১৩ অক্টোবর ২০২৫, সোমবার, ২৬ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বীরভূমের অন্তঃসত্ত্বা সোনালি খাতুনকে দেশে ফেরানোর নির্দেশ দিল বাংলাদেশ

কিবরিয়া আনসারি
  • আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২৫, শুক্রবার
  • / 393

পুবের কলম প্রতিবেদক: বাংলাদেশের জেলে বন্দি পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের অন্তঃসত্ত্বা সোনালি খাতুনকে দেশে ফেরানোর জন্য ভারতীয় হাইকমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত নির্দেশের একটি প্রতিলিপি প্রকাশ্যে এসেছে, যা সোনালি খাতুন এবং তাঁর সহবন্দিদের জন্য এক বড় স্বস্তির খবর। জানা গিয়েছে, গত জুনে দিল্লির বাসিন্দা সোনালি খাতুন, সুইটি বিবি-সহ মোট ছ’জনকে অসম সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ‘পুশ ব্যাক’ করার অভিযোগ উঠেছিল বিএসএফের বিরুদ্ধে। বর্তমানে তাঁরা বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সংশোধনাগারে ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে বন্দি আছেন।

নিম্ন আদালতে জামিন জটিলতা অব্যাহত যদিও ঢাকা হাই কোর্টের এই নির্দেশের পরেও নিম্ন আদালতে সোনালি বিবি-সহ মোট ছ’জনের জামিন এখনও মঞ্জুর হয়নি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, গত ২৯ সেপ্টেম্বর ওই জেলার মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের (সিজেএম) আদালতে তাঁদের জামিনের শেষ শুনানি হয়েছিল এবং মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে ২৩ অক্টোবর। পুজোর ছুটির কারণে শুনানি প্রক্রিয়ায় বিরতি ছিল। নথিপত্রগত কিছু জটিলতার কারণে জামিনের প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে বলে জানা গেছে।

আরও পড়ুন: বন দফতরের আপত্তিতে বসন্ত উৎসব নিষিদ্ধ বোলপুরের সোনাঝুরিতে

প্রসঙ্গত, এর আগে, সোনালি-সুইটিদের পরিবারের করা মামলার প্রেক্ষিতে গত ২৬ সেপ্টেম্বর কলকাতা হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল যে, ওই ছ’জনকে চার সপ্তাহের মধ্যে ভারতে ফিরিয়ে আনতে হবে। একইসঙ্গে, বাংলাদেশি সন্দেহে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে থাকা দিল্লি পুলিশের ওই ছ’জনকে আটক করা ও বিতাড়নের সিদ্ধান্তও বাতিল করে দেয় কলকাতা হাই কোর্ট। তবে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ মেনে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এখনও কোনও প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে কি না, তা স্পষ্ট নয়।

আরও পড়ুন: বীরভূমের হজ যাত্রীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ শিবির অনুষ্ঠিত হল সিউড়িতে

আবার, বাংলাদেশের আদালতে জামিন হয়ে গেলেও ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় তাঁরা কোথায় থাকবেন, তা নিয়ে সংশয় ছিল। এই পরিস্থিতিতেই বাংলাদেশের হাই কোর্টের সাম্প্রতিক নির্দেশ তাদের স্বস্তি দিল। রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ তথা পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলামের প্রতিনিধি মফিজুল শেখ এখনও তাঁদের সহায়তার জন্য বাংলাদেশে রয়েছেন। সামিরুল ইসলাম নিজেই ‘এক্স’ (সাবেক ট্যুইটার) পোস্টে বাংলাদেশের আদালতের এই নির্দেশের কথা জানিয়েছেন। অন্যদিকে, বিদেশ মন্ত্রকের তরফে এখনও এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।

আরও পড়ুন: বীরভূমের আরও একটি ত্রিশঙ্কু গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করল তৃণমূল কংগ্রেস

