১১ অগাস্ট ২০২৫, সোমবার, ২৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

১০ বছর থেকেই মাদক নিতে শুরু করে মেঘালয়ের শিশুরা: রিপোর্ট

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ১১ অগাস্ট ২০২৫, সোমবার
  • / 30

পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: মাদকের বিভীষিকায় ধুঁকছে সমাজ! ৮ থেকে ৮০ সর্বনাশা মাদকের কবলে আসক্ত হয়ে পড়েছে বহু মানুষ। আধুনিক সভ্যতায় নানা অগ্রগতির সত্ত্বেও মাদক আজ আমাদের সমাজ, রাষ্ট্র ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে কিছু ভয়ঙ্কর তথ্য। যাতে দেখা যাচ্ছে শুধু মেঘালয়ে ক্রমবর্ধমানভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে মাদক সেবনের ঘটনা। মাত্র ১০ বছর বয়স থেকেই মদ, গাঁজা খাওয়া শুরু করে সেরাজ্যের শিশুরা। মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানসহ বাদ নেই কোনও শ্রেণিই। প্রথমে সিগারেট দিয়ে নেশার জগতে প্রবেশ করে তারা। এরপর আস্তে আস্তে গাঁজা, হেরোইন, সহ নানা ধরনের মাদকে আসক্ত হয়।

গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, মণিপুর বা নাগাল্যান্ডেও উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি পেয়েছে মাদক সেবনের ঘটনা। তবে এক্ষেত্রে মেঘালয়ের থেকে কিছুটা ভালো জায়গায় রয়েছে রাজ্যদ্বয়। এখানে মাদক গ্রহণের গড় বয়স ২২ বছর।

আরও পড়ুন: কসবা ল কলেজ কান্ডে তদন্ত রিপোর্ট পেশ

ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ পাবলিক হেলথ (এপ্রিল-জুন ২০২৫ সংস্করণ) –এ প্রকাশিত এই কোয়ালিটেটিভ গবেষণাটি শিলংয়ের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ পাবলিক হেলথ এবং মেঘালয় এইডস কন্ট্রোল সোসাইটির গবেষকরা পরিচালনা করেছেন। পূর্ব খাসি পাহাড়, পশ্চিম জৈন্তিয়া পাহাড় এবং পূর্ব জৈন্তিয়া পাহাড় জুড়ে ওপিওয়েড প্রতিস্থাপন থেরাপিতে নথিভুক্ত ১২৮ জন ব্যক্তির উপর গবেষণা করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে মাদক গ্রহণের গড় বয়স ১৯ বছর। এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি উত্তর দাতারা নাবালক বয়সে এবং এক-চতুর্থাংশ স্কুলে থাকাকালীন মাদক গ্রহণ শুরু করেছিল।

সমীক্ষা অনুসারে, ৯১ শতাংশেরও বেশি মাদকসেবনকারী পুরুষ। মাদক ব্যবহার শুরু করার মূল কারণ হিসেবে কৌতূহল, পারিবারিক সমস্যা। এছাড়া বিভিন্ন চাপ থেকে মুক্তির কথা ভেবেই এই সর্বনাশা মাদকে আসক্ত হয়েছে শিশু থেকে যুব সমাজ। এতে আরও বলা হয়েছে, সেবনকারীদের অধিকাংশ ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক সেবন করে। স্থানীয়ভাবে ‘ব্ল্যাক টাইগার’ এবং ‘ডাবল টাইগার’ নামে পরিচিত এই ড্রাগগুলোই নেয় তারা। যার দৈনিক খরচ ৫০০ থেকে ২০০০ টাকা এবং কিছু ক্ষেত্রে ২,৫০০ টাকা পর্যন্ত। কোনওভাবে তাঁদের সোর্স অফ ইনকাম বন্ধ হয়ে গেলে, তখন মাদকের চাহিদা মেটাতে এই শিশুগুলো চুরি, ছিনছাই সহ নানা অপরাধের সঙ্গে লিপ্ত হতে শুরু করে।

সঠিক সময়ে ব্যবস্থা না নিলে এই মাদকাসক্ত শিশু ও কিশোররা মাদক গ্রহণের কারণে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবে ও হচ্ছে। মাদকের বিষাক্ত নিকোটিনের কারণে তাদের কোষগুলো দুর্বল হতে থাকে। এতে তার শরীর থেকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। মধ্য বয়সে বিকলাঙ্গও হয়ে যেতে পারে। ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে ৮০ ভাগ। এ ছাড়া দৃষ্টিশক্তি লোপ পাওয়া, টাকা চুরির প্রবণতা বাড়া, পড়াশোনায় মনোযোগী না হওয়া, কর্মের শক্তি কমে যাওয়া, ঝগড়াপ্রবণ হওয়া, পরিবারের কথা না শোনা, ওজন কমে যাওয়া, খাওয়ায় অরুচিসহ নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

