২০ অক্টোবর ২০২৫, সোমবার, ২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

SSKM-এর উডবার্ন ওয়ার্ডের আইসোলেশন বিভাগে ভর্তি কিংবদন্তী শিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ২৭ জানুয়ারী ২০২২, বৃহস্পতিবার
  • / 54

পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ ফুসফুসের সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হল ‘গীতশ্রী’ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে। এই মুহূর্তে চিকিৎসকরা পরীক্ষা করছেন এই কিংবদন্তী সঙ্গীত শিল্পীকে। তাঁকে অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। শিল্পীর চিকিৎসায় বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। সেই টিমে রয়েছেন ফুসফুস বিশেষজ্ঞ, কার্ডিওলজিস্ট, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। এছাড়াও অন্যান্য চিকিৎসকদের তৎপর থাকতে বলা হয়েছে।

সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মেয়ের কাছ থেকে শিল্পীর শারীরিক অসুস্থতার খবর পেয়েই তড়িঘড়ি শিল্পীকে SSKM হাসপাতালে ভর্তি করার উদ্যোগ নেন তিনি। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে তাঁকে SSKM-এর উডবার্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। শিল্পীকে আইসোলেশন বিভাগে রাখা হয়েছে। তার আরটিপিসিআর টেস্ট হয়েছে। সেই রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছেন চিকিৎসকরা। তার পর সেই অনুযায়ী  চিকিৎসার  পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এছাড়াও আরও একাধিক টেস্ট দেওয়া হয়েছে।

গত ২৩ জানুয়ারি, বাথরুমে পড়ে যান তিনি।  শারীরিক  ব্যথা বেদনাও শুরু হয়। তাঁর বুকে সর্দি রয়েছে। নিউমোনিয়া রয়েছে তাঁর।

সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের জামাই জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাত থেকেই শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়  শিল্পীর। রাত থেকেই জ্বর রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে ফুসফুসের সংক্রমণ। শ্বাসকষ্ট রয়েছে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলেন তিনি। চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনেই হাসপাতালে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বর্ষীয়ান শিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ১৯৩১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে প্রশিক্ষিত হলেও তবুও তার বেশিরভাগ কাজ বাংলা আধুনিক গানে। ১৯৫০ সালে তারানা চলচ্চিত্রে একটি গান দিয়ে মুম্বইতে তার হিন্দি গান গাওয়া শুরু হয়। তিনি ১৭টি হিন্দি চলচ্চিত্রে নেপথ্য গায়িকা হিসেবে গান গেয়েছিলেন। ব্যক্তিগত কারণে ১৯৫২ সালে তিনি তার কলকাতা শহরের বাড়িতে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন।

১৯৭১ সালে ‘জয় জয়ন্তী’ এবং ‘নিশিপদ্ম’ ছবিতে গান গেয়ে শ্রেষ্ঠ গায়িকা হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। গান দুটি হল – ‘আমাদের ছুটি ছুটি’ এবং ‘ওরে সকল সোনা মলিন হল’। এছাড়াও ২০১১ সালে ভারত সরকার তাঁকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ উপাধিতে সম্মানিত করে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে, যুদ্ধের হাত থেকে বাঁচতে কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গে আগত লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তুদের জন্য তিনি ভারতীয় বাঙালি শিল্পীদের সঙ্গে গণ আন্দোলনে যোগ দেন এবং তাদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেন তিনি। বাংলাদেশের জন্য বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করেন।

তিনি বাংলাদেশী সংগীতশিল্পী সমর দাস যিনি বাংলাদেশে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন তার সাহায্যার্থে বিভিন্ন দেশাত্মবোধক গান রেকর্ড করেন।

কারাগারে বন্দী নতুন বাংলাদেশের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির উপলক্ষে তার গাওয়া ‘বঙ্গবন্ধু তুমি ফিরে এলে’ গানটি মুক্তি পায়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর, প্রথম একুশে ফেব্রুয়ারির উদ্যাপন উপলক্ষে ঢাকায় পল্টন ময়দানের একটি উন্মুক্ত কনসার্টে অনুষ্ঠান করা তিনি অন্যতম প্রথম বিদেশি শিল্পী।

২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত হিসেবে তার নাম ঘোষণা করা হয়। তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। সূত্রের খবর, এই বিষয় সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ফোনে একাধিক মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। তার পর থেকেই শারীরিক অসুস্থতা আরও বাড়তে থাকে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

