ছত্তিশগড়ে নাজাকাতকে রাজকীয় সংবর্ধনা স্থানীয়দের
পর্যটকদের জীবন বাঁচিয়ে ‘হিরো’ কাশ্মীরি শাল বিক্রেতা
- আপডেট : ৩১ অক্টোবর ২০২৫, শুক্রবার
- / 184
পুবের কলম, রায়পুর: শীত আসলেই শাল, স্টোল এবং জ্যাকেট সহ শীতকালীন পোশাক নিয়ে ছত্তিশগড়ে চলে যান দক্ষিণ কাশ্মীরের নাজাকত আলি। এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ছত্তিশগড়ের চিরমিরি শহর শীতকালীন পোশাক বিক্রি করেন তিনি। প্রতি বছরের মত এবছরও ব্যবসা বেশ ভালোই চলছিল। তবে এবার তিনি কেবল একজন শাল বিক্রেতাই ছিলেন না, স্থানীয়দের কাছে নায়ক হয়ে উঠেছিলেন নাজাকত। আতশবাজি ফাঁটিয়ে মালা পরিয়ে তাঁকে স্বাগত জানান স্থানীয়রা। তবে এমন কর্মকাণ্ডে চমকে যান কাশ্মীরি শাল বিক্রেতা।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছি সন্ত্রাসবাদীরা। সেই হামলায় ২৫ জন পর্যটক এবং এক স্থানীয় নিহত হয়েছিলেন। গোটা কাশ্মীরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। সূত্রের খবর, পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলা চলাকালীন বেশকিছু পর্যটকের কাছে ত্রাতার ভূমিকা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন নাজাকত। নিজের জীবন বাজি রেখে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে পর্যটকদের জীবন বাঁচিয়ে ছিলেন তিনি। হামলার পরিস্থিতিতে চারটি পরিবারের ১১টি শিশুকে উদ্ধার করেছিল তিনি। শিশুদের পিঠে করে নিয়ে দীর্ঘ পাহাড় বেয়ে বেয়ে তাদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কাশ্মীরি শাল বিক্রেতা যে শিশুদের জীবন বাঁচিয়েছিলেন তার মধ্যে ছিলেন এক বিজেপি নেতার সন্তান। জানা গিয়েছে, ছত্তিশগড়ের স্থানীয় বিজেপি নেতা অমিত আগরওয়ালের সন্তানেরও জীবন বাঁচিয়েছিলেন তিনি। এদিন চিরমরি শহরে তাঁকে দেখতে পেয়ে রীতিমত রাজকীয় ভাবে সংবর্ধনা জানান স্থানীয়রা। বিজেপি নেতা অমিত আগরওয়ালের নেতৃত্বে নাজাকত আলিকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। বিজেপি নেতা বলেন, তিনি নিজের জীবনের পরোয়া না করে শিশুদের জীবন বাঁচিয়েছেন। তাঁকে ধন্যবাদ বা অভ্যর্থনা জানিয়েও তাঁর সাহসের মূল্য দিতে পারব না। তবে আমরা খুশি হয়েই অভ্যর্থনা জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছি। আগরওয়ালের কথায়, সবাই যখন নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য ছোটাছুটি করছিল, তখন নাজাকত আলী সাহসের সঙ্গে জীবন বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তিনি পর্যটকদের ১১টি শিশুকে কাঁধে করে পাহাড় পাড়িয়ে দিয়ে তাদের সুরক্ষিত জায়গায় পৌঁছে দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, হামলার পরপরই ভারতীয় সেনাবাহিনীকেও সহায়তা করেছিলেন নাজাকত। সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পর্যটকদের উদ্ধার করে একটি হোটেলে নিয়ে যান তিনি।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে স্থানীয় আরেক ব্যক্তি বলেন, যেই সময় পহেলগাঁওয়ের বৈসরণ উপত্যকা সন্ত্রাসীদের হামলা চলছিল। পাশেই কিছুটা দূরত্বে উপত্যকার সৌন্দর্য উপভোগ করছিলেন চিরমিরির বাসিন্দা কুলদীপ স্থফক, শিবাংশ জৈন, হ্যাপি বাধাওয়ান এবং অরবিন্দ আগরওয়াল। তারা সন্ত্রাসীদের বন্দুকের শব্দ শুনতে পেয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। পর্যটকরা আতঙ্কে এদিক ওদিক দৌড়াদৌড়ি শুরু করেছিলেন। একপর্যায়ে গভীর পাহাড়ে তারা আটকে পড়েছিলেন। সেই সময় নাজাকাত আলি তাদের উদ্ধার করে জীবন বাঁচিয়েছিলেন।
এদিকে স্থানীয়দের অভ্যর্থনা মুগ্ধ হয়েছেন নাজাকাত আলি। এবিষয়ে তিনি বলেন, “লাকি ভাইয়া, রাজু ভাইয়া, হ্যাপি ভাইয়া, টিটু ভাইয়াকে আরও একবার দেখতে পেরে আমি খুব খুশি। আমি তাদের সাথে পুনরায় মিলিত হতে পেরে খুব আনন্দিত। আমি তাদের উদ্ধার করার পর তাদের নিয়ে একসঙ্গে ক্রিকেট খেলেছি। সেই স্মৃতিগুলো আবার আজ মনে পড়ে গেল।”



















