২০ অক্টোবর ২০২৫, সোমবার, ২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
'সোনা কিছুই উৎপাদন করে না, কিছু আয়ও করে না'

বিনিয়োগকারীদের সর্তক করলেন ভ্যালু রিসার্চের সিইও

কিবরিয়া আনসারি
  • আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২৫, রবিবার
  • / 116

পুবের কলম, নয়াদিল্লি: গত এক বছরে বিপুল বৃদ্ধি হয়েছে সোনা ও রুপোর দামে। কিন্তু দুই মূল্যবান ধাতুর চড়া দাম সত্ত্বেও ধনতেরসে বিভিন্ন স্বর্ণবিপণিতে উপচে পড়ছে ভিড়। একাধিক গয়নার দোকানে সোনা ও রুপোর জিনিস কিনতে রীতিমতো অপেক্ষা করতে হয়েছে উৎসাহীদের। ক্যাটের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ধনতেরস উপলক্ষে ১ লক্ষ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে গোটা দেশে। এই দীপাবলির মরসুমে সোনার দাম রেকর্ড মাত্রায় পৌঁছানো নিয়ে ভ্যালু রিসার্চের সিইও ধীরেন্দ্র কুমার বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানালেন। তিনি বলেছেন, যে মূল্যবান ধাতুটি ‘কিছুই উত্পাদন করে না, কিছুই উপার্জন করে না’। বিনিয়োগকারীদের তাদের পোর্টফোলিওতে 10 শতাংশের বেশি সোনা না রাখার পরামর্শ দিয়েছেন ভ্যালু রিসার্চের সিইও। এক পডকাস্টে অংশে নিয়ে ধীরেন্দ্র কুমার জানান, ২০২২ সালের গোড়ার দিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে অ-উৎপাদনশীল সম্পদ হিসাবে সোনা সম্পর্কে তাঁর দীর্ঘদিনের দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে। তাঁর কথায়, “হ্যাঁ, কিছু পরিবর্তন হয়েছে। আমার মূল বিশ্বাসে নয়। ওয়ারেন বাফেট যা বলেছিলেন তা আমি সর্বদা বিশ্বাস করি, স্বর্ণ কিছুই উৎপাদন করে না, কিছু উপার্জনও করে না। তারপরও মানুষ এই প্রত্যাশার প্রশংসা করে যে আরও বেশি লোক এটি অর্জন করতে চায়।”

ভ্যালু রিসার্চের সিইও ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, “বিশ্বজুড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলি, বিশেষ করে চিন, ভারত, তুরস্ক তারা আবেগের জন্য নয়, তারা স্বর্ণ পছন্দ করার জন্য নয়, বরং নিজেদের সুরক্ষিত করার জন্য একটি স্প্রে অর্জন করেছে। নিরাপত্তার জন্য তারা এটা করছে। রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদ জব্দ করাই ছিল সবচেয়ে বড় ট্রিগার। মানুষ নিজেদেরকে ঝুঁকিমুক্ত করতে চায়। এটি ডি-ডলারারাইজেশন এবং চাহিদার মাত্রা অস্বাভাবিক।” কুমারের বক্তব্য, “এমন নয় যে গৃহবধূরা বাজারে গিয়ে গয়না কিনছেন। তারপরও ব্যাপক হারে সোনা বিকোচ্ছো, এটি সর্বদা ছিল। এটা সবসময়ই থাকবে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলি যা করছে তার তুলনায় এর পরিমাণ কিছুই নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলির এই আর্থিক অবস্থান এই উত্থানের দিকে পরিচালিত করেছে। কিন্তু এমন কিছু যা মুদ্রা হিসাবে এতটাই মূলধারায় পরিণত হচ্ছে এবং অনেক ব্যক্তির এটি কিনে রেখেছেন। আমাকে ভাবতে বাধ্য করছে যে হ্যাঁ, এটি এমন কিছু যা নিজেকে ঝুঁকিমুক্ত করার জন্য থাকা উচিত। তবে সোনার মূল চরিত্র পরিবর্তন হয় না।” তবে এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের কেনার জন্য সোনা কেনার সঠিক সময় কিনা জানতে চাইলে কুমার বলেন, এখন একটু সংযম থাকতে হবে। তাঁর পরামর্শ, “আমি মনে করি যে কারও কাছে কিছু হলেও সোনা থাকা উচিত। তবে নিশ্চিত করতে হবে যে তার কাছে এটি কিছু রয়েছে। এটা খুব বেশি নয়। মাথায় রাখতে হবে যাতে ১০ শতাংশের বেশি না নয়। সাধারণ ভাবে ৫ শতাংশ বেশি না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।” এদিকে তিনি স্বীকার করেছেন, যে সোনা সম্পর্কে তার অতীত সংশয় সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। কুমারের কথায়, “আমি মাঝে মাঝে আমাদের কিছু ব্যবহারকারীর কাছ থেকে রাগান্বিত মেইল পাই। তারা ‘আপনার কারণে, আমরা সোনায় বিনিয়োগ করিনি এবং স্বর্ণ এত প্রশংসা করেছে। এর জন্য আমি ক্ষমা চাইছি, তবে আমি যাইহোক জ্যোতিষশাস্ত্রের ব্যবসায় নেই। আমি কেবল তথ্যের দিকে তাকিয়ে আছি এবং এই সত্যটি পরিবর্তিত হয়েছে এবং এটি শৈলীতে পরিবর্তনের দিকে পরিচালিত করেছে।” ভ্যালু রিসার্চের সিইও তাঁর দীর্ঘমেয়াদী অবস্থানের পুনরাবৃত্তি করে যোগ করেছেন, “ইক্যুইটি মূল ভিত্তি হওয়া উচিত। স্থায়ী আয় মূল ভিত্তি হওয়া উচিত এবং বিনিয়োগের আকারে কিছুটা সোনা থাকা উচিত। যাতে আপনি এটি বিনিয়োগ করতে পারেন এবং যখন আপনার প্রয়োজন হয় বা এটি পুনরায় ভারসাম্য বজায় রাখতে পারেন।”

