১৩ অক্টোবর ২০২৫, সোমবার, ২৬ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মুসলিম নারীদের বোরকা ও নিকাব নিষিদ্ধের পথে ইতালি

সুস্মিতা
  • আপডেট : ৯ অক্টোবর ২০২৫, বৃহস্পতিবার
  • / 305

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ইতালিতে জনসমক্ষে মুসলিম নারীদের বোরকা ও নিকাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনা নিয়েছে দেশটির ক্ষমতাসীন ব্রাদার্স অব ইতালি দল। প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির নেতৃত্বাধীন এই ডানপন্থী দল বিষয়টিকে ‘ইসলামিক বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ’ হিসেবে তুলে ধরেছে।

দলের আইনপ্রণেতা আন্দ্রেয়া ডেলমাস্ত্রো বুধবার ফেসবুকে এক পোস্টে বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা পবিত্র, কিন্তু তা প্রকাশ্য স্থানে, আমাদের সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় নীতির প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই চর্চা করতে হবে।’ প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, জনসমক্ষে যেমন দোকান, ßুñল, অফিস বা অন্যান্য স্থানে বোরকা বা নিকাবের মতো সম্পূর্ণ মুখ ঢেকে রাখা পোশাক পরা নিষিদ্ধ হবে। আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে জরিমানা হবে ৩০০ থেকে ৩,০০০ ইউরো পর্যন্ত।

এই প্রস্তাব কেবল মুখঢাকা পোশাক নিষিদ্ধ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি একটি বৃহত্তর বিল, যার মাধ্যমে মসজিদের অর্থায়ন নিয়ন্ত্রণ, জোরপূর্বক বিবাহের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি এবং রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত নয় এমন ধর্মীয় সংগঠনগুলোর বিদেশি অর্থায়নের তথ্য প্রকাশ বাধ্যতামূলক করার বিধান রাখা হয়েছে। দলের অভিবাসন বিষয়ক প্রধান সারা কেলানি বলেন, ‘ইতালিতে আমাদের নিজস্ব মূল্যবোধ ও আইনের ভিত্তিতেই ধর্মীয় চর্চা হবে।’

ডেলমাস্ত্রো জানিয়েছেন, এই আইনটির অনুপ্রেরণা এসেছে ফ্রান্সের কাছ থেকে, যে দেশ ২০১১ সালে ইউরোপে প্রথমবারের মতো পূর্ণ বোরকা নিষিদ্ধ করেছিল। এরপর বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ডসহ আরও কয়েকটি দেশ আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেছে।

যদিও ইতালিতে ১৯৭৫ সালের একটি আইন অনুযায়ী জনসমক্ষে পুরো মুখ ঢাকা পোশাক পরা নিষিদ্ধ, সেখানে বোরকা বা নিকাবের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা নেই। প্রস্তাবিত নতুন আইনে সেটিকে আরও স্পষ্ট ও কঠোরভাবে সংজ্ঞায়িত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতালির প্রধান ইসলামিক সংগঠন ইউনিয়ন অব ইসলামিক কমিউনিটিজ অব ইতালি এ বিষয়ে এখনও কোনও মন্তব্য জানায়নি।

তবে সমালোচকেরা বলছেন, সরকার যদি ব্যক্তির ধর্মীয় পোশাক বা আচরণ নিয়ে সরাসরি আইন করে বা জরিমানা আরোপ করে, তবে তা ব্যক্তিগত ধর্মচর্চার অধিকার ও স্বাধীনতায় রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ হিসেবে গণ্য হয়। এটি সংহতি বাড়ানোর পরিবর্তে সংখ্যালঘুদের আরও বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে।

ইউনিয়ন অফ ইসলামিক কমিউনিটিজ অফ ইতালি-র প্রেসিডেন্ট ইয়াসিন লাফরাম বলেন, ‘স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার গণতান্ত্রিক সমাজের একটি মৌলিক নীতি। রাষ্ট্র কোনও নারীর পোশাক নির্ধারণ করতে পারে না’। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও মুসলিম সংগঠনগুলোও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মার্কিন-কেন্দ্রিক মুসলিম অধিকার সংস্থা এই প্রস্তাবকে ‘অধিকারহানিকর ও বিভেদসৃষ্টিকারী’ বলে আখ্যা দিয়েছে এবং ইতালীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বৈষম্যবোধ বাড়ার আশংকা জানিয়েছে।