সামিরুল ইসলাম টুইটারে পোস্ট করে লিখেছেন, “আমাদের নিজস্ব দেশ যাদেরকে বাংলাদেশী হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য এত চেষ্টা করেছিল, তারাই এখন ভারতীয় বলে প্রমাণিত হয়েছে – আমাদের দ্বারা নয়, বাংলাদেশ দ্বারা। একটি যুগান্তকারী রায়ে, বাংলাদেশের একটি আদালত কেবল তাদের ভারতীয় নাগরিক ঘোষণা করেনি, এমনকি তাদের আধার কার্ড নম্বর এবং আবাসিক ঠিকানাও প্রমাণ হিসাবে উল্লেখ করেছে। আদালতের আদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে পাঠানো হয়েছে, যেখানে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে তাদের সকলকে – বীরভূমের গর্ভবতী মহিলা সোনালী খাতুন সহ – নিরাপদে ভারতে ফেরত পাঠানো হবে। এটি আবারও প্রকাশ করে যে বাংলা-বিরোধী বিজেপি কীভাবে দরিদ্র বাংলাভাষী মানুষকে নিষ্ঠুরভাবে লক্ষ্যবস্তু করে, তাদের বাংলাদেশী হিসেবে চিহ্নিত করে এবং তাদের ভাষা ছাড়া অন্য কোনও কারণে তাদের নির্বাসিত করে। আমরা এখনও মনে করি কিভাবে বাংলায় বিজেপির কয়েকজন এজেন্ট তাদের রোহিঙ্গা হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করেছিল।

সেই আক্রমণগুলি এমনকি আমাকে বা আমার পরিবারকেও রেহাই দেয়নি। ” তৃণমূল সাংসদ সামিরুল ইসলাম টুইটারে আরো লিখেছেন,” তবুও, এই সমস্ত কিছুর মধ্যেও, আমাদের মুখ্যমন্ত্রী এবং আমাদের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এইসব মানুষের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছেন, আমাদের লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সাহস এবং প্রত্যয় জুগিয়েছেন।” কলকাতা হাইকোর্টের রায় উল্লেখ করে তিনি আরো লিখেছেন কলকাতা হাইকোর্ট ইতিমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছে যে সোনালী এবং অন্যান্যদের চার সপ্তাহের মধ্যে ফিরিয়ে আনতে হবে। এখন, প্রশ্ন থেকে যায় — বাংলা বিরোধী কেন্দ্রীয় সরকার সোনালী এবং তার সঙ্গীদের কখন দেশে ফিরিয়ে আনবে?

প্রতিবেদক

কিবরিয়া আনসারি

Kibria obtained a master's degree in journalism from Aliah University. He has been in journalism since 2018, gaining work experience in multiple organizations. Focused and sincere about his work, Kibria is currently employed at the desk of Purber Kalom.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

বীরভূমের অন্তঃসত্ত্বা সোনালি খাতুনকে দেশে ফেরানোর নির্দেশ দিল বাংলাদেশ

আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২৫, শুক্রবার

পুবের কলম প্রতিবেদক: বাংলাদেশের জেলে বন্দি পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের অন্তঃসত্ত্বা সোনালি খাতুনকে দেশে ফেরানোর জন্য ভারতীয় হাইকমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত নির্দেশের একটি প্রতিলিপি প্রকাশ্যে এসেছে, যা সোনালি খাতুন এবং তাঁর সহবন্দিদের জন্য এক বড় স্বস্তির খবর। জানা গিয়েছে, গত জুনে দিল্লির বাসিন্দা সোনালি খাতুন, সুইটি বিবি-সহ মোট ছ’জনকে অসম সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ‘পুশ ব্যাক’ করার অভিযোগ উঠেছিল বিএসএফের বিরুদ্ধে। বর্তমানে তাঁরা বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সংশোধনাগারে ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে বন্দি আছেন।

নিম্ন আদালতে জামিন জটিলতা অব্যাহত যদিও ঢাকা হাই কোর্টের এই নির্দেশের পরেও নিম্ন আদালতে সোনালি বিবি-সহ মোট ছ’জনের জামিন এখনও মঞ্জুর হয়নি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, গত ২৯ সেপ্টেম্বর ওই জেলার মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের (সিজেএম) আদালতে তাঁদের জামিনের শেষ শুনানি হয়েছিল এবং মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে ২৩ অক্টোবর। পুজোর ছুটির কারণে শুনানি প্রক্রিয়ায় বিরতি ছিল। নথিপত্রগত কিছু জটিলতার কারণে জামিনের প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে বলে জানা গেছে।