প্রসঙ্গত, ধনতেরাসে প্রতি ১০ গ্রাম সোনার দাম ছিল প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। প্রতি কেজি রুপোর দাম হয়েছিল ১ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা। এই বিপুল দামই কেনাকাটির ভ্যালুয়েশন বাড়িয়ে দিয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে দামের কারণে এ বছরে রুপোর বিক্রি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। সোনা যাঁদের নাগালের বাইরে তাঁরা রুপোর জন্য ঝাঁপিয়েছেন। এর জেরে রুপোর জিনিসের বিক্রি গত বছরের তুলনায় বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। সোনা ও রুপোর চড়া দামের জেরেই এই লেনদেনের অঙ্ক এতটা বেড়েছে। এ বছর যে অঙ্কের সোনা ও রুপোর জিনিস বিক্রি হয়েছে, তা গত বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি।

প্রতিবেদক

কিবরিয়া আনসারি

Kibria obtained a master's degree in journalism from Aliah University. He has been in journalism since 2018, gaining work experience in multiple organizations. Focused and sincere about his work, Kibria is currently employed at the desk of Purber Kalom.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

'সোনা কিছুই উৎপাদন করে না, কিছু আয়ও করে না'

বিনিয়োগকারীদের সর্তক করলেন ভ্যালু রিসার্চের সিইও

আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২৫, রবিবার

পুবের কলম, নয়াদিল্লি: গত এক বছরে বিপুল বৃদ্ধি হয়েছে সোনা ও রুপোর দামে। কিন্তু দুই মূল্যবান ধাতুর চড়া দাম সত্ত্বেও ধনতেরসে বিভিন্ন স্বর্ণবিপণিতে উপচে পড়ছে ভিড়। একাধিক গয়নার দোকানে সোনা ও রুপোর জিনিস কিনতে রীতিমতো অপেক্ষা করতে হয়েছে উৎসাহীদের। ক্যাটের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ধনতেরস উপলক্ষে ১ লক্ষ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে গোটা দেশে। এই দীপাবলির মরসুমে সোনার দাম রেকর্ড মাত্রায় পৌঁছানো নিয়ে ভ্যালু রিসার্চের সিইও ধীরেন্দ্র কুমার বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানালেন। তিনি বলেছেন, যে মূল্যবান ধাতুটি ‘কিছুই উত্পাদন করে না, কিছুই উপার্জন করে না’। বিনিয়োগকারীদের তাদের পোর্টফোলিওতে 10 শতাংশের বেশি সোনা না রাখার পরামর্শ দিয়েছেন ভ্যালু রিসার্চের সিইও। এক পডকাস্টে অংশে নিয়ে ধীরেন্দ্র কুমার জানান, ২০২২ সালের গোড়ার দিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে অ-উৎপাদনশীল সম্পদ হিসাবে সোনা সম্পর্কে তাঁর দীর্ঘদিনের দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে। তাঁর কথায়, “হ্যাঁ, কিছু পরিবর্তন হয়েছে। আমার মূল বিশ্বাসে নয়। ওয়ারেন বাফেট যা বলেছিলেন তা আমি সর্বদা বিশ্বাস করি, স্বর্ণ কিছুই উৎপাদন করে না, কিছু উপার্জনও করে না। তারপরও মানুষ এই প্রত্যাশার প্রশংসা করে যে আরও বেশি লোক এটি অর্জন করতে চায়।”

