০৫ অক্টোবর ২০২৫, রবিবার, ১৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কাফ শিরাফ নিয়ে সতর্ক রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর

সুস্মিতা
  • আপডেট : ৪ অক্টোবর ২০২৫, শনিবার
  • / 95

বেশিরভাগ কাফ শিরাপ অবৈজ্ঞানিক, বলছেন বিশেষজ্ঞরা

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: কাফ শিরাপ নিয়ে এবার রাজ্যের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে সতর্ক করল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। ভিন রাজ্যের নিষিদ্ধ কাফ শিরাপ যাতে কোনওভাবে রাজ্যের স্বাস্থ প্রতিষ্ঠান ও মেডিসিন সেন্টারগুলিতে প্রবেশ করতে না পারে, সেদিকে কড়া নজরদারি চালানোর জন্য বার্তা দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।

এই প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম জানান, এখনও আমাদের রাজ্যে ওই সংস্থার সরবরাহ করা ওষুধ পাওয়া যায়নি। এই নিয়ে রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোল সতর্ক রয়েছে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ওই দুই রাজ্যে যে সংস্থা কাফ সিরাপ সরবরাহ করে, তারা পশ্চিমবঙ্গে ওই ওষুধ সরবরাহ করে কি না, বিভিন্ন ওষুধ ডিস্ট্রিবিউটর সংস্থাকে খোঁজ নিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। প্রেসক্রিপশন ছাড়া কাফ শিরাফ কেনা যাবে না। এই বিষয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলও।

আরও পড়ুন: ক্যানসার প্রতিরোধে আরও একধাপ রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের

মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে পরপর শিশুমৃত্যুর ঘটনায় পরিবারগুলো আঙুল তুলছে নির্দিষ্ট কোম্পানির কাফ সিরাপের উপর । তাতে ক্ষতিকারক রাসায়নিক মেশানো ছিল বলে অভিযোগ। এর পর থেকেই কাফ সিরাপ নিয়ে সতর্ক রাজ্য সরকার।শিশুমৃত্যুর ঘটনার পর একটি বিশেষ অ্যাডভাইসরি জারি করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রক। তাতে বলা হয়েছে, ২ বছরের কম বয়সি শিশুদের কাফ সিরাপ দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

আরও পড়ুন: ‘অহেতুক সিজার নয়’, নয়া নির্দেশিকা রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের

এই বিষয়ে উলুবেড়িয়া হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. উজ্জ্বল মুন্সী পুবের কলমকে বলেন, কাফ সিরাফ দুই ধরণের। এক ধরণের কাফ শিরাপ শিশুদের শরীরে থাকা শ্লেষ্মা বেল করে দেয়। আর অন্য কাফ শিরাপ সর্দি বা শ্লেষ্মা ধামাচাপ দেয়, এই ধরণের কাফ শিরাপ ক্ষতিকারক। তাঁর পরামর্শ, চার বছরের নীচের শিশুদের এই ধরণের কাফ শিরাপ দেওয়া উচিত নয়। এর পরিবর্তে ইনহেলার ব্যবহার করা যেতে পারে। কোনও কোনও সময় কাশি এমনিতেই সেরে যায়। জোর করে কাফ সিরাপ দিয়ে কোনও লাভ তো হয়ই না, বরং বাড়তে পারে ক্ষতি হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি।

সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে বাড়ছে ভাইরাস আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা। সক্রিয় মেটানিমো, ইনফ্লুয়েঞ্জা বি, অ্যাডিনো ভাইরাসও। এসএসকেএম, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, বিসি রায়, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ, এনআরএস-জুড়ে এই সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছে বহু শিশু।

বেসরকারি হাসপাতালের শিশুরোগ বিভাগেও সেই ছবিই দেখা যাচ্ছে। জ্বর, শ্বাসকষ্ট, কাশি, নাক দিয়ে জল পড়ার উপসর্গে কাবু শিশুরা। এক বছরের নীচে শিশুদের মধ্যে আক্রান্তের প্রবণতা বেশি। অনেক অভিভাবকই কাশি, সর্দি হলে শিশুদের কাফ সিরাপ খাওয়ান। এই নিয়ে সতর্ক করে নির্দেশিকা জারি করেছে কেন্দ্র। একই কথা বলছেন চিকিৎসকরা। সিরাপের ব্যবহার নিয়ে অভিভাবকদের সতর্ক করে চিকিৎসকরা বলছেন, ২ বছর বয়সের নীচের শিশুকে কাফ সিরাপ দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

কাফ শিরাফ সম্পর্কে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এমএসভিপি অঞ্জন অধিকারী পুবের কলমকে বলেন, কাফ শিরাপ নিয়ে সমস্যা বহুদিনের। গুণমান বজায় রাখা খুবই জরুরি। কারণ এই শিরাপ সাধারণত বাচ্ছা এবং বয়স্কদের জন্য ব্যবহার করা হয়, যারা রুগ্ন প্রকৃতির হয়, তাদের জন্যই এটা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তিনি বলেন, বেশিরভাগ কাফ শিরাপ তৈরি হয় অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে, উপাদানগুলিও ঠিক মতো মেইনটেন হয় না। তাই নিয়মিত কাফ শিরাপের গুণগত মান নির্ণয় জরুরি। সংরক্ষিত রা’ার জন্য যে তাপমাত্রা প্রয়োজন হয়, সেটাও মেইনটেন হয় না অধিকাংশ ক্ষেত্রে। এই নিয়ে ড্রাগ কন্ট্রোলের বিশেষ অভিযান চালিয়ে নজরদারি প্রয়োজন। পাশাপাশি সেই সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে জনসাধারণের মধ্যে প্রচার করা এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