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

মুসলিম নারীদের বোরকা ও নিকাব নিষিদ্ধের পথে ইতালি

আপডেট : ৯ অক্টোবর ২০২৫, বৃহস্পতিবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ইতালিতে জনসমক্ষে মুসলিম নারীদের বোরকা ও নিকাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনা নিয়েছে দেশটির ক্ষমতাসীন ব্রাদার্স অব ইতালি দল। প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির নেতৃত্বাধীন এই ডানপন্থী দল বিষয়টিকে ‘ইসলামিক বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ’ হিসেবে তুলে ধরেছে।

দলের আইনপ্রণেতা আন্দ্রেয়া ডেলমাস্ত্রো বুধবার ফেসবুকে এক পোস্টে বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা পবিত্র, কিন্তু তা প্রকাশ্য স্থানে, আমাদের সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় নীতির প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই চর্চা করতে হবে।’ প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, জনসমক্ষে যেমন দোকান, ßুñল, অফিস বা অন্যান্য স্থানে বোরকা বা নিকাবের মতো সম্পূর্ণ মুখ ঢেকে রাখা পোশাক পরা নিষিদ্ধ হবে। আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে জরিমানা হবে ৩০০ থেকে ৩,০০০ ইউরো পর্যন্ত।

এই প্রস্তাব কেবল মুখঢাকা পোশাক নিষিদ্ধ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি একটি বৃহত্তর বিল, যার মাধ্যমে মসজিদের অর্থায়ন নিয়ন্ত্রণ, জোরপূর্বক বিবাহের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি এবং রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত নয় এমন ধর্মীয় সংগঠনগুলোর বিদেশি অর্থায়নের তথ্য প্রকাশ বাধ্যতামূলক করার বিধান রাখা হয়েছে। দলের অভিবাসন বিষয়ক প্রধান সারা কেলানি বলেন, ‘ইতালিতে আমাদের নিজস্ব মূল্যবোধ ও আইনের ভিত্তিতেই ধর্মীয় চর্চা হবে।’

ডেলমাস্ত্রো জানিয়েছেন, এই আইনটির অনুপ্রেরণা এসেছে ফ্রান্সের কাছ থেকে, যে দেশ ২০১১ সালে ইউরোপে প্রথমবারের মতো পূর্ণ বোরকা নিষিদ্ধ করেছিল। এরপর বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ডসহ আরও কয়েকটি দেশ আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেছে।

যদিও ইতালিতে ১৯৭৫ সালের একটি আইন অনুযায়ী জনসমক্ষে পুরো মুখ ঢাকা পোশাক পরা নিষিদ্ধ, সেখানে বোরকা বা নিকাবের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা নেই। প্রস্তাবিত নতুন আইনে সেটিকে আরও স্পষ্ট ও কঠোরভাবে সংজ্ঞায়িত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতালির প্রধান ইসলামিক সংগঠন ইউনিয়ন অব ইসলামিক কমিউনিটিজ অব ইতালি এ বিষয়ে এখনও কোনও মন্তব্য জানায়নি।

তবে সমালোচকেরা বলছেন, সরকার যদি ব্যক্তির ধর্মীয় পোশাক বা আচরণ নিয়ে সরাসরি আইন করে বা জরিমানা আরোপ করে, তবে তা ব্যক্তিগত ধর্মচর্চার অধিকার ও স্বাধীনতায় রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ হিসেবে গণ্য হয়। এটি সংহতি বাড়ানোর পরিবর্তে সংখ্যালঘুদের আরও বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে।

ইউনিয়ন অফ ইসলামিক কমিউনিটিজ অফ ইতালি-র প্রেসিডেন্ট ইয়াসিন লাফরাম বলেন, ‘স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার গণতান্ত্রিক সমাজের একটি মৌলিক নীতি। রাষ্ট্র কোনও নারীর পোশাক নির্ধারণ করতে পারে না’। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও মুসলিম সংগঠনগুলোও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মার্কিন-কেন্দ্রিক মুসলিম অধিকার সংস্থা এই প্রস্তাবকে ‘অধিকারহানিকর ও বিভেদসৃষ্টিকারী’ বলে আখ্যা দিয়েছে এবং ইতালীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বৈষম্যবোধ বাড়ার আশংকা জানিয়েছে।