দিল্লি পুলিশের নজরদারিতে ফাঁক? সুপ্রিম কোর্টের চোখের সামনেই শিশু নিয়ে দেশ ছাড়লেন রাশিয়ান মা

- আপডেট : ১ অগাস্ট ২০২৫, শুক্রবার
- / 27
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: দিল্লি পুলিশের গাফিলতিতে পাঁচ বছরের এক শিশুকে সুপ্রিম কোর্টের হেফাজত থেকেই দেশছাড়া করলেন রাশিয়ান নাগরিক ভিক্টোরিয়া! শুক্রবার এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ভারতের শীর্ষ আদালত। বিচারপতি সূর্য কান্তের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, আদালতের নির্দেশ অমান্য করে শিশুকে বিদেশে নিয়ে যাওয়া শুধু আদালত অবমাননা নয় – এটি একেবারে ফৌজদারি জালিয়াতির ঘটনা।
চন্দননগরের বাসিন্দা সৈকত বসু রাশিয়ার নাগরিক ভিক্টোরিয়াকে বিয়ে করেছিলেন। ২০২০ সালে তাঁদের পুত্রসন্তান জন্ম নেয়। তবে দাম্পত্যে টানাপোড়েনের জেরে তাঁরা আলাদা থাকতেন এবং সন্তানের হেফাজত নিয়ে আইনি লড়াই চলছিল সুপ্রিম কোর্টে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, সপ্তাহে নির্দিষ্ট তিন দিন ছেলেকে নিজের কাছে রাখার অনুমতি পেয়েছিলেন মা। কিন্তু ৭ জুলাই স্কুল থেকে ছেলেকে আনার পর থেকেই তাঁর এবং শিশুর আর কোনও খোঁজ মেলেনি।
পরে জানা যায়, শিশুটির পাসপোর্ট আদালতের হেফাজতে থাকার পরও ভিক্টোরিয়া প্রথমে দিল্লি থেকে বিহারের নারকাটিয়াগঞ্জ পৌঁছান, সেখান থেকে নেপাল হয়ে শারজা পৌঁছান ১২ জুলাই। সুপ্রিম কোর্টে দিল্লি পুলিশের দেওয়া স্টেটাস রিপোর্টে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বিচারপতি কান্তের পর্যবেক্ষণ, “এই শিশুকে শীর্ষ আদালতের নজরদারিতেই রাখা হয়েছিল। বাবা বা মা, কাউকেই এখনও স্থায়ী হেফাজত দেওয়া হয়নি। কিন্তু মায়ের মাধ্যমে আদালতের চোখের সামনেই সে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর সম্পূর্ণ দায় দিল্লি পুলিশের।”
শীর্ষ আদালতের কড়া নির্দেশ—রাশিয়ান মা এবং শিশুর অবস্থান শনাক্ত করে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, মস্কোতে ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে অবিলম্বে সমন্বয় করতে হবে। প্রয়োজনে ইন্টারপোলের সহায়তায় লুক-আউট নোটিস জারি করতে হবে ভিক্টোরিয়ার নামে।
আদালতের আরও অভিযোগ, আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাগুলি তথ্য দিতে অস্বীকার করছে। কিন্তু শীর্ষ আদালতের মতে, কোনও অপরাধের তদন্তে বিমান সংস্থা নিরাপত্তার অজুহাতে তথ্য না দিয়ে দায়িত্ব এড়াতে পারে না।
দিল্লি পুলিশের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে আদালত। এই মামলার পরবর্তী শুনানি নির্ধারিত হয়েছে ১০ দিন পর।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফের একবার প্রশ্ন উঠছে: আদালতের কড়া নজরদারি থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে একটি শিশু ভারতের বাইরে চলে যেতে পারে? রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, বিচারপ্রক্রিয়া এবং পুলিশের দায়িত্বজ্ঞান নিয়ে তৈরি হয়েছে বড়সড় বিতর্ক।