এনআরসি নোটিশ এবার বক্সিরহাটের দীপঙ্কর সরকারকে

- আপডেট : ২ অগাস্ট ২০২৫, শনিবার
- / 38
রুবায়েত মোস্তফা, কোচবিহার: অসম সরকারের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল থেকে ফের এক বাঙালি পরিবারের যুবককে ‘বিদেশি’ সন্দেহে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এবার নোটিশ এসেছে কোচবিহারের বক্সিরহাট থানার অন্তর্গত রামপুর গ্রামের বাসিন্দা দীপঙ্কর সরকারের নামে। পেশায় তিনি একজন কাঠমিস্ত্রি।
দীপঙ্কর সরকার কোচবিহারের রামপুরের ভোটার। তার বাবা এবং তার নিজের জন্মও এখানেই। এর আগে কোচবিহারে দিনহাটার বাসিন্দা উত্তমকুমার ব্রজবাসী, মাথাভাঙার বাসিন্দা নিশিকান্ত দাস, তুফানগঞ্জ-এর শালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের বাঁশরাজা গ্রামের বাসিন্দা মোমিনা বিবি-র কাছে এই ধরনের নোটিশ এসেছে। এবার সংযোজন তুফানগঞ্জ-এর রামপুরের বাসিন্দা দীপঙ্কর সরকার।
অসম থেকে এনআরসি-র নোটিশ পেয়েছেন কোচবিহারের বক্সিরহাট থানার অন্তর্গত রামপুরের বাসিন্দা দীপঙ্কর সরকার। প্রথম চিঠি তার কাছে আছে গত জানুয়ারি মাসে। গত মার্চ মাসে অসম ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল থেকে দ্বিতীয় নোটিশ পাওয়ার পর ওই যুবক অসমে গিয়ে জমির দলিল ও ভোটার তালিকা দেখিয়েছেন। ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল তাতে সন্তুষ্ট হয়নি।
দীপঙ্কর জানিয়েছেন, প্রায় ১১ বছর আগে গ্রামের আরও তিন পরিচিতের সঙ্গে কাজের সন্ধানে অসমে গিয়েছিলেন তিনি। অসমের গুয়াহাটির বেরুপাড়া শহরে ভাড়া বাড়িতে থেকে কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন। সেটা সম্ভবত ২০১৪ সাল হবে। সেই সময়ই অসম পুলিশ তাদের বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করে পল্টনবাজার থানায় নিয়ে যায়। তারা ভোটার কার্ড, আধার কার্ড দেখিয়ে প্রমাণ করেন, তারা বাংলাদেশি নন।
এরপর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয় কিন্তু তাদের জানানো হয়, বাড়িতে ফিরে ১৯৬৬ সালের ভোটার তালিকা ও ১৯৭১ সালের জমির দলিল তৈরি রাখতে। দিন পনেরোর মধ্যে ফোন করে ডাকা হলে সেই নথি নিয়ে থানায় হাজির হতে বলা হয় তাদের। এরপর প্রত্যেকের আঙুলের ছাপ, মোবাইল নম্বর ও বাড়ির ঠিকানা সংগ্রহ করে রাখা হয় থানায়।
কিন্তু এর পরে আর থানা থাকে তারা কোনও দিন ফোন পাননি বলে আর যাওয়া হয়নি পুলিশের কাছে। দীপঙ্কর জানান, গত জানুয়ারি মাসে প্রথম একটি নোটিশ পাই। দ্বিতীয় নোটিশ পাই গত মার্চ মাসে। তারপর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আইনজীবী মারফত অসম ট্রাইব্যুনালে সেসব দাখিল করি। কিন্তু তাতেও তারা সন্তুষ্ট নয়। বিষয়টা নিয়ে খুব আতঙ্কে রয়েছি।
এদিকে খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুক্রবার তুফানগঞ্জ-২ ব্লকের রামপুর এলাকায় যান তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক। দীপঙ্কর সরকারের বাড়িতেও নোটিশ আসার খবর পেয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। অসম সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করেন।
অভিজিৎ দে ভৌমিক বলেন, বিজেপি শাসিত রাজ্য অসমের সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের ভয়ে, আতঙ্কে রাখতে চাইছে। উদ্দেশ্য, যাতে ভয় পেয়ে বিজেপির শরণাপন্ন হয় এইসব মানুষগুলো। কিন্তু তা হবে না। বিজেপি নিজের সর্বনাশ করছে এগুলো করে। আমরা এইসব পরিবারগুলোর পাশে রয়েছি। আর বলেছি, পশ্চিমবঙ্গের কোনও বাসিন্দা এ ধরনের নোটিশ পেলে অসমকে তার কোনও উত্তর দেওয়া হবে না।’