কাফ শিরাফ নিয়ে সতর্ক রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর

আপডেট : ৪ অক্টোবর ২০২৫, শনিবার

বেশিরভাগ কাফ শিরাপ অবৈজ্ঞানিক, বলছেন বিশেষজ্ঞরা

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: কাফ শিরাপ নিয়ে এবার রাজ্যের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে সতর্ক করল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। ভিন রাজ্যের নিষিদ্ধ কাফ শিরাপ যাতে কোনওভাবে রাজ্যের স্বাস্থ প্রতিষ্ঠান ও মেডিসিন সেন্টারগুলিতে প্রবেশ করতে না পারে, সেদিকে কড়া নজরদারি চালানোর জন্য বার্তা দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।

এই প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম জানান, এখনও আমাদের রাজ্যে ওই সংস্থার সরবরাহ করা ওষুধ পাওয়া যায়নি। এই নিয়ে রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোল সতর্ক রয়েছে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ওই দুই রাজ্যে যে সংস্থা কাফ সিরাপ সরবরাহ করে, তারা পশ্চিমবঙ্গে ওই ওষুধ সরবরাহ করে কি না, বিভিন্ন ওষুধ ডিস্ট্রিবিউটর সংস্থাকে খোঁজ নিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। প্রেসক্রিপশন ছাড়া কাফ শিরাফ কেনা যাবে না। এই বিষয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলও।

আরও পড়ুন: ক্যানসার প্রতিরোধে আরও একধাপ রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের

মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে পরপর শিশুমৃত্যুর ঘটনায় পরিবারগুলো আঙুল তুলছে নির্দিষ্ট কোম্পানির কাফ সিরাপের উপর । তাতে ক্ষতিকারক রাসায়নিক মেশানো ছিল বলে অভিযোগ। এর পর থেকেই কাফ সিরাপ নিয়ে সতর্ক রাজ্য সরকার।শিশুমৃত্যুর ঘটনার পর একটি বিশেষ অ্যাডভাইসরি জারি করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রক। তাতে বলা হয়েছে, ২ বছরের কম বয়সি শিশুদের কাফ সিরাপ দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

আরও পড়ুন: ‘অহেতুক সিজার নয়’, নয়া নির্দেশিকা রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের

এই বিষয়ে উলুবেড়িয়া হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. উজ্জ্বল মুন্সী পুবের কলমকে বলেন, কাফ সিরাফ দুই ধরণের। এক ধরণের কাফ শিরাপ শিশুদের শরীরে থাকা শ্লেষ্মা বেল করে দেয়। আর অন্য কাফ শিরাপ সর্দি বা শ্লেষ্মা ধামাচাপ দেয়, এই ধরণের কাফ শিরাপ ক্ষতিকারক। তাঁর পরামর্শ, চার বছরের নীচের শিশুদের এই ধরণের কাফ শিরাপ দেওয়া উচিত নয়। এর পরিবর্তে ইনহেলার ব্যবহার করা যেতে পারে। কোনও কোনও সময় কাশি এমনিতেই সেরে যায়। জোর করে কাফ সিরাপ দিয়ে কোনও লাভ তো হয়ই না, বরং বাড়তে পারে ক্ষতি হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি।

সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে বাড়ছে ভাইরাস আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা। সক্রিয় মেটানিমো, ইনফ্লুয়েঞ্জা বি, অ্যাডিনো ভাইরাসও। এসএসকেএম, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, বিসি রায়, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ, এনআরএস-জুড়ে এই সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছে বহু শিশু।

বেসরকারি হাসপাতালের শিশুরোগ বিভাগেও সেই ছবিই দেখা যাচ্ছে। জ্বর, শ্বাসকষ্ট, কাশি, নাক দিয়ে জল পড়ার উপসর্গে কাবু শিশুরা। এক বছরের নীচে শিশুদের মধ্যে আক্রান্তের প্রবণতা বেশি। অনেক অভিভাবকই কাশি, সর্দি হলে শিশুদের কাফ সিরাপ খাওয়ান। এই নিয়ে সতর্ক করে নির্দেশিকা জারি করেছে কেন্দ্র। একই কথা বলছেন চিকিৎসকরা। সিরাপের ব্যবহার নিয়ে অভিভাবকদের সতর্ক করে চিকিৎসকরা বলছেন, ২ বছর বয়সের নীচের শিশুকে কাফ সিরাপ দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

কাফ শিরাফ সম্পর্কে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এমএসভিপি অঞ্জন অধিকারী পুবের কলমকে বলেন, কাফ শিরাপ নিয়ে সমস্যা বহুদিনের। গুণমান বজায় রাখা খুবই জরুরি। কারণ এই শিরাপ সাধারণত বাচ্ছা এবং বয়স্কদের জন্য ব্যবহার করা হয়, যারা রুগ্ন প্রকৃতির হয়, তাদের জন্যই এটা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তিনি বলেন, বেশিরভাগ কাফ শিরাপ তৈরি হয় অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে, উপাদানগুলিও ঠিক মতো মেইনটেন হয় না। তাই নিয়মিত কাফ শিরাপের গুণগত মান নির্ণয় জরুরি। সংরক্ষিত রা’ার জন্য যে তাপমাত্রা প্রয়োজন হয়, সেটাও মেইনটেন হয় না অধিকাংশ ক্ষেত্রে। এই নিয়ে ড্রাগ কন্ট্রোলের বিশেষ অভিযান চালিয়ে নজরদারি প্রয়োজন। পাশাপাশি সেই সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে জনসাধারণের মধ্যে প্রচার করা এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।