ভ্যালু রিসার্চের সিইও ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, “বিশ্বজুড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলি, বিশেষ করে চিন, ভারত, তুরস্ক তারা আবেগের জন্য নয়, তারা স্বর্ণ পছন্দ করার জন্য নয়, বরং নিজেদের সুরক্ষিত করার জন্য একটি স্প্রে অর্জন করেছে। নিরাপত্তার জন্য তারা এটা করছে। রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদ জব্দ করাই ছিল সবচেয়ে বড় ট্রিগার। মানুষ নিজেদেরকে ঝুঁকিমুক্ত করতে চায়। এটি ডি-ডলারারাইজেশন এবং চাহিদার মাত্রা অস্বাভাবিক।” কুমারের বক্তব্য, “এমন নয় যে গৃহবধূরা বাজারে গিয়ে গয়না কিনছেন। তারপরও ব্যাপক হারে সোনা বিকোচ্ছো, এটি সর্বদা ছিল। এটা সবসময়ই থাকবে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলি যা করছে তার তুলনায় এর পরিমাণ কিছুই নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলির এই আর্থিক অবস্থান এই উত্থানের দিকে পরিচালিত করেছে। কিন্তু এমন কিছু যা মুদ্রা হিসাবে এতটাই মূলধারায় পরিণত হচ্ছে এবং অনেক ব্যক্তির এটি কিনে রেখেছেন। আমাকে ভাবতে বাধ্য করছে যে হ্যাঁ, এটি এমন কিছু যা নিজেকে ঝুঁকিমুক্ত করার জন্য থাকা উচিত। তবে সোনার মূল চরিত্র পরিবর্তন হয় না।” তবে এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের কেনার জন্য সোনা কেনার সঠিক সময় কিনা জানতে চাইলে কুমার বলেন, এখন একটু সংযম থাকতে হবে। তাঁর পরামর্শ, “আমি মনে করি যে কারও কাছে কিছু হলেও সোনা থাকা উচিত। তবে নিশ্চিত করতে হবে যে তার কাছে এটি কিছু রয়েছে। এটা খুব বেশি নয়। মাথায় রাখতে হবে যাতে ১০ শতাংশের বেশি না নয়। সাধারণ ভাবে ৫ শতাংশ বেশি না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।” এদিকে তিনি স্বীকার করেছেন, যে সোনা সম্পর্কে তার অতীত সংশয় সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। কুমারের কথায়, “আমি মাঝে মাঝে আমাদের কিছু ব্যবহারকারীর কাছ থেকে রাগান্বিত মেইল পাই। তারা ‘আপনার কারণে, আমরা সোনায় বিনিয়োগ করিনি এবং স্বর্ণ এত প্রশংসা করেছে। এর জন্য আমি ক্ষমা চাইছি, তবে আমি যাইহোক জ্যোতিষশাস্ত্রের ব্যবসায় নেই। আমি কেবল তথ্যের দিকে তাকিয়ে আছি এবং এই সত্যটি পরিবর্তিত হয়েছে এবং এটি শৈলীতে পরিবর্তনের দিকে পরিচালিত করেছে।” ভ্যালু রিসার্চের সিইও তাঁর দীর্ঘমেয়াদী অবস্থানের পুনরাবৃত্তি করে যোগ করেছেন, “ইক্যুইটি মূল ভিত্তি হওয়া উচিত। স্থায়ী আয় মূল ভিত্তি হওয়া উচিত এবং বিনিয়োগের আকারে কিছুটা সোনা থাকা উচিত। যাতে আপনি এটি বিনিয়োগ করতে পারেন এবং যখন আপনার প্রয়োজন হয় বা এটি পুনরায় ভারসাম্য বজায় রাখতে পারেন।”

প্রসঙ্গত, ধনতেরাসে প্রতি ১০ গ্রাম সোনার দাম ছিল প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। প্রতি কেজি রুপোর দাম হয়েছিল ১ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা। এই বিপুল দামই কেনাকাটির ভ্যালুয়েশন বাড়িয়ে দিয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে দামের কারণে এ বছরে রুপোর বিক্রি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। সোনা যাঁদের নাগালের বাইরে তাঁরা রুপোর জন্য ঝাঁপিয়েছেন। এর জেরে রুপোর জিনিসের বিক্রি গত বছরের তুলনায় বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। সোনা ও রুপোর চড়া দামের জেরেই এই লেনদেনের অঙ্ক এতটা বেড়েছে। এ বছর যে অঙ্কের সোনা ও রুপোর জিনিস বিক্রি হয়েছে, তা গত বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি।