচালক সংগীতা পাল। এ ছাড়া গান পরিবেশন করেন আলোক শিক্ষালয়ের শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ বুক অলিম্পিয়াডের প্রধান সমন্বয়ক আয়শা জাহান নূপুর।
বাংলাদেশ বুক অলিম্পিয়াডে সহযোগিতায় আছে স্বপ্ন ’৭১ প্রকাশন, বইচারিতা ও কাঠবিড়ালি প্রকাশন।