SSKM-এর উডবার্ন ওয়ার্ডের আইসোলেশন বিভাগে ভর্তি কিংবদন্তী শিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়

আপডেট : ২৭ জানুয়ারী ২০২২, বৃহস্পতিবার

পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ ফুসফুসের সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হল ‘গীতশ্রী’ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে। এই মুহূর্তে চিকিৎসকরা পরীক্ষা করছেন এই কিংবদন্তী সঙ্গীত শিল্পীকে। তাঁকে অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। শিল্পীর চিকিৎসায় বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। সেই টিমে রয়েছেন ফুসফুস বিশেষজ্ঞ, কার্ডিওলজিস্ট, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। এছাড়াও অন্যান্য চিকিৎসকদের তৎপর থাকতে বলা হয়েছে।

সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মেয়ের কাছ থেকে শিল্পীর শারীরিক অসুস্থতার খবর পেয়েই তড়িঘড়ি শিল্পীকে SSKM হাসপাতালে ভর্তি করার উদ্যোগ নেন তিনি। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে তাঁকে SSKM-এর উডবার্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। শিল্পীকে আইসোলেশন বিভাগে রাখা হয়েছে। তার আরটিপিসিআর টেস্ট হয়েছে। সেই রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছেন চিকিৎসকরা। তার পর সেই অনুযায়ী  চিকিৎসার  পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এছাড়াও আরও একাধিক টেস্ট দেওয়া হয়েছে।

গত ২৩ জানুয়ারি, বাথরুমে পড়ে যান তিনি।  শারীরিক  ব্যথা বেদনাও শুরু হয়। তাঁর বুকে সর্দি রয়েছে। নিউমোনিয়া রয়েছে তাঁর।

সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের জামাই জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাত থেকেই শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়  শিল্পীর। রাত থেকেই জ্বর রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে ফুসফুসের সংক্রমণ। শ্বাসকষ্ট রয়েছে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলেন তিনি। চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনেই হাসপাতালে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বর্ষীয়ান শিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ১৯৩১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে প্রশিক্ষিত হলেও তবুও তার বেশিরভাগ কাজ বাংলা আধুনিক গানে। ১৯৫০ সালে তারানা চলচ্চিত্রে একটি গান দিয়ে মুম্বইতে তার হিন্দি গান গাওয়া শুরু হয়। তিনি ১৭টি হিন্দি চলচ্চিত্রে নেপথ্য গায়িকা হিসেবে গান গেয়েছিলেন। ব্যক্তিগত কারণে ১৯৫২ সালে তিনি তার কলকাতা শহরের বাড়িতে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন।

১৯৭১ সালে ‘জয় জয়ন্তী’ এবং ‘নিশিপদ্ম’ ছবিতে গান গেয়ে শ্রেষ্ঠ গায়িকা হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। গান দুটি হল – ‘আমাদের ছুটি ছুটি’ এবং ‘ওরে সকল সোনা মলিন হল’। এছাড়াও ২০১১ সালে ভারত সরকার তাঁকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ উপাধিতে সম্মানিত করে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে, যুদ্ধের হাত থেকে বাঁচতে কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গে আগত লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তুদের জন্য তিনি ভারতীয় বাঙালি শিল্পীদের সঙ্গে গণ আন্দোলনে যোগ দেন এবং তাদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেন তিনি। বাংলাদেশের জন্য বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করেন।

তিনি বাংলাদেশী সংগীতশিল্পী সমর দাস যিনি বাংলাদেশে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন তার সাহায্যার্থে বিভিন্ন দেশাত্মবোধক গান রেকর্ড করেন।

কারাগারে বন্দী নতুন বাংলাদেশের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির উপলক্ষে তার গাওয়া ‘বঙ্গবন্ধু তুমি ফিরে এলে’ গানটি মুক্তি পায়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর, প্রথম একুশে ফেব্রুয়ারির উদ্যাপন উপলক্ষে ঢাকায় পল্টন ময়দানের একটি উন্মুক্ত কনসার্টে অনুষ্ঠান করা তিনি অন্যতম প্রথম বিদেশি শিল্পী।

২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত হিসেবে তার নাম ঘোষণা করা হয়। তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। সূত্রের খবর, এই বিষয় সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ফোনে একাধিক মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। তার পর থেকেই শারীরিক অসুস্থতা আরও বাড়তে থাকে।