আরও পড়ুন: বন দফতরের আপত্তিতে বসন্ত উৎসব নিষিদ্ধ বোলপুরের সোনাঝুরিতে

প্রসঙ্গত, এর আগে, সোনালি-সুইটিদের পরিবারের করা মামলার প্রেক্ষিতে গত ২৬ সেপ্টেম্বর কলকাতা হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল যে, ওই ছ’জনকে চার সপ্তাহের মধ্যে ভারতে ফিরিয়ে আনতে হবে। একইসঙ্গে, বাংলাদেশি সন্দেহে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে থাকা দিল্লি পুলিশের ওই ছ’জনকে আটক করা ও বিতাড়নের সিদ্ধান্তও বাতিল করে দেয় কলকাতা হাই কোর্ট। তবে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ মেনে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এখনও কোনও প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে কি না, তা স্পষ্ট নয়।

আরও পড়ুন: বীরভূমের হজ যাত্রীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ শিবির অনুষ্ঠিত হল সিউড়িতে

আবার, বাংলাদেশের আদালতে জামিন হয়ে গেলেও ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় তাঁরা কোথায় থাকবেন, তা নিয়ে সংশয় ছিল। এই পরিস্থিতিতেই বাংলাদেশের হাই কোর্টের সাম্প্রতিক নির্দেশ তাদের স্বস্তি দিল। রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ তথা পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলামের প্রতিনিধি মফিজুল শেখ এখনও তাঁদের সহায়তার জন্য বাংলাদেশে রয়েছেন। সামিরুল ইসলাম নিজেই ‘এক্স’ (সাবেক ট্যুইটার) পোস্টে বাংলাদেশের আদালতের এই নির্দেশের কথা জানিয়েছেন। অন্যদিকে, বিদেশ মন্ত্রকের তরফে এখনও এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।

আরও পড়ুন: বীরভূমের আরও একটি ত্রিশঙ্কু গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করল তৃণমূল কংগ্রেস

সামিরুল ইসলাম টুইটারে পোস্ট করে লিখেছেন, “আমাদের নিজস্ব দেশ যাদেরকে বাংলাদেশী হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য এত চেষ্টা করেছিল, তারাই এখন ভারতীয় বলে প্রমাণিত হয়েছে – আমাদের দ্বারা নয়, বাংলাদেশ দ্বারা। একটি যুগান্তকারী রায়ে, বাংলাদেশের একটি আদালত কেবল তাদের ভারতীয় নাগরিক ঘোষণা করেনি, এমনকি তাদের আধার কার্ড নম্বর এবং আবাসিক ঠিকানাও প্রমাণ হিসাবে উল্লেখ করেছে। আদালতের আদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে পাঠানো হয়েছে, যেখানে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে তাদের সকলকে – বীরভূমের গর্ভবতী মহিলা সোনালী খাতুন সহ – নিরাপদে ভারতে ফেরত পাঠানো হবে। এটি আবারও প্রকাশ করে যে বাংলা-বিরোধী বিজেপি কীভাবে দরিদ্র বাংলাভাষী মানুষকে নিষ্ঠুরভাবে লক্ষ্যবস্তু করে, তাদের বাংলাদেশী হিসেবে চিহ্নিত করে এবং তাদের ভাষা ছাড়া অন্য কোনও কারণে তাদের নির্বাসিত করে। আমরা এখনও মনে করি কিভাবে বাংলায় বিজেপির কয়েকজন এজেন্ট তাদের রোহিঙ্গা হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করেছিল।

সেই আক্রমণগুলি এমনকি আমাকে বা আমার পরিবারকেও রেহাই দেয়নি। ” তৃণমূল সাংসদ সামিরুল ইসলাম টুইটারে আরো লিখেছেন,” তবুও, এই সমস্ত কিছুর মধ্যেও, আমাদের মুখ্যমন্ত্রী এবং আমাদের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এইসব মানুষের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছেন, আমাদের লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সাহস এবং প্রত্যয় জুগিয়েছেন।” কলকাতা হাইকোর্টের রায় উল্লেখ করে তিনি আরো লিখেছেন কলকাতা হাইকোর্ট ইতিমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছে যে সোনালী এবং অন্যান্যদের চার সপ্তাহের মধ্যে ফিরিয়ে আনতে হবে। এখন, প্রশ্ন থেকে যায় — বাংলা বিরোধী কেন্দ্রীয় সরকার সোনালী এবং তার সঙ্গীদের কখন দেশে ফিরিয়ে আনবে?