১০ বছর থেকেই মাদক নিতে শুরু করে মেঘালয়ের শিশুরা: রিপোর্ট

আপডেট : ১১ অগাস্ট ২০২৫, সোমবার

পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: মাদকের বিভীষিকায় ধুঁকছে সমাজ! ৮ থেকে ৮০ সর্বনাশা মাদকের কবলে আসক্ত হয়ে পড়েছে বহু মানুষ। আধুনিক সভ্যতায় নানা অগ্রগতির সত্ত্বেও মাদক আজ আমাদের সমাজ, রাষ্ট্র ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে কিছু ভয়ঙ্কর তথ্য। যাতে দেখা যাচ্ছে শুধু মেঘালয়ে ক্রমবর্ধমানভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে মাদক সেবনের ঘটনা। মাত্র ১০ বছর বয়স থেকেই মদ, গাঁজা খাওয়া শুরু করে সেরাজ্যের শিশুরা। মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানসহ বাদ নেই কোনও শ্রেণিই। প্রথমে সিগারেট দিয়ে নেশার জগতে প্রবেশ করে তারা। এরপর আস্তে আস্তে গাঁজা, হেরোইন, সহ নানা ধরনের মাদকে আসক্ত হয়।

গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, মণিপুর বা নাগাল্যান্ডেও উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি পেয়েছে মাদক সেবনের ঘটনা। তবে এক্ষেত্রে মেঘালয়ের থেকে কিছুটা ভালো জায়গায় রয়েছে রাজ্যদ্বয়। এখানে মাদক গ্রহণের গড় বয়স ২২ বছর।

আরও পড়ুন: কসবা ল কলেজ কান্ডে তদন্ত রিপোর্ট পেশ

ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ পাবলিক হেলথ (এপ্রিল-জুন ২০২৫ সংস্করণ) –এ প্রকাশিত এই কোয়ালিটেটিভ গবেষণাটি শিলংয়ের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ পাবলিক হেলথ এবং মেঘালয় এইডস কন্ট্রোল সোসাইটির গবেষকরা পরিচালনা করেছেন। পূর্ব খাসি পাহাড়, পশ্চিম জৈন্তিয়া পাহাড় এবং পূর্ব জৈন্তিয়া পাহাড় জুড়ে ওপিওয়েড প্রতিস্থাপন থেরাপিতে নথিভুক্ত ১২৮ জন ব্যক্তির উপর গবেষণা করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে মাদক গ্রহণের গড় বয়স ১৯ বছর। এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি উত্তর দাতারা নাবালক বয়সে এবং এক-চতুর্থাংশ স্কুলে থাকাকালীন মাদক গ্রহণ শুরু করেছিল।

সমীক্ষা অনুসারে, ৯১ শতাংশেরও বেশি মাদকসেবনকারী পুরুষ। মাদক ব্যবহার শুরু করার মূল কারণ হিসেবে কৌতূহল, পারিবারিক সমস্যা। এছাড়া বিভিন্ন চাপ থেকে মুক্তির কথা ভেবেই এই সর্বনাশা মাদকে আসক্ত হয়েছে শিশু থেকে যুব সমাজ। এতে আরও বলা হয়েছে, সেবনকারীদের অধিকাংশ ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক সেবন করে। স্থানীয়ভাবে ‘ব্ল্যাক টাইগার’ এবং ‘ডাবল টাইগার’ নামে পরিচিত এই ড্রাগগুলোই নেয় তারা। যার দৈনিক খরচ ৫০০ থেকে ২০০০ টাকা এবং কিছু ক্ষেত্রে ২,৫০০ টাকা পর্যন্ত। কোনওভাবে তাঁদের সোর্স অফ ইনকাম বন্ধ হয়ে গেলে, তখন মাদকের চাহিদা মেটাতে এই শিশুগুলো চুরি, ছিনছাই সহ নানা অপরাধের সঙ্গে লিপ্ত হতে শুরু করে।

সঠিক সময়ে ব্যবস্থা না নিলে এই মাদকাসক্ত শিশু ও কিশোররা মাদক গ্রহণের কারণে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবে ও হচ্ছে। মাদকের বিষাক্ত নিকোটিনের কারণে তাদের কোষগুলো দুর্বল হতে থাকে। এতে তার শরীর থেকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। মধ্য বয়সে বিকলাঙ্গও হয়ে যেতে পারে। ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে ৮০ ভাগ। এ ছাড়া দৃষ্টিশক্তি লোপ পাওয়া, টাকা চুরির প্রবণতা বাড়া, পড়াশোনায় মনোযোগী না হওয়া, কর্মের শক্তি কমে যাওয়া, ঝগড়াপ্রবণ হওয়া, পরিবারের কথা না শোনা, ওজন কমে যাওয়া, খাওয়ায় অরুচিসহ নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।